|
|
|
|
ভেজা বাজির খেল, বেসামাল তুবড়ি -হাউই
অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
বারাসতের এক কালীপুজোর উদ্বোধন। হাজির হয়েছেন বিশিষ্ট অতিথিরা। তাঁদের সামনে আতসবাজি ফাটিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করবেন ক্লাব সদস্যেরা। কিন্তু হা হতোস্মি !
হাউইয়ের সলতেয় আগুন দিতেই তা গোঁত্তা খেয়ে ঢুকে গেল মাটিতে। আকাশের বদলে মাটিতেই ‘ভেল্কি’ দেখাতে শুরু করল সেটি। মান বাঁচাতে তড়িঘড়ি বিশেষ তুবড়ি এনে বসালেন এক ক্লাব সদস্য। আগুন দিতেই রঙিন ফোয়ারার বদলে ‘ধড়াম’ শব্দে ফেটে গেল সেটি। রংমশালেও রং নেই। শুধুই ধোঁয়া ! রাগের চোটে তখন মাথায় যেন আগুন লেগে গিয়েছে। কেউ কেউ আবার বাজি বিক্রেতাকে ফোন করে হম্বিতম্বি শুরু করে দিয়েছেন।
বাজির এই অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড শুধু বারাসতেই নয়, গাঁয়েগঞ্জে আরও অনেক জায়গাতেই ঘটছে। বাজি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে শুরু হওয়া নাগাড়ে বৃষ্টির জেরেই বাজির এই দশা। তাঁদেরই এক জনের কথায়, “বৃষ্টির চোটে সব্জি বাজারে আগুন লেগেছে। আবার সেই বৃষ্টির জেরেই বাজির বাজার তো দূর, বাজিতেই আগুন লাগানো যাচ্ছে না !” |
|
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য। |
আবহাওয়া দফতরের তথ্যও বলছে, অক্টোবরের প্রথম তিন সপ্তাহে গোটা দক্ষিণবঙ্গেই অতিবৃষ্টি হয়েছে। বাতাসে ছিল প্রচুর জলীয় বাষ্পও। দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটির এক বাজি ব্যবসায়ীর বক্তব্য, বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকার জন্যই মশলা ঠিক করে শুকোতে পারেনি।
কী ভাবে তৈরি হয় বাজি? চম্পাহাটি, বজবজের বাজি কারিগরেরা জানান, গন্ধক ও সোরার সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে মশলা তৈরি করা হয়। আতসবাজির ক্ষেত্রে দু’দফায় ওই মশলা শুকোতে হয়। এক কারিগরের কথায়, “প্রথমে নির্দিষ্ট ভাগে গন্ধক ও সোরার সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে এক বার চড়া রোদে শুকোনো হয়। তার পরে তুবড়ি ও নানা রঙের আতসবাজি তৈরি করে দ্বিতীয় দফায় রোদে দিতে হয়।”
ওই কারিগরদের কথায়, বাজির মশলা ঠিক মতো শুকোতে চড়া রোদ দরকার। বাতাসে ভিজে ভাব কম থাকতে হবে। কিন্তু এ বার দুর্গাপুজোর আগে থেকে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত সেটা প্রায় মেলেনি। আর বারাসতের ওই পুজোয় বাজির ভোজবাজির কারণও সেটি। মহেশতলার এক বাজি ব্যবসায়ী বলছেন, “মশলা ঠিক মতো শুকোলে রং -বেরঙের আলো বেরোবে। না হলে সমস্যা হতে পারে। তুবড়ি বা রংমশাল ফাটতে পারে।”
কোথাও কোথাও আবার বৃষ্টির হানা ঠেকাতে বিপজ্জনক পদ্ধতিও বেছে নিয়েছিলেন কারিগরেরা। মহেশতলা, চম্পাহাটির ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েকটি কারখানায় লোহার চাটু গরম করে তাতে মশলা শুকোনো হয়েছে। এক ব্যবসায়ী বলেন, “এই ভাবে কাজ করলে যে কোনও সময়েই বিপদ ঘটতে পারত।”
তা হলে কি এ বার কালীপুজোয় বাজির উপদ্রব কমবে? এমনটা অবশ্য নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বাজি -বিক্রেতারা। কারণ, বাজি বাজারের একটি বড় অংশ আসে তামিলনাড়ুর শিবকাশী থেকে। সেখানে বৃষ্টি খুব একটা বেশি হয় না। ফলে বাজি শুকোতে সেখানে তেমন সমস্যা হয়নি।
সম্প্রতি অন্ধ্র উপকূলে হাজির হওয়া নিম্নচাপের প্রভাব কাটার পর থেকে রোদ ফুটেছে এ রাজ্যেও। কমছে জলীয় বাষ্পও। তার ফলে কিছুটা আশার আলো দেখছেন বাজি ব্যবসায়ীরা। একই সুর আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের গলাতেও। তিনি বলছেন, “কালীপুজো পর্যন্ত এমনই আবহাওয়া থাকবে।”
অতএব, ফের বাজি ফাটিয়ে আনন্দ করতেই পারেন বারাসতের ওই কালীপুজোর উদ্যোক্তারা!
|
তথ্য সহায়তা: শুভাশিস ঘটক। |
|
|
|
|
|