বিভিন্ন বাজারে লাগাম ছাড়া দাম রোধে রাজ্যের খুচরো বাজারগুলিতে আলুর দর বেঁধে দিল রাজ্য সরকার। সেই মতো আলু ১৪ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না বলে সরকারি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে নিয়ন্ত্রিত বাজারগুলিতে। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতিতে সেই নির্দেশ এসে পৌঁছয়। শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি সূত্রে জানানো হয়েছে, সেই অনুয়াযী, পাইকারি বাজারে আলুর সর্বোচ্চ দর রাখা হয়েছে ১০ টাকা ৮০ পয়সা। অথচ শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারে এ দিন আলু ১৬ থেকে ৩০ টাকা দরেও বিক্রি হয়েছে। |
চম্পাসারি বাজারে টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
|
কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে ইতিমধ্যেই সরকারি বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন জেলাগুলিতে পাঠানো হয়েছে। সরকারের তরফে খুচরো বাজারে ৩৬ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করাও হচ্ছে। উত্তরবঙ্গেও সেই ব্যবস্থা করা যায় কি না তা দেখা হচ্ছে। আশা করছি পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য আনাজের দাম এখনও মাত্রা ছাড়া রয়েছে। প্রশাসনের কথা শিলিগুড়ি বিধান মার্কেট, রথখোলা, সুভাষপল্লি বাজার, চম্পাসারি বাজারের মতো শহরের বিভিন্ন বাজারের একাংশ ব্যবসায়ী প্রশাসনের নির্দেশের তোয়াক্কা করছেন না বলে অভিযোগ। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাও প্রশাসনের আধিকারিকরা নিতে পারছেন না। এ দিন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সপ্তর্ষি নাগের তরফে টাস্ক ফোর্স নিয়ন্ত্রিত বাজার এবং চম্পাসারি বাজারে অভিযান চালানো হলেও সেখানে সবজির দরের তালিকা টাঙানো ছিল না। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, “বুধবার থেকে শহরের বাজারগুলিতে সব্জির দরের তালিকা যাতে টাঙানো হয় স্থানীয় কৃষি বিপণন বিভাগকে তা বলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত বাজারেও সবজির তালিকা নিয়মিত টাঙাতে বলা হয়েছে।” |
মঙ্গলবারের দর |
পাইকারি |
খুচরো |
আলু ১৫/১৯/৩০
|
১৮/২২/৩২ |
পেঁয়াজ ৪০-৫২ |
৭০-৮০ |
আদা ৩০ |
৬৫-৭০ |
রসুন ২০-৪০ |
৫০-৬০ |
বেগুন ১০-১২ |
২০-২৫ |
ফুলকপি ১২-১৭ |
২৫-৩০ |
বাঁধাকপি ১২-১৪ |
২০-২৫ |
কাঁচালঙ্কা ১৩-১৫ |
৪০-৪৫ |
টোম্যাটো ৩৪-৩৮ |
৫০-৬০ |
শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারের দর।
প্রতি কেজি দর টাকায়। সূত্র: বাজার সমিতি ও প্রশাসন |
|
স্থানীয় বাজারে সব্জির দাম নিয়ন্ত্রণে শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই বলেই এ দিন অভিযোগ উঠেছে। মহকুমাশাসকের উদ্যোগে যে টাস্ক ফোর্স গঠিত হয়েছে তার প্রতিনিধিরা এ দিন নিয়ন্ত্রিত বাজারে গিয়ে বিষয়টি আঁচ করেছেন। দলের নেতৃত্বে থাকা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখেন তাঁরা নিজেদের ইচ্ছে মতো দাম ঠিক করছেন। যার উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। নিজেদের কমিশন এজেন্ট পরিচয় দিয়ে জানান, মহারাস্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটকের মতো ভিন রাজ্য থেকে পেঁয়াজ আনা হয়েছে। গাড়ির খরচ ধরে এ দিন পাইকারি বাজারে সেই পেঁয়াজ ৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ ভিন রাজ্য থেকে কী দরে পেঁয়াজ তাঁরা কিনেছেন তার কোনও নথি দেখাতে পারেননি বা চাননি ওই ব্যবসায়ীরা। তা হলে কীসের ভিত্তিতে দাম ঠিক করছেন তারা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা থেকেই টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধিদের একাংশের সন্দেহ দামে কারচুপি করতেই নথি রাখা হচ্ছে না। সব্জির পাইকারি বাজারেও একই পরিস্থিতি। এমনকী খুচরো বাজারের ব্যবসায়ীরাও যাঁরা পাইকারদের থেকে জিনিস কিনছেন তাঁরাও কোনও রসিদ রাখছেন না বলে অভিযোগ।
একই পরিস্থিতি টোম্যাটো, বা অন্য সব্জি বাইরে থেকে আনার ক্ষেত্রেও। কমিশন এজেন্ট প্রভাস ভট্টাচার্য জানান, নাসিক থেকে তিনি টোম্যাটো এনেছেন। এ দিন পাইকারি বাজারে তিনি সেই টম্যাটো ৩৩-৩৪ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি করেছেন। কিন্তু কত দামে তিনি নাসিক থেকে টোম্যাটো কিনেছেন সেই নথি দেখাতে পারেননি। প্রভাসবাবু বলেন, “কোনও নথি নেই। আমরা কমিশন এজেন্ট। যেখান থেকে জিনিস কেনা হচ্ছে সেখানে পরিচিতরা রয়েছেন।” একই রকম পেঁয়াজের কমিশন এজেন্ট রাহুল জসওয়াল বলেন, “যে চালান পাঠানো হয় তাতে পেঁয়াজের দাম লেখা থাকে না। আমাদের পরিচিতরা দাম জানেন। সেই মতো সওদা করে কেনা বেচা চলে।” কিন্তু এই অজুহাত যে মেনে নেওয়া যেতে পারে না তা স্পষ্ট। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সপ্তর্ষিবাবু জানান, এখন থেকে যে সব্জিই কমিশন এজেন্টরা ভিন রাজ্য বা রাজ্যের কোনও জায়গা থেকে আনুন কত দামে তা কিনলেন তার রসিদ থাকা চাই। বিভিন্ন বাজারে খুচরো বিক্রেতারাও পাইকারদের কাছ থেকে কত টাকায় সব্জি কিনে আনছেন তার রসিদ রাখা বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত বাজারের ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল কমিশন এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা তপনকুমার সাহা জানান, প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত।
পাইকারি বাজার পরিদর্শনের পর এ দিন টাস্ক ফোর্স চম্পাসারি বাজারে যান। সেখানেও খুচরো বিক্রেতাদের ইচ্ছে মতো দাম নেওয়ার বিষয়টি নজরে এসেছে। চন্দন কুমার বর্মন এবং বিশ্বনাথ নিয়োগী নামে দুই ব্যক্তি এ দিন আদা কিনতে গেলে তাদের কাছ থেকে ৮০ টাকা কেজি দাম নেওয়া হয়েছে বলে টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধিদের অভিযোগ। করেন। অভিযোগ পেয়ে প্রতিনিধিরা ওই সবজি বিক্রেতা বিকাশ সাহার কাছে জবাব দিহি চাইলে তিনি ক্ষমা চান। দোকানে তিনি ছিলেন না। ভুলবশত তাঁর ভাই ওই দাম বলেছে বলে ক্ষমা চান এবং ক্রেতাকে টাকা ফেরত দেন। ওই ব্যবসায়ীকে সতর্ক করা হয়েছে। রাজেশ শর্মা, সীমা গোয়েলের মতো বাসিন্দাদের অনেকেই সব্জির দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ দিন চম্পাসারি বাজারে এসে আনাজের মাত্রাতিরিক্ত দাম দেখে তিনি কেনাকাটা না করেই ফিরে যান। |