উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের উদ্যোগে জলপাইগুড়ির আর্ট গ্যালারির পুনরুজ্জীবন নিয়ে জট কাটল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ি সার্কিট হাউসে শহরের একাংশ বিদ্দজ্জন-সহ আর্ট গ্যালারি রক্ষা মঞ্চের সদস্যদের সঙ্গে মন্ত্রী বৈঠক করেন। প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের বৈঠকের শেষে সকলেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর প্রস্তাবে সহমত হন। এ দিনের বৈঠকে বিদ্বজ্জনেদের দেওয়া আর্ট গ্যালারি সম্পর্কিত কয়েকটি প্রস্তাবও রূপায়ণের নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী গৌতমবাবু।
এ দিনের বৈঠকে স্থির হয়েছে, জলপাইগুড়ি সরজেন্দ্র দেব রায়কত কলাকেন্দ্র তথা আর্ট গ্যালারির বেহাল দশা ঘোচানোর জন্য একটি প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিনোদন সংস্থাকে আগামী ১০ বছরের জন্য হলটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। |
ওই সংস্থা আর্ট গ্যালারিতে পর্যায়ক্রমে নতুন পুরোনো জনপ্রিয় সিনেমা দেখাবে, পাশাপাশি তাঁদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করবেন। বছরের ৩০ দিন হলটিতে অনুষ্ঠান করার জন্য স্থানীয় সংস্থাকে দেওয়া হবে। ওই ৩০ দিন ছাড়াও অনান্যদিন কোনও সংস্থা বা সংগঠন আর্ট গ্যালারি ব্যবহার করতে চাইলে আগাম আবেদনের ভিত্তিতে তা দেওয়া হবে।
এসজেডিএর তরফে বছরে যে ৩০ দিন স্থানীয় সংস্থাকে ব্যবহার করার জন্য দেওয়া হবে। তার মধ্যে ২০ দিন বিনামূল্যে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানালেও বৈঠকে উপস্থিত বিদ্দজ্জনেরা ২০দিন বিনামূল্যে দেওয়ার পরিবর্তে ৪০ দিন অর্ধেক খরচে দেওয়ার আবেদন জানান। সেই প্রস্তাবও এ দিনের বৈঠকে মেনে নেওয়া হয়।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এসজেডিএর চেয়ারম্যান গৌতমবাবু বলেন, “জলপাইগুড়ি শহরের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এদিনের বৈঠকে সকলকে আমাদের ভাবনার কথা বুঝিয়ে বলতে পেরেছি। তাতে সকলেই সম্মতি দিয়েছেন। এবার দ্রুত আর্ট গ্যালারিকে নতুন চেহারা দেওয়ার উদ্যোগ নেব।”
এসজেডিএর হাতে থাকা আর্ট গ্যালারির পরিচালনা করতে বছরে প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা ক্ষতি হচ্ছিল বলে সংস্থা সূত্রে জানানো হয়। পাশাপাশি হলের শব্দ, আলোর ব্যবস্থা থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে। হলের পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষোভ জানান শহরের বাসিন্দারা। সম্প্রতি, এসজেডিএর তরফে হলটির পরিচলনার ভার একটি বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে শহরের একাংশ শিল্পী এবং নাট্যকর্মীরা প্রতিবাদ জানান। আর্ট গ্যালারি রক্ষামঞ্চ নামে একটি প্রতিবাদ কমিটিও তৈরি হয়। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত কমিটির আহ্বায়ক উমেশ শর্মা বলেন, “এসজেডিএ কী করতে চলেছে, তা এ দিন মন্ত্রী বিস্তারিতভাবে বলেছেন। আর্ট গ্যালারি রক্ষার এবং শহরের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের বিস্তারের কথা মাথায় রেখে আমরা সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। আমরাও বেশ কিছু প্রস্তাব মন্ত্রীকে দিয়েছি। আর্ট গ্যালারিতে থাকা ছবি এবং বিভিন্ন মডেলও সংরক্ষণ করা হবে বলে উনি জানিয়েছেন।”
এসজেডিএ সূত্রে জানানো হয়েছে, বিদ্দজ্জনেদের প্রস্তাব অনুযায়ী আর্ট গ্যালারিতে ছবি প্রদর্শনীর জন্য বিশেষ পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। গ্রন্থাগারও করা হবে। বৈঠকে এসজেডিএর কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী এবং জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকারও উপস্থিত ছিলেন। এ দিন বৈঠকের আগে আর্ট গ্যালারিতেই জেলা তৃণমূলের বিজয়া সম্মলনে যোগ দেন মন্ত্রী গৌতমবাবু। সেই সভায় গৌতমবাবু বলেন, “দলের সব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সততা বজায় রাখতে হবে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়িতে দলের ফল ভাল করতে সরকারি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের প্রচার আরও বেশি করে দলের কর্মীদের করতে হবে।” সভায় জলপাইগুড়ি পুরসভায় কংগ্রেসের প্রাক্তন কাউন্সিলর মালা ভৌমিক এবং আইনজীবী তথা নেতা তপন ভট্টাচার্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সভায় জেলা তৃণমূল সভাপতি চন্দন ভৌমিক-সহ অন্য তৃণমূল নেতারা উপস্থিত ছিলেন। যদিও কংগ্রেসের দাবি, ওই দুই জনের দলবদলে কংগ্রেসে কোনও প্রভাব পড়বে না। |