রবিবার রাতে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়েছে। সোমবারও মেঘলা আকাশের সঙ্গী ছিল ঝিরঝিরে বৃষ্টি। এরই মধ্যে এ দিনই মৌসম ভবন জানিয়ে দিল, পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশ থেকেই বিদায় নিয়েছে বর্ষা।
এমন আবহাওয়া পিছনে রেখে বর্ষার বিদায় সাম্প্রতিক কালে দেখেননি আবহবিদেরা। মৌসম ভবন অবশ্য বলছে, এই বৃষ্টি বর্ষার বৃষ্টি নয়। অক্টোবরের শেষে এমন আবহাওয়ার জন্য দায়ী তামিলনাড়ু-অন্ধ্র উপকূলে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপ। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “আজ, মঙ্গলবারও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।”
আবহবিজ্ঞানীরা জানান, সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষার মূল সময় কাল ধরা হয়। বিভিন্ন রাজ্য বা অঞ্চলের প্রেক্ষিতে তা দিন কয়েক এগিয়ে-পিছিয়ে নেয় আবহাওয়া দফতর। দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক ভাবে বর্ষা হাজির হয় ৮ জুন। বিদায় নেয় ৮ অক্টোবর। যদিও গত কয়েক বছর ধরেই বর্ষা নির্দিষ্ট সময় পার করে হাজির হচ্ছিল। বিদায়ের ক্ষেত্রেও তা-ই লক্ষ করা যাচ্ছিল। কিন্তু সেই রীতি পাল্টে গিয়েছে এ বছর। কী রকম?
আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ বার একেবারে দিনক্ষণ মেনে ৮ জুন বর্ষা হাজির হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গে। সে ক্ষেত্রে বর্ষা নির্ঘণ্ট মেনেই বিদায় নেবে বলে তাঁরা মনে করেছিলেন। কিন্তু সেপ্টেম্বরে একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপ, সর্বোপরি বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় পিলিন বর্ষাকে সময়ে বিদায় নিতে দেয়নি। বরং গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশ কিছুটা লম্বাই হয়েছে তার ইনিংস। এক আবহবিজ্ঞানী বলেন, “পিলিনের রেশ কাটতে না কাটতেই আর একটি নিম্নচাপ হয়েছে। তার ফলেই বর্ষা বিদায় নিলেও বৃষ্টি বিদায় নিচ্ছে না।”
ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপের জেরে এ বার ভরা আশ্বিনেও ফ্যাসাদে পড়তে হয়েছে রাজ্যের বাসিন্দাদের। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী জানান, বিদায় লগ্নে একের পর এক নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়, পিলিনের দাপটে ঝোড়ো ইনিংস খেলেছে বর্ষা। অক্টোবরের প্রথম কুড়ি দিনে পূর্ব ও মধ্য ভারতে অতিবৃষ্টি হয়েছে। ঝাড়খণ্ডে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। উপচে পড়েছে জলাধার। প্লাবিত ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের একাংশ।
এই অবস্থায় কী ভাবে বর্ষা বিদায়ের কথা ঘোষণা করল মৌসম ভবন? আবহবিদেরা জানান, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ও বৃষ্টির তীব্রতা কমে আসা বর্ষা বিদায়ের ঘোষণার ক্ষেত্রে এগুলিই বিবেচ্য থাকে। পাশাপাশি, উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসা হাওয়ার দাপটে কেরল, তামিলনাড়ুতে বৃষ্টি শুরু হয়। উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিজ্ঞানীরা জানান, গোটা দেশেই বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে। বৃষ্টির তীব্রতাও কমেছে। এ দিন উপগ্রহ-চিত্রে অবশ্য দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প নজরে পড়েছে তাঁদের। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, তামিলনাড়ু-অন্ধ্র উপকূলের নিম্নচাপ থেকে দক্ষিণবঙ্গ পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। তার ফলে ওড়িশা-বাংলায় জলীয় বাষ্প ঢুকছে।
কত দিন চলবে এই পরিস্থিতি? আবহবিদেরা জানান, নিম্নচাপটি ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে। যার ফলে অন্তত বুধবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলতে পারে। এর জের কেটে গেলেই দক্ষিণবঙ্গে ফের জলীয় বাষ্প কমবে। ভোরের দিকে টের পাওয়া যাবে হিম-হিম ভাব।
|