ব্যবসায়ীদেরই দুষছে প্রশাসন
ভাইফোঁটার বাজারে মিলছে না আলু, সঙ্কট জেলা জুড়ে
ত কয়েক দিন ধরে আলুর দামকে ঘিরে প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাপানউতোরে একটা সঙ্কট তৈরি হচ্ছিলই। আলুর দাম মাথায় ভাঁজ ফেলছিল আম জনতার। এ বার সেই মহার্ঘ্য আলুরও দেখা মিলছে না। সোমবার বীরভূমে আলু বিক্রির হাল কিন্তু সেই চিত্রই তুলে ধরছে। সরকার নির্ধারিত দরে আলু বিক্রি করতে প্রশাসনের কর্তারা যখন বাজারের বাজারে পরিদর্শন করছেন, রামপুরহাট শহরের বাজারে কার্যত আলু বিক্রিই বন্ধ হয়ে গেল। যার জেরে ভাইফোঁটার অগ্নিমূল্য বাজারে চরম নাকালের মধ্যে পড়লেন ক্রেতারা। মাত্র এক কিলো আলু পেতেই হন্যে হয়ে সারা বাজার ঘুরলেন অনেকেই। যদিও অধিকাংশই বাড়ি ফিরলেন বিফল মনোরথে। আর শুধু রামপুরহাটই নয়, এই পরিস্থিতি জেলার প্রায় সর্বত্রই।
এ দিন রামপুরহাট বাজারে ঘুরে দেখা গেল আলুর পাইকারি বিক্রেতাদের অধিকাংশেরই আড়তে আলু নেই। যে ক’জনের কাছে আলু মজুত আছে, তাঁদের কাছে খারাপ মাল থাকার জন্য খুচরো ব্যবসায়ীরাও সেই আলু তুলতে চায়ছেন না। রামপুরহাট বাজারের আলুর পাইকারি ব্যবসায়ী দিলীপ জায়সবাল বলছেন, “আমরা দিন পাঁচেক আগে কুইন্ট্যাল পিছু ১০২০ টাকা দরে ১০০ প্যাকেট আলু কিনে পাইকারি বাজারে ১০৪০ টাকা দরে আলু বিক্রি করেছি। কিন্তু আজ সকালে আলু সাঁইথিয়ার হিমঘর থেকে লোড না হওয়ার জন্য আমাদের কাছে আর আলু মজুত নেই। এর ফলে খুচরো ব্যবসায়ীরা আলু পাচ্ছেন না।”
এইটুকুই সম্বল। সোমবার দুবরাজপুরের একটি বাজারে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।
রামপুরহাট বাজারের খুচরো ব্যবসায়ীদের সাফ বক্তব্য, “রাজ্য সরকার প্রতি কেজি ১১ টাকা দরে আলুর জোগান দিক। সরকার নির্ধারিত ১৩ টাকা কেজি দরে ক্রেতাদের আলু বিক্রি করতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।” তাঁদের অভিযোগ, এই মুহূর্তে আলুর আমদানি নেই। বাজারে যে আলু আছে, তা ১১ টাকা কিলো দরে কিনলেও বিক্রি করতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কারণ, অধিকাংশই খারাপ হওয়ায় বাদ দিতে হচ্ছে। যার জেরে অবশিষ্ট আলু বাজারে ন্যূনতম ১৪ টাকা কিলো দরে বিক্রি না করলে তাঁদের কোনও লাভ থাকছে না। আবার উল্টো দিকে প্রশাসনের কর্তারা বাজারে বাজের পুলিশ নিয়ে এসে ১৩ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি করতে চাপ দিচ্ছেন। যার প্রতিবাদে অনেক খুচরো ব্যবসায়ীই আলু বিক্রি বন্ধ করে দিচ্ছেন।
এ দিন সকালে নলহাটি, মুরারই, দুবরাজপুর বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে চাহিদার তুলনায় আলুর জোগান কম থাকায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ী লুকিয়ে ৭০০ টাকা প্যাকেট (৫০ কেজি) আলু বিক্রি করছেন। নলহাটির আলু ব্যবসায়ী ইসমাইল শেখ বলেন, “স্থানীয় চামটিবাগানের আড়তদারদের কাছে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের আলু ব্যবসায়ীরা ১৩০০ টাকা প্যাকেট আলু কিনছেন। ওই দরে আমরা কিনতে গেলে বাজারে ১৫ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি করতে হবে।” দুবরাজপুরে আবার কেউ বলছেন শনিবার থেকেই আলু আসেনি। কেউ বলছেন আলু আসেনি রবিবার থেকে। বারটা যাই হোক, বাস্তব চিত্রটা হচ্ছে সোমবার সকালে দুবরাজপুরের গোটা পাঁচেক আলুর আড়তে এক বস্তাও আলু ছিল না। কারও কাছে যদিও বা কয়েক বস্তা আলু ছিল, সেগুলি বিক্রি হয়ে গিয়েছে আড়ত খোলার সঙ্গে সঙ্গেই। কোনও কোনও আলুর আড়ত আবার দিনভর বন্ধ। আলুর আড়তে এসে বহু পাইকারি ব্যবসায়ী ঘুরে যাওয়ার ওই খবর প্রচার হতেই খুচরো বাজার থেকেও আলু প্রায় মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সোমবার দুপুরে প্রায় প্রতিটি দোকানদার (তা তিনি খুচরো বা পইকারি বিক্রেতা, যাই হোন না কেন) খরিদ্দারদের ঘোরাতে থাকেন। যদিও বা কেউ কেউ স্টকে থাকা আলু বিক্রি করেছেন। দাম ১৬ টাকা কিলো।
এমন পরিস্থিতির কথা আগাম আঁচ করেই গত ২৯ অক্টোবর সিউড়িতে জেলাশাসকের সভাকক্ষে একটি জরুরি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে হাজির ছিলেন জেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, জেলা কৃষি অধিকর্তা, সহ অধিকর্তা, নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি কর্তৃপক্ষ, জেলা হিমঘর গুলির প্রতিনিধি-সহ একাধিক দফতরের কর্তাব্যক্তিরা। সেই মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি শাক সব্জি ও ফলের বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসনের দিক থেকে বিশেষ নজরদারি করার কথা বলা হয়। কিন্তু ক্রেতাদের অভিযোগ, নজরদারির পরে আগের মতোই দাম হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। এ দিকে সরকারি নির্ধারিত দামে আলু প্রভৃতি বিক্রি করতে নারাজ ব্যবসায়ীদের অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুবরাজপুরের এক আড়তদারদের বক্তব্য, “সরকার প্যাকেট প্রতি ৫৫০ টাকা নির্ধারিত করলেও হিমঘর থেকে আলু আনার সময় খরচ পড়ে যাচ্ছে বস্তা প্রতি ৬৫০ টাকা। এর পরে তা বইতে মুটে খরচ ধরে আলু প্রতি কিলো ১৩ টাকাতে কেনাই যাচ্ছে না। তাহলে সরকারি নির্ধারিত টাকায় আলু বিক্রি করব কী ভাবে? এ দিকে আবার বেশি দরে বিক্রি করলে পুলিশের ঝামেলা রয়েছে। তার থেকে আলু বিক্রি বন্ধ রাখাই শ্রেয়!” তবে খুচরো বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, লুকিয়ে কিছু আড়তদার ৮০০ টাকা প্যাকেট দরে আলু বিক্রি করছেন। আর সেই আলু কিনতে ক্রেতাকে আরও বেশি পয়সা গুনতে হচ্ছে।
এ দিকে ভাইফোঁটার আগের দিন জেলা জুড়ে আলুর আমদানি কমে যাওয়ার জন্য বীরভূম জেলা এগ্রিকালচার মার্কেটিং আধিকারিক মহম্মদ আকবর আলি আলু ব্যবসায়ীদেরই দায়ী করছেন। তিনি বলেন, “হিমঘর মালিকেরা আলু বের করে দিচ্ছেন না বা হিমঘর থেকে আলু পাওয়া যাচ্ছে না, এ ধরনের কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে এখনও পর্যন্ত আসেনি। তবে লিখিত আকারে আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।” তাঁর দাবি, “আলু ব্যবসায়ীরা লাভের কথা ভেবে মাল তুলছেন না। এর ফলে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি জানান, রাজ্যের অন্যত্র সরকার নিজে থেকে আলু বিক্রয়কেন্দ্র খুললেও বীরভূমে তা এখনও শুরু হয়নি। আগামী বৃহস্পতিবার আলুর বাজারদর নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারে আলুর জোগান সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে বসা হবে।

জ্যোতি আলু
দুবরাজপুর
বোলপুর
সাঁইথিয়া
ময়ূরেশ্বর
রামপুরহাট
১৬
১৬
১৩
১৬
১৬


পটল
দুবরাজপুর
বোলপুর
সাঁইথিয়া
ময়ূরেশ্বর
রামপুরহাট
৪০
৪৫
৪০
৪০
৫০


পেঁয়াজ
দুবরাজপুর
বোলপুর
সাঁইথিয়া
ময়ূরেশ্বর
রামপুরহাট
৫২
৫৮
৫৫
৫৫
৫০


বেগুন
দুবরাজপুর
বোলপুর
সাঁইথিয়া
ময়ূরেশ্বর
রামপুরহাট
৪০
৪০
৪০
২৫
৫০


টম্যাটো
দুবরাজপুর
বোলপুর
সাঁইথিয়া
ময়ূরেশ্বর
রামপুরহাট
৫০
৫২
৫০
৫০
৫০


কুমড়ো
দুবরাজপুর
বোলপুর
সাঁইথিয়া
ময়ূরেশ্বর
রামপুরহাট
১৬
২২
১৬
১৬
১৬

*সব অঙ্ক টাকায়, প্রতি কেজির হিসেবে # সোমবার জেলার বিভিন্ন বাজারের খুচরো দর।

(সহ প্রতিবেদন: দয়াল সেনগুপ্ত ও মহেন্দ্র জেনা)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.