২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে মার্কো মাতেরাজ্জিকে মাথা দিয়ে গুঁতো মারার জন্য লাল কার্ড দেখতে হয়েছিল জিনেদিন জিদানকে। ফ্রান্সের কিংবদন্তি ফুটবলারের মতোই এ বার ‘লাল কার্ড’ দেখল তাঁর মূর্তিও। ঘটনাটা কী?
জিদানের বিখ্যাত ‘হেডবাট’-এর মূর্তি উদ্বোধনের তিন সপ্তাহের মধ্যেই সরিয়ে ফেলা হল কাতারের রাজধানী দোহার কোর্নিশ থেকে। মূর্তি সরানোর পরেই একটাই প্রশ্নই ঘুরপাক খেতে শুরু করে-- তিন সপ্তাহের মধ্যেই মূর্তিটা সরানো হল কেন? কাতারের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তিনটে প্রধান অভিযোগের কারণেই সরিয়ে দেওয়া হয় মূর্তি। প্রথমত, মূর্তি বসানোর পরেই স্থানীয় মানুষের থেকে একের পর এক অভিযোগ আসা শুরু হয় যে এই মূর্তি ছোটদের মধ্যে হিংসা ছড়াবে। দ্বিতীয়ত, মূর্তিটা রাখলে ফরাসি কিংবদন্তি জিদানের সফল ফুটবল কেরিয়ারের সবচেয়ে বিতর্কিত মুহূর্তকে তুলে ধরা হচ্ছে। তৃতীয়ত, জিদানের মূর্তি ধর্মবিরুদ্ধ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
জিদানের এই মূর্তি উন্মোচন হওয়ার কয়েক দিন পরেই সব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়ে পরে দোহা বাসিন্দাদের ক্ষোভ। কেউ লেখেন, “খুব খারাপ লাগছে যে দেশের তরুণ প্রজন্মের সামনে হিংসার বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে।” আবার কয়েক জন বিদ্রুপ করে লেখেন, “বাহ, দারুণ। কত কিছু শেখার আছে এই মূর্তির কাছ থেকে।”
তবে সবাই যে মূর্তির মধ্যে খারাপ দিকগুলোই দেখেছেন, তা নয়। ফরাসিদের মধ্যে কারও কারও ধারণা, মূর্তিটা এ ভাবে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে কোনও কারণ নেই। টুইটারে কয়েকজন জিদান সমর্থক লেখেন, “সত্যিই ওরা মূর্তিটা সরিয়ে দিল! ভাবিনি এমনটা হবে। ফুটবল ছাড়া আর কিছুরই প্রচার করছিল না মূর্তিটা।” কয়েক জন আবার লেখেন, “কাতারে ২০২২ বিশ্বকাপ করা হচ্ছে। জানতাম দেশটা ফুটবল ভালবাসে। তবে মূর্তি সরানো হল কেন?” |
দোহা ছেড়ে চললেন ‘জিদান-মাতেরাজ্জি’। ছবি: এএফপি। |
প্যারিসের পম্পিদু মিউজিয়ামের বাইরে ‘ক্যুপ দ্য তেতে’ নামে জিদানের গুঁতোর এই মূর্তি তৈরি করেন ফরাসি শিল্পী আবেল আব্দেসেমেদ। ‘দোহা মিউজিয়াম অথরিটি’ ষোলো ফুট লম্বা তামার সেই মূর্তিটা কিনে নেয়। অক্টোবরের তিন তারিখ দোহার কোর্নিশে মূর্তির উন্মোচন করা হয়। কিন্তু দোহা থেকে সরে এখন সেই মূর্তি যাবে ‘আরব মিউজিয়াম অব ফাইন আর্ট’-এ।
রুশ ফুটবলে ঝামেলা: কয়েক দিন আগেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ইয়াইয়া তোরেকে ‘বাদর’ বলে ইউরোপ জুড়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে রুশ ক্লাব সিএসকেএ মস্কোর সমর্থকেরা। এ বার সমর্থকদের ঝামেলা আবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিল রাশিয়ার ফুটবলে।
সমর্থকদের ঝামেলায় বুধবার রাতে শিনিক ইয়ারোস্লাভল এবং স্পার্টাক মস্কোর মধ্যে রাশিয়ান কাপের খেলা পরিত্যক্ত হয়। ঘটনাটা কী? শিনিক ইয়ারোস্লাভলের সঙ্গে ম্যাচ শুরুর আগেই স্পার্টাক সমর্থকরা মাঠে ‘ফ্লেয়ার টর্চ’ অর্থাৎ মশাল ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ সতর্ক করাতেও শান্ত হয়না তারা। বরং ম্যাচ চলাকালীন ঝামেলা আরও বেড়ে যায়। প্রথমার্ধে মাঠেই স্মোক বম্ব ছোড়ে স্পার্টাক সমর্থকরা। দ্বিতীয়ার্ধে ঝামেলা আরও বাড়ে। পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে স্পার্টাক সমর্থকরা। পাশাপাশি কয়েক জন সমর্থক আবার ‘নাজি’ চিহ্নও দেওয়া ব্যানার ওড়াতে থাকে। ক্ষুব্ধ হয়ে স্টেডিয়ামের সিট উপড়ে দেয় স্পার্টাক সমর্থকরা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বাধ্য হয়ে ফুটবলারদের ‘ড্রেসিংরুমে’ পাঠিয়ে দিতে হয় রেফারি সের্জেই কস্তেভিসকে। কুড়ি মিনিট পরে আবার ম্যাচ শুরু হলেও গ্যালারির ঝামেলার জন্য কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ম্যাচ পরিত্যক্ত করতে হয়। সমর্থকদের ঝামেলা বন্ধ করতে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। প্রায় ৭৮জন সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। যাদের তিন বছরেরও বেশি শাস্তি হতে পারে।
ঘটনার পরেই ইয়ারোস্ল্যাভলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা নিকোলাই ত্রিফোলোভ বলেন, “শিনিক সমর্থকদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। ওদের উষ্কেছিল স্পার্টাক সমর্থরাই।” সমস্যার সমাধানের জন্য শুক্রবারই দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী ভিতালি মুতকোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে রাশিয়ার ফুটবল সংস্থা। |