নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়ক, জয়ললিতা। বিজেপির এক সময়ের এই ঘনিষ্ঠ সাথীরাই সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গ তুলে বকলমে নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতায় নেমেছেন। প্রাক্তন সঙ্গীদের এমন আচরণে উদ্বিগ্ন বিজেপি নেতৃত্ব এ বার এই নেতাদের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচারে নেমে পড়লেন। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, ক’দিন আগেও ‘সাম্প্রদায়িক’ বিজেপির সঙ্গেই ঘর করেছেন ওই নেতারা।
বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, গত কাল তালকাটোরা স্টেডিয়ামে বামেদের ডাকা মঞ্চে উপস্থিত নেতারা আসলে কংগ্রেসের হাতে তামাক খাচ্ছেন। কংগ্রেস যে ভাবে লোকসভা নির্বাচনকে ‘সাম্প্রদায়িকতা বনাম ধর্মনিরপেক্ষতা’য় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, গত কাল ওই মঞ্চে হাজির নেতারা সেই সুরেই সুর মিলিয়েছেন। তাঁদের ব্যাখ্যা, নীতীশ সদ্য জোট ছেড়েছেন। নবীনও গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই বিজেপির সঙ্গে নেই। ফলে তাঁদের গলায় বিজেপির বিরোধিতা খুব অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যে জয়ললিতা এ যাবৎ মোদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রেখে এসেছেন, তিনিও এই নৌকায় সওয়ার হওয়ায় বিজেপির উদ্বেগ বাড়াটা স্বাভাবিক। তার উপর সম্প্রতি তামিলনাড়ুতে গিয়েও জয়ললিতার দেখা পাননি নরেন্দ্র মোদী। যা বিজেপির উদ্বেগ বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট।
বিজেপির মোদী-পন্থী নেতাদের ব্যাখ্যা, মোদীর বিরুদ্ধে এই সম্মিলিত জোটের চেষ্টা দলের কিছু শীর্ষ নেতার মুখে এখন হাসি ফোটাতেই পারে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে নবীন-নীতীশ-জয়ারা বিজেপি বিরোধিতার সুর চড়ালে ভবিষ্যতে শরিক সংগ্রহে অসুবিধার মুখে পড়তে পারেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “নীতীশ কুমার যে বিজেপিকে ছাড়তে খুব বেশি আগ্রহী ছিলেন, তা নয়। কিন্তু মোদী বিরোধিতার মাত্রা তিনি এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে আর পিছু হঠা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।” গতকাল তালকাটোরা স্টেডিয়ামে যে নেতারা কংগ্রেসের হাত শক্ত করতে মোদী-বিরোধিতায় নামলেন, তাঁরা ভোটের আগে এই বিরোধিতার সুর আরও চড়া করবেন বলেই আশঙ্কা দলের এই অংশের।
এই অবস্থায় আজ দিল্লিতে বিজেপির শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেন। সেখানে নরেন্দ্র মোদী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলিরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করেন। স্থির হয়, অন্তত যে নেতারা কিছু দিন আগেও বিজেপির সঙ্গে জোট করে থেকেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এ বারে পাল্টা প্রচার চালানো হবে।
জেটলি এ দিন বলেন, “যে নেতারা অতীতে বিজেপি সরকারের শরিক ছিলেন, তাঁরাই এখন নতুন অবস্থান নেওয়ার কৌশল নিচ্ছেন! এঁরা কংগ্রেস বিরোধিতার জন্য বিজেপিকে সমর্থন করেন। আর সুযোগ বুঝে ধর্মনিরপেক্ষতার নাম করে বিজেপির বিরোধিতা করেন! সে কারণে এখন কংগ্রেসের দুর্নীতি, অর্থনীতির দুর্দশা, কংগ্রেসের নেতৃত্বের সঙ্কট চোখে পড়ছে না এই নেতাদের!” নবীন-নীতীশরা যখন বিরোধিতার সুর চড়িয়ে অস্বস্তি বাড়াচ্ছেন, তখন দলেরই পরোক্ষ উদ্যোগে এনডিএ-র ভিত শক্ত করার কাজ সারতে মাঠে নেমেছেন ওম প্রকাশ চৌটালা, চন্দ্রবাবু নায়ডুরা।
আগামিকাল হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে বিজেপির দিকে ঝুঁকে থাকা দলগুলিকে নিয়ে একটি সভার আয়োজন করেছেন চৌটালা। কিন্তু বিজেপির উদ্বেগ অন্যত্র। চৌটালার ওই সভায় এনডিএ-র বর্তমান কিছু শরিক ছাড়া খুব বেশি সম্ভাব্য বন্ধুকে ওই সভায় আনা যাচ্ছে না। তা ছাড়া চন্দ্রবাবু, চৌটালাদের অবস্থা নিজের রাজ্যেই খুব মজবুত নয়। ফলে তাঁরা পাশে এলেও জোট হিসেবে এনডিএ কতটা শক্তিশালী হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
এই অবস্থায় এক সময়ের সঙ্গীদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে পাল্টা আক্রমণে যেতে চাইছেন বিজেপি নেতারা। জেটলি আজ বলেন, “এই জোট কোনও ভাবেই দেশে একটি স্থায়ী সরকার দিতে পারবে না। এই নেতারা ২৫-৩০টির বেশি আসন জেতার কথা ভাবতে পারেন না! তার উপর এমন এক জোট, যেখানে বাম থাকলে তৃণমূল থাকবে না। লালু-নীতীশ এক সঙ্গে আসবেন না। করুণানিধি-জয়ললিতা পাশাপাশি আসতে পারেন না। এই অবস্থায় উঠছে প্রশ্ন। রাজ্যে কংগ্রেসের বিরোধিতা করে কেন্দ্রে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোর ভবিষ্যৎ কী?” |