মৃত হস্তিশাবকের দেহের ময়নাতদন্ত সেরে সবে আগুন লাগানো হয়েছে। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে শাবকের মৃত্যুর শোকে সেই গ্রামে তাণ্ডব চালাল ১৩টি হাতির দল। বুধবার সন্ধ্যায় এমনই ঘটনা ঘটেছে পুরুলিয়ার ঝালদার কিরিবেড়া গ্রামে। গ্রামবাসীদের দাবি, কাছের জলাশয় থেকে শুঁড়ে জল এনে চিতা নেভানোর চেষ্টাও করেছিল হাতিরা। যদিও হস্তি বিশেষজ্ঞরা এমন দাবি বিশ্বাস করতে পারছেন না।
দু’বছরের শাবক-সহ ১৪টি হাতি দিন তিনেক আগে ঝাড়খণ্ড থেকে ঝালদার কলমা বিটের মুড়মা পাহাড়ের জঙ্গলে আসে। মাঝেমধ্যেই তারা ঢুঁ মারছিল আশপাশের গ্রামে। বুধবার সকালে কিরিবেড়া গ্রামে ধানখেতে ওই শিশু হাতিটিকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান বাসিন্দারা। সেখানেই দেহটির ময়নাতদন্ত করে বন দফতর জানিয়েছিল, ফুসফুসের সংক্রমণে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। দেহটি দাহ শুরু করতে সন্ধ্যা নেমে আসে। বনকর্মীরা অনেকেই ফিরে যান। রয়ে যান কিছু গ্রামবাসী। তাঁদের মধ্যে আশারাম মাঝি, একাদশী কর্মকারদের দাবি, “মৃত হাতিটার গায়ে আগুন দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দেখি হাতির পাল আগুনের দিকে দৌড়ে আসছে। আমরা ভয়ে সরে পড়ি।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বাসুদেব মাহাতোর কথায়, “গ্রামের অনেকের কাছে শুনেছি, কাছের একটি জলা থেকে জল নিয়ে এসে হাতিগুলো চিতা নেভানোর চেষ্টা করেছিল।”
হস্তিশাবকটির দেহ অর্ধদগ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে শুনে বৃহস্পতিবার ভোরে ঘটনাস্থলে যান ঝালদার রেঞ্জ অফিসার সমীর বসু। তিনি বলেন, “গিয়ে দেখি চিতার কাঠগুলো ছড়িয়ে রয়েছে। আশপাশের মাটিতেও হাতিদের পায়ের ছাপ ছিল। জায়গাটাও ভিজে ছিল। গ্রামবাসীদের দাবি আপাত ভাবে অবিশ্বাস্য হলেও চিতার চারপাশে যা দেখলাম, তাতে ওদের কথাও ফেলতেও পারছি না।” পরে বনকর্মীরা দিনের আলোয় দেহটি ফের দাহ করার ব্যবস্থা করেন।
যদিও হস্তি বিশেষজ্ঞ ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী বলেন, “মৃত হাতির কাছে হাতির পাল আসতে পারে। তবে হাতিটি দাহ করার সময় আগুনের কাছে বাকি হাতিদের চলে আসার ঘটনা অবিশ্বাস্য। আমার অন্তত এমন অভিজ্ঞতা হয়নি।” প্রোজেক্ট এলিফ্যান্টের ডিরেক্টর এ এন প্রসাদের মতে, “হাতিরা সাধারণত আগুন এড়িয়ে চলে। তবে বাসিন্দারা যা দাবি করছেন, তেমনটা হলে তা ব্যতিক্রমী ঘটনা। আমার এমন অভিজ্ঞতা নেই।” হস্তি বিশেষজ্ঞ গৌতম শইকিয়াও একই মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, “হাতিরা আগুনকে ভয় পায় বলেই মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানো হয়। গ্রামবাসীদের দাবি কতটা গ্রাহ্যযোগ্য তা খতিয়ে দেখা দরকার।” একই মত পুরুলিয়ার ডিএফও ওমপ্রকাশেরও। তবে হাতির দলটির চিৎকার আর দাপাদাপিতে কিরিবেড়ার বাসিন্দারা সেই রাতে দু’চোখ এক করতে পারেননি। দু’টি কাঁচা বাড়ি ও একটি কুয়োর পাড় ভেঙে গ্রামের অনেকখানি ধানখেত নষ্ট করে পালটি। গ্রামে গিয়ে রেঞ্জ অফিসার গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। পুরুলিয়ার ডিএফও বলেন, “হাতিদের দলটিকে ঝাড়খণ্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।” বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফের ওই ঘটনাস্থলে হাতির দল ফিরে আসে। তবে তৈরি ছিলেন বনকর্মীরা। মশাল নিয়ে তাঁরা হাতিগুলিকে ঝাড়খণ্ডের দিকে খেদিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালান।
|