বাইশ গজে ক্রিকেট বলকে মাঝে মাঝেই তিনি ফুটবলের মতো দেখে থাকেন বলে ক্রিকেট দুনিয়ার চালু প্রবাদ। যা আরও জোরালো হয়েছে আইপিএল-এর সৌজন্যে।
ক্যারিবিয়ানদের সেই ‘গেইল ঝড়’ একাই সচিন-উৎসব লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে বলে আশায় গোটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবির। শুধু কি ক্যারিবিয়ানরা! ক্রিকেটের নন্দকাননে সচিন কার্নিভ্যাল দেখার আগে সেই ক্রিস গেইল বাইশ গজে ম্যাজিক দেখাবেন ধরে নিয়ে সকাল ন’টাতেই ভিড় জমিয়েছিলেন সল্টলেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীরা। সল্টলেকের এই মাঠে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখার জন্য পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোর ছাদেও ভিড় জমিয়েছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে তিনদিনের প্রস্তুতি ম্যাচে ১৮ রানের বেশি স্থায়ী হল না গেইলের ইনিংস। ইমতিয়াজ আহমেদের বলে আড়া খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই হালকা হতে শুরু করল সেই ভিড়।
গেইল ফিরতেই শুরু হয়ে যায় ফিসফাস সচিনদের সামনে ক্যারিবিয়ানদের ভবিষ্যৎ কী হবে। কিন্তু সেই চাপ আলগা করল ক্যারিবিয়ান টপ অর্ডার। প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে চার জনই রান পেয়ে গেলেন ভারত সফরের প্রথম ম্যাচেই। যার সুবাদে প্রথম দিনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান চার উইকেটে ৩৩৩। ক্রিজে রয়েছেন চন্দ্রপল (৯১ ন.আ) এবং নরসিং দেওনারায়ণ (৮৩ ন. আ)। |
সাত সকালে দর্পচূর্ণ। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ডারেন স্যামি। উদ্দেশ্য ছিল সামি-অশ্বিনদের মুখোমুখি হওয়ার আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়া। গেইল রান না পেলেও পীযূষ চাওলাদের স্পিন আক্রমণকে অবলীলায় খেলে রান করে গেলেন কিয়েরন পাওয়েল (৬৪) ডারেন ব্রাভোরাও (৬১)। চোখে আঙুল দিয়ে তাঁরা দেখিয়ে দিলেন, ভারতীয়দের স্লো-টার্নারের প্রশ্নপত্র মগজে ঢুকিয়েই সফরে এসেছেন।
আর সেই পরীক্ষায় গেইল যদি হন তাঁদের জনপ্রিয় ফার্স্ট বয় তা হলে প্রচারের আড়ালে থাকা সেকেন্ড বয়টি কিন্তু উপমহাদেশের পিচে পোড় খাওয়া শিবনারায়ণ চন্দ্রপল। ভারত সফরে আসা ইস্তক যিনি সর্বক্ষণ পড়ে থাকছেন নেটে। গায়ানার এই ব্যাটসম্যানটির লক্ষ্য, প্রচারের সার্চলাইটের তলায় না থেকেও তাঁর ১৫০তম টেস্টও যেন রেকর্ডবুকে ঝলমল করে।
আইপিএল-এর জমানায় এবং অতীতে ভারত সফরে আসার ফলে চন্দ্রপল জানেন উপমহাদেশের আবহাওয়া, পিচ এবং বোলিং আক্রমণ। নিজে তো তৈরি হচ্ছেনই। অহরহ পরামর্শ দিয়ে তৈরি রাখছেন দলের ব্যাটিং শক্তিকেও। এ দিন ম্যাচের পর সে কথা বলেও গেলেন ব্রাভো। জানালেন, “চন্দ্রপল এই সফরে আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। প্রথম দিন থেকেই আমাদের কাজটা ও কিন্তু সহজ করে দিতে শুরু করল। যে কোনও সমস্যায় চন্দ্রপলের টিপস আমাদের সমাধান।” |
উত্তরপ্রদেশ কোচ সচিনের এক সময়কার সতীর্থ। ভারতীয় দলের সেই প্রাক্তন পেসার ভেঙ্কটেশ প্রসাদও চন্দ্রপলকে দেখে বলে গেলেন, “দেখে মনে হল বেশ তৈরি হয়েই এসেছে। উমেশদের কিন্তু ওর জন্য বিশেষ পরিকল্পনা রাখতে হবে। নতুনদের কাছে ওর ব্যাটিং স্টান্সটাই যে একটা প্রহেলিকা।”
আর চন্দ্রপল? পঞ্চম উইকেটে দেওনারায়ণকে নিয়ে ১৭৭ রানের পার্টনারশিপের প্রধান কারিগর কিন্তু কোনও কথা না বলেই শতরানের সংকল্প নিয়ে মাঠ ছাড়লেন দ্রুত।
গেইল ঝড় তাই সল্টলেকে দুর্বল হলেও এ দিন মাঠ ভাসাল চন্দ্রপলদের রান। অশনি সঙ্কেত কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। |
|