চার দিকে আপেল, আঙুর আর বেদানার বাগিচা। একতলা খামারবাড়িটায় আছে একটা বিশাল সুদৃশ্য মিনারও। উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মিরানশাহে এই ধরনের সম্পত্তি সাধারণত থাকে পাক অভিজাত সম্প্রদায়ের। কিন্তু ১ লক্ষ ২০ হাজার ডলার দামের এই খামারবাড়িতেই মার্কিন ড্রোন হানায় নিহত হয়েছেন পাকিস্তান তালিবান নেতা হাকিমুল্লা মেহসুদ। বাড়িটির মাত্র এক কিলোমিটার দূরে পাক সেনার ঘাঁটি। হাকিমুল্লার ওই খামারবাড়ি তাই মনে পড়িয়ে দিচ্ছে অ্যাবটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের আস্তানাকে।
পাকিস্তান তালিবানের শীর্ষ নেতা হাকিমুল্লাকে অনেক দিন ধরেই খুঁজছিল আমেরিকা। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সে জন্যই ওয়াজিরিস্তানের উপজাতি-অধ্যুষিত এলাকায় স্থান বদলে বদলে থাকতেন মেহসুদ। মিরানশাহের ডান্ডে ডারপাখেলে ওই খামারবাড়িতে থাকতেন তাঁর দুই স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। মাঝে মাঝে সেখানে আসতেন ওই নেতা। গত শুক্রবার এসেছিলেন শেষ বারের মতো। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়েই তাঁর গাড়ির উপরে আছড়ে পড়ে ড্রোন বিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র।
অ্যাবটাবাদে যে প্রাসাদোপম বাড়িতে সপরিবার লুকিয়ে ছিলেন বিন লাদেন, তার নাম ওয়াজিরিস্তান হাভেলি। ৩৮ হাজার বর্গফুটের বাড়িটিতে সব্জি বাগান, গরু, খরগোশ, মুরগি পালনের ব্যবস্থা ছিল। ছিল কড়া নিরাপত্তাও। অ্যাবটাবাদের বিলাল টাউনে পাকিস্তান সামরিক অ্যাকাডেমির কাছেই ওই বাড়িতেই মার্কিন বিশেষ বাহিনীর হাতে নিহত হন ওসামা। ওই বাড়িতে তাঁর উপস্থিতি পাক সেনা-জঙ্গি যোগ নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলে দেয়।
একই প্রশ্ন উঠছে হাকিমুল্লার খামারবাড়ির অবস্থান নিয়েও। কারণ, তার কাছেই উত্তর ওয়াজিরিস্তানে পাক সেনার মূল ঘাঁটি। ওই বাড়িতে যাতায়াত ছিল এমন এক বিদেশি সাংবাদিক জানিয়েছেন, আগে ওই সম্পত্তির মালিক ছিলেন এক পাক অভিজাতই। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পরে ১ লক্ষ ২০ হাজার ডলার দামে বাড়িটি কিনে নেন হাকিমুল্লার সহযোগী লতিফ মেহসুদ। অনেকেরই দাবি, হাকিমুল্লার সঙ্গে সেনা ও আইএসআইয়ের যোগাযোগ ছিল। তাই সেনাঘাঁটির একেবারে কাছে ‘নিরাপদ’ স্থানে খামারবাড়ি বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তবে এ বারও পাকিস্তানি নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের লক্ষ্যবস্তুকে শেষ করে দিয়েছে আমেরিকা।
বস্তুত হাকিমুল্লাকে শেষ করায় ইতিমধ্যেই আমেরিকার কড়া সমালোচনা করেছেন পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী চৌধুরি নিসার আলি খান। পাক সরকারি সূত্রে খবর, তালিবানের সঙ্গে প্রস্তাবিত শান্তি প্রক্রিয়ায় হাকিমুল্লার উপরে অনেকটাই নির্ভর করছিল নওয়াজ শরিফের সরকার। নিসার বলেছেন, “শান্তি প্রক্রিয়া ভেস্তে দিতেই হাকিমুল্লাকে খুন করা হয়েছে।”
সরাসরি হাকিমুল্লার কথা না বললেও ড্রোন হামলা নিয়ে আজ মুখ খুলেছেন শরিফও। তাঁর মতে, আন্তর্জাতিক আইন ও পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের পরোয়া না করে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে আমেরিকা। শরিফের কথায়, “এক সময়ে বিদেশ থেকে আসা ফোনে ঠিক হত পাকিস্তানের বিদেশনীতি। সে দিন চলে গিয়েছে। এখন দেশে নির্বাচিত সরকার রয়েছে।” তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেনাকর্তাদের এক জমায়েতে এ কথা বলেছেন শরিফ। সেখানে হাজির ছিলেন সেনাপ্রধান পারভেজ আশফাক কিয়ানিও। পাকিস্তানের কয়েকটি শিবিরের মতে, এক সময়ে অনেক পাকিস্তানির কাছেও খলনায়কই ছিলেন হাকিমুল্লা। কিন্তু এখন তাঁকে প্রায় শহিদের মর্যাদা দিচ্ছে খোদ পাক সরকারই।
পাকিস্তানে ড্রোন হামলা নিয়ে আজ ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়িয়েছে চিন। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মতে, যে কোনও মূল্যে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা উচিত বলে মনে করে বেজিং। পাকিস্তানকেই সন্ত্রাস দমনের জন্য কৌশল স্থির করতে দেওয়া উচিত। ইসলামাবাদের সে কাজে সাহায্য করবে বেজিং। |