সারদা গোষ্ঠীর যাবতীয় সম্পত্তির ব্যাপারে জানতে উদ্যোগী হল শ্যামল সেন কমিশন। বিভিন্ন জেলায় সারদার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বাস্তব অবস্থা কী এবং তার ন্যূনতম মূল্য কত হতে পারে, তা জানতে চেয়ে তারা জেলাশাসকদের কাছে চিঠি পাঠাল।
পাশাপাশি, সারদা-কাণ্ড নিয়ে অন্তবর্তী রিপোর্টও মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েছে কমিশন। ভবিষ্যতে এ রাজ্যে যাতে সারদার মতো অর্থলগ্নি সংস্থা মাথা চাড়া না দিতে পারে, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে।
পুজোর ছুটির পরে সোমবারই কমিশনের অফিসে আসেন চেয়ারম্যান শ্যামলকুমার সেন। তিনি জানান, সারদা গোষ্ঠীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রির ভার কমিশনের হাতে দিতে হাইকোর্ট আগেই নির্দেশ দিয়েছিল সরকারকে। সেই মতো রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। কমিশন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) রাজ্য জুড়ে থাকা সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তির একটি তালিকা কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তি বেরোনোর পরে এ বার ওই সব সম্পত্তির বাস্তব অবস্থা জানার কাজ শুরু হয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, সিটের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী রাজ্যের ১২টি জেলায় সারদা গোষ্ঠীর নামে প্রচুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। সে সবের হাল কী, জমির পরিমাণ কত, সেখানে কোনও পাকা কাঠামো আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে ওই জেলার জেলাশাসকদের।
এ দিন কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলবাবু বলেন, “জেলাশাসকদের কাছ থেকে রিপোর্ট আসার পরেই সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি বিক্রির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।” তিনি জানান, শুধু জমিজমা বা অন্যান্য সম্পত্তির বর্তমান হাল জানাই নয়, ওই সব সম্পত্তির ন্যূনতম মূল্য (রিজার্ভ প্রাইস) কত হবে, তা-ও জানাতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ভূমি দফতরের সাহায্য নিতে বলা হয়েছে জেলাশাসকদের।
পাশাপাশি, সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন অফিস থেকে বাজেয়াপ্ত করা ৭৩টি গাড়ির হাল জানতে একটি কমিটিও গড়েছে কমিশন। শ্যামলবাবু জানান, রাজ্য পরিবহণ দফতর, পুলিশ এবং সারদা কমিশনের একাধিক অফিসারকে নিয়ে ওই কমিটি গড়া হয়েছে। কোন গাড়ির দাম কত হতে পারে, তা-ও জানাতে বলা হয়েছে।
শ্যামলবাবু বলেন, “সারদার স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি নিলাম করা হবে। তাই বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে ন্যূনতম দর জানা জরুরি। সে কারণেই গাড়ি, বাড়ি ও জমি নিলামে তোলার আগে তার মূল্য জেনে নেওয়াটা দরকার।” তবে ওই সব সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের সব টাকা মেটানো যাবে কি না, তা বলতে পারছে না কমিশন।
কত টাকা আমানতকারীদের কাছ থেকে তুলেছে সারদা গোষ্ঠী?
কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি) সম্প্রতি জানিয়েছে, সারদা গোষ্ঠী আমানতকারীদের কাছ থেকে ২৪৬০ কোটি টাকা তুলেছে। তবে সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন গত ২০ সেপ্টেম্বর কমিশনে হাজির হয়েই জানিয়েছিলেন, আমানতকারীদের কাছ থেকে তিনি ২০৬০ কোটি টাকা তুলেছেন (২১ সেপ্টেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকায় এই তথ্য প্রকাশিতও হয়েছে)। সুদীপ্তবাবু আরও জানিয়েছিলেন, তাঁর সংস্থার নামে যে সব সম্পত্তি রয়েছে, তার তালিকা কমিশনের কর্তাদের হাতে তিনি তুলে দেবেন। যদিও সোমবার পর্যন্ত তা কমিশনের হাতে আসেনি বলে জানান শ্যামলবাবু। তবে ইডি যে তথ্য দিয়েছে, তা পাওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে কমিশন।
কমিশনের এক পদস্থ অফিসার এ দিন জানান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, বাঁকুড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলায় থাকা সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তির তালিকা পাওয়া গিয়েছে। জেলার কোথায় সে সব সম্পত্তি রয়েছে তার ঠিকানা-সহ তালিকা জেলাশাসকদের পাঠানো হয়েছে। এ দিকে, চলতি মাসের ২৩ তারিখ কমিশনের ৬ মাসের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। কমিশন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছে রাজ্য। শ্যামলবাবু বলেন, “আশা করছি, আর এক বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করা যাবে।” |