পাইকারি বাজারে আলু সরকারি দরে মিলছে না। তা হলে কী করে খুচরো বাজারে সরকার নির্ধারিত ১৪ টা দরে তারা আলু বিক্রি করবেন, এই অভিযোগ তুলে শিলিগুড়ির দু’টি বাজারে আলু বিক্রি বন্ধ করলেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার রথখোলা রবীন্দ্রনঘর বাজার এবং ও শিলিগুড়ি থানার উল্টোদিকে সবজি বাজারে আনাজ ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করেননি। তাতে বাজার করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক বাসিন্দা। বাধ্য হয়ে তাঁদের শিলিগুনি টাউন স্টেশন বাজার বা মহাবীরস্থান বাজারে বা অন্যত্র আলু কিনতে যেতে হয়েছে। যাঁরা অন্য বাজারে যেতে পারেননি তাদের আলু না কিনেই ওই দুই বাজার থেকে ফিরতে হয়েছে। |
বিক্রি বন্ধ। আলু ঢেকে দিচ্ছেন ব্যবসায়ী। শিলিগুড়ির সুভাষপল্লিতে। —নিজস্ব চিত্র। |
প্রশাসনের দাবি, এ দিন পাইকারি বাজারে আলুর দাম ১৪ টাকার নিচেই ছিল। যদিও এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা একমত নন। তবে ওই দুটি বাজারে আলু বিক্রি বন্ধ হওয়ায় কালো বাজারে সেখানে আলু বিক্রির অভিযোগও উঠেছে। প্রকাশ্যে বিক্রি না করলেও কয়েকজন আড়ালে বেশি দামে আলু বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ।
শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক দীপাপ প্রিয়া বলেন, “নিয়ন্ত্রিত বাজারে আলুর দাম কম ছিল। বাজারে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে টাস্ক ফোর্স নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। আলু বিক্রি বন্ধ ছিল বলে কোনও অভিযোগ পাইনি। বাসিন্দাদের কেউ সমস্যা নিয়ে জানাননি। তবে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। পাইকারি বাজারে যথাযথ দাম পেলে খুচরো বাজারের ব্যবসায়ীদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” এ দিন সকালে টাস্ক ফোর্স না ঘুরলেও বেলার দিকে তারা শিলিগুড়ি থানার উল্টোদিকে পুরনো বাজারে গিয়েছেন।
স্বপন দাস, মনোরঞ্জন হালদার, জিতেন রায়দের মতো রথখোলা বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারি বাজারে আলুর দাম বেশি তাই। তাঁরা আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। এর আগের দিন ১৮-২২ টাকা কেজিদরে আলু বিক্রি করার অপরাধে পুলিশ তাদের ধরেছিল। অথচ কম দামে আলু না পেলে তারা আলু বিক্রি করতে পারবেন না। কার্তিক সরকার নামে এক ব্যবসায়ী জানান, এ দিন টাউন স্টেশন বাজারের রাম ভান্ডার থেকে তিনি ১০০ কিলোগ্রাম আলু ১৪ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। তা হলে তিনি কী ভাবে সরকার নির্ধারিত ১৪ টাকা খুচরো দামে বিক্রি করবেন। তাই আলু আনলেও বিক্রি করেননি। টাউন স্টেশন বাজারের রাম ভান্ডারের মালিক তন্ময় বল দাবি করেন, “বর্ধমান থেকে তাঁরা যে আলু কিনেছেন তার দর অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে।” তন্ময়বাবু ওই কথা বললেও সরকারি ভাবে পাইকারি বাজারে আলুর সর্বোচ্চ দাম ১০ টাকা ৮০ পয়সা ধার্য করা হয়েছে। যদিও এ দিন শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারেই আলু বিক্রি হয়েছে ১৩ টাকা থেকে সাড়ে ১৩ টাকায়। বাজারের ব্যবসায়ীরা তাই প্রশাসনকে পাইকারি বাজারের দর নিয়ন্ত্রণের উপর নজর দেওয়ার দাবি করেছেন।
শিলিগুড়ির ঝঙ্কারমোড় বাজার, হায়দরপাড়া বাজার, বিধানমার্কেট সবজি বাজারে কোথাও ১৮ টাকা কোথাও ২০ টাকা দরে আলু কিনতে হয়েছে বাসিন্দাদের। ওই সমস্ত বাজারে প্রশাসনের তরফে কেন টাস্ক ফোর্স অভিযান চালাচ্ছে না তা নিয়ে বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন। এ দিন রথখোলা বাজারে কেনাকাটা করতে এসে আলু কিনতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন অঞ্জলি মল্লিক, সুধা রায়দের। তাঁরা বলেন, “ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি না করলে তো মুশকিল। প্রশাসন বিষয়টি দেখুক।” কলেজপাড়ার বাসিন্দা পঙ্কজ গোস্বামী জানান, ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি বন্ধ রাখায় তিনিও কিনতে পারেননি।
আলু বিক্রেতারা বিক্রি বন্ধ রাখেন মালবাজারেও। বিক্ষোভের বৃহস্পতিবার মালবাজারের দৈনিক বাজারে দিনভর প্রায় কোন সব্জি বিক্রেতাই আলু বিক্রি করেননি। দুই একজনের কাছে সামান্য আলু থাকলেও তা সাতসকালে বাজারের শুরুতেই চড়া দামে বিক্রি হয়ে যায় বলে অভিযোগ। বাজার করতে এসে আলু না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন ক্রেতারা। উল্লেখ্য, গত কদিন ধরেই মালবাজারের মহকুমা ও পুলিশ প্রশাসন রাজ্য সরকারের নির্ধারিত কেজি প্রতি ১৪ টাকা যাতে বিক্রি হয় তা নিয়ে নজরদারি শুরু করেছে। গত বুধবার সকাল ও সন্ধ্যায় সরকার নির্ধারিত মূল্যেই আলু বিক্রি করতে মাইকে প্রচার করা হয়। এর পরেই এদিন আলু বিক্রি বন্ধ করে দেন খুচরো বিক্রেতারা। ব্যবসায়ী অজিত পাসোয়ান, মোহনলাল সরকাররা জানান, আমাদের ২০ টাকা কিলো দরে পাইকারদের থেকে কিনতে হয়। সেই আলু সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারব না। তাই বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। পাইকারি দরের বিষয়টি প্রশাসনে দেখা দরকার। মালবাজারের মহকুমা শাসক জ্যোর্তিময় তাঁতি জানান, হিমঘর থেকে পাইকারি বাজার অবধি যথেষ্ট আলু থাকলেও দৈনিক বাজারে আলু থাকবে না, এটা হতে পারে না। আলু মজুত করে যাঁরা লাভ করতে চাইছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্য দিকে, মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হবে আলিপুরদুয়ার বড়বাজার এলাকায়। আজ, শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে ওই দামে আলু বিক্রি হবে। নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি আলু বিক্রিতে প্রশাসনকে সাহায্য করবে। বর্তমানে শহরে ২০-২২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক নিখিল নির্মল জানান, অসমে যাওয়ার সময় বেশ কয়েকটি আলু বোঝাই গাড়ি আটকানো হয়েছে। সেই আলু ন্যায্য মূল্যে বিলি করা হবে। আলিপুরদুয়ার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির কর্মী পীযূষকান্তি দে জানান, বাজেয়াপ্ত গাড়ি আলু ছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের থেকে আলু নিয়ে বিক্রি করা হবে। প্রত্যেক বাসিন্দা ২-৩ কিলো আলু কিনতে পারবেন। |
বৃহস্পতিবারের দর |
পাইকারি |
খুচরো |
আলু |
১৩/১৮/২৪ |
১৮/২০/২৮ |
পেঁয়াজ |
৪০-৫০ |
৬০-৭০ |
আদা |
৩০-৪০ |
৬৫-৮০ |
রসুন |
২০-৪৮ |
৫০-৬৫ |
বেগুন |
১০-১৮ |
১৬-৩০ |
ফুলকপি |
১৭-১৮ |
২০-৩০ |
বাঁধাকপি |
১৩-১৫ |
২০-২৫ |
কাঁচালঙ্কা |
১৮-২৫ |
৪০-৫০ |
টোম্যাটো |
৩৮-৪০ |
৫০-৬০ |
শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারের দর। প্রতি কেজি দর টাকায়। সূত্র: বাজার সমিতি ও প্রশাসন |
|