জেলাশাসকের বদলে ভূমি কমিশনার। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সারদা সংস্থার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হালহকিকত দ্রুত জানতে এ বার রাজ্যের ভূমি কমিশনারকে দায়িত্ব দিল শ্যামলকুমার সেন কমিশন। আগে এই কাজের ভার দেওয়া হয়েছিল জেলাশাসকদের। দিন দশেক আগে এই ব্যাপারে কমিশনের তরফে জেলাশাসকদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু জেলাশাসকদের রিপোর্ট আসার আগেই ওই সিদ্ধান্ত বদল করেছেন কমিশনের কর্তারা।
কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত বদল?
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘দ্রুত’ শব্দটির উপরে জোর দিয়েছেন কমিশনের এক পদস্থ কর্তা। তিনি বলেন, “সারদা সংস্থার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির চরিত্র দ্রুত জেনে নেওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
সারদা সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরে গত এপ্রিলে সেন কমিশন গড়া হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরানোর ব্যবস্থা করাই কমিশনের প্রধান কাজ। কমিশন সূত্রের খবর, সরকারের আর্থিক সহায়তায় ইতিমধ্যেই এক লক্ষেরও বেশি আমানতকারীর টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে-সংস্থা কয়েক লক্ষ পরিবারের টাকা আত্মসাৎ করেছে, তাদের সম্পত্তি বিক্রির প্রক্রিয়া এখনও শুরু করা যায়নি। শুধু সরকারের থেকে টাকা নিয়ে আমানতকারীদের পাওনা মেটানো হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন তুলে বিভিন্ন স্তরে রাজ্য সরকার ও কমিশনের সমালোচনা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, সরকারের টাকা তো জনগণের টাকা। তা দিয়ে ক্ষতিপূরণের বন্দোবস্ত কেন? এই অবস্থায় কমিশন চায়, সারদার সম্পত্তি দ্রুত নিলামের ব্যবস্থা হোক। কমিশন-কর্তারা জানান, সারদা সংস্থার বহু সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে বলেও তাঁদের কাছে অভিযোগ আসছে। সেই সব অভিযোগ কতটা সত্য, তা জানতে সম্পত্তির সবিস্তার রিপোর্ট দ্রুত হাতে পাওয়া দরকার।
সারদার সম্পত্তি যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে এ ভাবে সিদ্ধান্ত বদলের ফলে কী সুবিধা হবে?
মহাকরণের এক পদস্থ অফিসার জানান, নিয়ম অনুযায়ী জেলার ভূমি দফতরকে দিয়েই জেলাশাসকেরা সম্পত্তি সংক্রান্ত খোঁজখবর নেওয়ার কাজ করিয়ে থাকেন। অর্থাৎ জেলাশাসককে দায়িত্ব দিলে তাঁর কাছ থেকে নির্দেশ যাবে অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে। অতিরিক্ত জেলাশাসকের হাত ঘুরে বিষয়টি যাবে জেলার ভূমি দফতরে। আবার সেখান থেকে দায়িত্ব দেওয়া হবে বিডিও অফিসকে। তার পরে চলবে জমির চরিত্র যাচাইয়ের কাজ। তা সম্পূর্ণ হলে ফের একই পদ্ধতিতে বিষয়টি ফিরে আসবে জেলাশাসকের কাছে। এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময় চলে যাবে বলে। এই বিলম্ব এড়াতেই কমিশন সরাসরি ভূমি কমিশনারকে দিয়ে সারদা সংস্থার সম্পত্তি যাচাইয়ের কাজটি সারতে চাইছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলবাবু বলেন, “এর আগে সারদার সম্পত্তির তালিকা সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এ বার পুরো তালিকাটি ভূমি কমিশনারের হাতে দেওয়া হচ্ছে।” এই সিদ্ধান্ত বদলের আগে, বুধবার রাজ্যের মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবকে কমিশনের অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে ছিলেন ভূমিসচিব তথা ভূমি কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহও। কমিশনের তরফে চেয়ারম্যান শ্যামলবাবু এবং অন্যতম সদস্য অম্লান বসু সরকারের সঙ্গে ওই বৈঠকে যোগ দেন।
কমিশনের এক কর্তা জানান, টাকা ফেরত চেয়ে সারদা সংস্থার আমানতকারীদের কাছ থেকে প্রায় ১৭ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। এই বিপুল সংখ্যক আমানতকারীকে কত টাকা ফেরত দিতে হবে, কমিশন এখনও তার হিসেব করে উঠতে পারেনি। সারদার সম্পত্তি বেচে কত টাকা পাওয়া যাবে, তা-ও এখনই বলা সম্ভব নয় বলে জানান শ্যামলবাবু। তাঁর কথায়, “কমিশনের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছে সরকার। তার মধ্যেই কাজ শেষ করতে চাই।”
|