তাদের চাপেই রঘুরাম রাজন কমিটির রিপোর্ট নিয়ে কেন্দ্র খানিকটা নরম হয়েছে বলে দাবি করল তৃণমূল।
ওই রিপোর্টে উন্নয়নের নিরিখে রাজ্যগুলির যে তালিকা তৈরি হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় অনুদান বণ্টনের যে সূত্র দেওয়া হয়েছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য কমবে বলেই রাজ্য সরকারের অভিযোগ। এর বিরুদ্ধে আজ নর্থ ব্লকে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের সামনে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দেন তৃণমূল সাংসদেরা। তার পর মুকুল রায়ের নেতৃত্বে তাঁরা দেখা করেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে। তৃণমূলের দাবি, চিদম্বরম তাঁদের বলেছেন, রাজন-রিপোর্ট মেনেই কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস হতে চলেছে, এমনটা নয়।
যদিও আগে ওই রিপোর্ট পেশের দু’ঘণ্টার মধ্যেই চিদম্বরম জানিয়েছিলেন রিপোর্ট গৃহীত হয়েছে। এর পরেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সাংসদদের বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং চিদম্বরমের সঙ্গে দেখা করে অসন্তোষ জানানোর নির্দেশও দেন তিনি। সেই মতো আজ চিদম্বরমের সঙ্গে দেখা করার পরে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগের সরকারের দেনার দায়ে রাজ্যের যে শোচনীয় অবস্থা, সে কথা কেন্দ্রকে বলে বোঝানো যাচ্ছে না।” তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, যে ভাবে অর্থ কমিশনকে উপেক্ষা করে কেবলমাত্র রঘুরাম রাজনের সুপারিশ মেনে চলার ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্র, তা সংবিধানবিরোধী। কেননা, কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক সম্পর্ক কী হবে তা চূড়ান্ত করে অর্থ কমিশন। সে কথা চিদম্বরমকে এ দিন জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। আর সে ক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে সরব হবেন বলেও অর্থমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। |
বর্তমানে দেশের তিনটি অন্যতম ঋণগ্রস্ত রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও পঞ্জাব। প্রণব মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ওই তিন রাজ্যের ঋণ সমস্যা কী ভাবে মেটানো যায় তা দেখার ভার দেন তৎকালীন রাজস্বসচিব সুমিত বসুকে। সেই কাজ এখনও চলছে। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এখন রাজনের সুপারিশ মেনে নিলে তিন রাজ্যকে ঋণমুক্ত করার যে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, তা বিশ বাঁও জলে যাবে। শুধু তাই নয়। প্রণববাবু সংসদে যে কথা দিয়েছিলেন, তা-ও ভঙ্গ করবে খোদ ইউপিএ সরকারই। সুদীপবাবু আজ এ-ও বলেন যে, “কেন্দ্র যদি পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি পঞ্জাব ও কেরলকে অর্থ সাহায্য দেয়, তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের দাবি উপেক্ষা করা চলবে না। এটা আমাদের অধিকারের লড়াই।”
সুদীপবাবুর অভিযোগ, “পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। স্বাধীনতার পর থেকেই রাজ্যের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। আমরা এখন তা উপলব্ধি করছি।” সুদীপবাবুর এই মন্তব্য আবার অস্ত্র তুলে দিয়েছে বামেদের হাতে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, “অতীতে আমরা যখন রাজ্যের দাবি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে গিয়েছি, তখন তো ওঁরা বয়কট করতেন। এত দিনে ওঁরা বুঝতে পেরেছেন। ভাল!”
রাজ্যের চাপের মুখে খানিকটা হলেও অবস্থান কেন বদল করল কেন্দ্র?
ওয়াকিবহাল মহলের অনেকের মতে, লোকসভা নির্বাচন দোরগোড়ায়। তার পরে জাতীয় রাজনীতিতে সমীকরণ কী দাঁড়াবে, তা পরিষ্কার নয়। অনেক জনমত সমীক্ষাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, তৃণমূলের আসন সংখ্যা বাড়বে। ফলে ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে তৃণমূলের সমর্থন প্রয়োজন হতে পারে, এই সম্ভাবনা থেকেই তৃণমূলকে আপাতত চটাতে চান না কংগ্রেস নেতৃত্ব।
|