প্রচার-কৌশলে পর্ষদকে টেক্কা বাজি ব্যবসায়ীদের
প্রবেশ-তোরণের সামনে ও পিছনে বাংলা এবং ইংরেজিতে বড় বড় করে লেখা: ‘রাত দশটার পরে শব্দবাজি নয়।’ ময়দানের বাজি বাজারে ‘সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি’ তৈরি করেছে এই তোরণ। ঢোকা ও বেরোনোর সময়ে ক্রেতারা সহজেই পড়ে ফেলতে পারছেন ওই বার্তা।
সেই তোরণ টপকে বাজারে ঢুকে কুঁদঘাটের বাসিন্দা দীপক চন্দ্র একটি আতসবাজির দোকানে গিয়ে বললেন, “আমাকে পাঁচ প্যাকেট চকোলেট বোম, সাত প্যাকেট দোদমা আর দশ প্যাকেট কালীপটকা দিন।” দোকানদার থ! পরে বললেন, “এ সব তো এখানে মিলবে না।” দীপকবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “কেন? আপনাদের তোরণেই লেখা রয়েছে, রাত দশটার আগে শব্দবাজি ফাটানো যাবে। আমি দশটার আগেই ফাটাব।” বাজি ব্যবসায়ী শুধু বললেন, “না না, এ সবের ফয়সালা এখনও হয়নি। আলোর বাজি কিনতে হলে কিনুন। অন্য কিছু এখানে পাবেন না।”
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যতই শব্দবাজি নিষিদ্ধ করে নির্দেশিকা জারি করুক, কলকাতা পুলিশ যতই এ ব্যাপারে নিষিদ্ধ বাজির তালিকা তৈরি করে নির্দেশিকা দিক, শব্দবাজি আটক করতে যতই অভিযান চলুক এ ব্যাপারে জটিলতা তৈরি করে পুরো বিষয়টি ঘেঁটে দিতে সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি যে সফল, এই তোরণই তার প্রমাণ। সাধারণ মানুষেরও অভিযোগ, শব্দবাজি নিয়ে নিয়মটা যে প্রকৃতপক্ষে কী, তা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে।
অথচ, রাজ্য প্রশাসন শব্দবাজির বিরুদ্ধে কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ সচেতনতার প্রচার ও প্রসার অভিযানে নেমেছে। কিন্তু বাজি প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীরা তাদের টেক্কা দিয়ে সফল ভাবে এই ধোঁয়াশা তৈরি করে প্রথম রাউন্ডে তাঁদের যে টেক্কা দিয়েছেন, সেটা দীপকবাবুর মতো ক্রেতাদের মানসিকতা ও বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট।
গত রবিবার রাসবিহারী মোড়ে স্কুলপড়ুয়া থেকে প্রবীণ নাগরিকদের সামিল করে পরিবেশ দফতর শব্দবাজির বিরুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষের মিছিল করেছিল, কিন্তু আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি-র কৌশলী প্রচারের মোকাবিলায় তাদের কিন্তু পাল্টা প্রচার নেই।
শুধু তোরণই নয়, সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি বাজি বিক্রি ও ব্যবহারের ব্যাপারে ১১টি সতর্কবার্তা সংবলিত একটি লিফলেট বাজারে ছড়িয়েছে। সেখানে কিন্তু শব্দবাজি নিষিদ্ধ না অনুমোদিত, এই বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। লিফলেটে শুধু লেখা: ‘এ বছরের ২১ অগস্ট জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আতসবাজি বিক্রয় ও ব্যবহারের জন্য নিয়মাবলী’। কিন্তু মূল প্রশ্ন অর্থাৎ, রাজ্যে ৯০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ-সৃষ্টিকারী বাজি যে নিষিদ্ধ, তা কিন্তু অনুল্লেখিতই থেকে গিয়েছে ওই প্রচারপত্রে।
কেন? সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায়ের বক্তব্য, “রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ৯০ ডেসিবেলকে আতসবাজির শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে যে নির্দেশিকা জারি করেছে, তা আমরা মেনে নিচ্ছি না। এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ থাকছেই। তা ছাড়া, এ ব্যাপারে জাতীয় পরিবেশ আদালতে চূড়ান্ত ফয়সালা হবে শুক্রবার। তাই আমরা এই প্রসঙ্গে কৌশলগত ভাবে কিছুই বলছি না।”
এই কৌশলের কাছেই যেন পিছিয়ে পড়েছে রাজ্য সরকার। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের কর্তাদের অভিমত, পিছিয়ে পড়া এবং এ ব্যাপারে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হওয়ার কারণ আসলে পরিবেশ দফতর ও পর্ষদের দেরিতে নড়েচড়ে বসা। ৩০ অক্টোবর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত বলেন, “আইনি প্রক্রিয়া তাড়াহুড়ো করে হয় না। এ ব্যাপারে সব দিক বুঝেশুনে না এগোলে উল্টে বিপত্তি বাড়ার আশঙ্কা। কাজেই আমরা সেই মতো এগিয়েছি। জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়ে কেন্দ্রীয় দূষণ পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পশ্চিমবঙ্গে আতসবাজির পৃথক শব্দসীমা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। আমরা চার দফায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তার পরে গত ৯ অক্টোবর নির্দেশিকা জারি করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি আদালত অবমাননার যে অভিযোগ জাতীয় পরিবেশ আদালতে করেছিল, তা কিন্তু ইতিমধ্যেই খারিজ হয়ে গিয়েছে।”
পর্ষদের শীর্ষকর্তা আটঘাট বেঁধে নামার জন্য এই দেরি হয়েছে বলে বোঝাতে চাইলেও গত ২১ অগস্ট জাতীয় পরিবেশ আদালত পশ্চিমবঙ্গেও বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবল করে রায় দেওয়ার পরে পর্ষদ ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চুপচাপ বসেছিল। এমনকী, পরিবেশ আদালতের ওই রায় অনুযায়ী রাজ্য যে বিজ্ঞপ্তি ও নির্দেশিকা জারি করবে, সে কথা পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার ও পর্ষদের চেয়ারম্যান দু’জনেই বলেছিলেন। কেবল ১৭ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পরিবেশমন্ত্রী ঘোষণা করেন তাঁরা পরিবেশ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। চিত্রটা তখনই বদলাতে শুরু করে। কিন্তু তত দিনে এক টনেরও বেশি শব্দবাজি (যার দাম পাইকারি দরে ৩০ লক্ষ টাকা) বাজারে ছড়িয়ে যায়। শুধু তাই নয়, আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির অধীনে রাজ্য জুড়ে যে ২৮৪টি সমিতি রয়েছে তাদের মধ্যেও জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায় দ্রুত বিলি করা হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.