|
|
|
|
ফের পটেল-প্রসঙ্গ, ধর্মনিরপেক্ষতার তাস মোদীর
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কংগ্রেসের পিচে সে দিন বিশেষ সুবিধে করতে পারেননি তিনি। তার ওপর ছিল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ইয়র্কার। কিন্তু আজ প্রতিপক্ষহীন ঘরের মাঠে সপাটে ছক্কা হাঁকাতে চাইলেন নরেন্দ্র মোদী। উপলক্ষ সেই সর্দার বল্লভভাই পটেল। যে কংগ্রেস নেতৃত্ব মোদীর গায়ে সাম্প্রদায়িকতার তকমা সাঁটতে মরিয়া, তাঁদের উদ্দেশ করেই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী অভিযোগ করলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছে কংগ্রেস। সর্দার পটেল কখনও এই ‘ভোটব্যাঙ্কের ধর্মনিরপেক্ষতা’র কথা বলেননি। একই দিনে অবশ্য নাম না করে টিম মোদীকে ফের সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর অভিযোগে বিঁধেছেন মনমোহন ও সনিয়া গাঁধী।
সর্দার পটেলকে ঘিরে দু’দলের দ্বৈরথ সপ্তমে পৌঁছেছিল গত পরশু। সে দিন আমদাবাদে সর্দারের স্মৃতিতে সংগ্রহশালা উদ্বোধনের মঞ্চে একই সঙ্গে হাজির ছিলেন মোদী-মনমোহন। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু ভোটের আগে সেই মঞ্চেই দাঁড়িয়ে পরিবারতন্ত্র নিয়ে নেহরু-গাঁধী পরিবারকে কটাক্ষ করেন মোদী। বলেন, “সর্দার পটেল প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের চেহারাই অন্য রকম হত।” মোদীকে পাল্টা কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সর্দার পটেল কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। জীবনভর ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ নিয়ে চলেছেন। বর্তমান রাজনীতিকদের অনেকের মধ্যেই সে সবের ঘাটতি রয়েছে।”
মনমোহনের কটাক্ষের জবাব সে দিনই দিতে পারেননি মোদী। দিলেন আজ, নর্মদার তীরে কেভাড়িয়ায় সর্দার পটেলের ১৩৯তম জন্মদিনে তাঁর ১৮২ মিটার উঁচু মূর্তি নির্মাণের ভূমিপুজো অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে। বললেন, “সর্দার পটেলকে কোনও একটি দলের সদস্য বললে অবিচার হবে। প্রধানমন্ত্রী ঠিক কথাই বলেছেন। সর্দার পটেল বরাবর ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য সওয়াল করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীজি, সর্দার পটেলের ধর্মনিরপেক্ষতাই দেশের প্রয়োজন, ভোটব্যাঙ্কের ধর্মনিরপেক্ষতা নয়।”
মোদী ব্যাখ্যা দেন, “সর্দার পটেল ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন ঠিকই। কিন্তু সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের পথে তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতা বাধা হয়নি। বরং দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বার্থে সে পথে তিনি এগিয়েছিলেন।” এই প্রসঙ্গে সর্দার সরোবর বাঁধের দরজা নির্মাণে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেও আজ মনমোহনকে কটাক্ষ করেন তিনি।
তবে মুখে মোদী যা-ই বলুন, বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, সর্দারকে নিয়ে সুকৌশলে রাজনীতিই করতে চাইছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। ‘লৌহপুরুষ’ পটেল গুজরাতের ভূমিপুত্র ছিলেন। মোদী চাইছেন সেই ঐতিহ্যের উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে। সেই কারণেই মূর্তি নির্মাণের আয়োজন। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, পটেলের রাজনৈতিক ঐতিহ্য হাইজ্যাক করতে চাইছেন মোদী। জবাবে মোদীর যুক্তি, রাণা প্রতাপ, ছত্রপতি শিবাজি, ভগৎ সিংহ বিজেপি-র সদস্য ছিলেন না। কিন্তু বিজেপি তাঁদের সম্মান করে।
মোদী যে আজ তাঁদের ফের আক্রমণ করবেন, তা কংগ্রেসও আঁচ করেছিল। তাই পাল্টা কামান দাগতে তৈরি ছিল তারাও। আজ দিল্লিতে ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুবার্ষিকীতে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সেই কাজটাই করেছেন সনিয়া-মনমোহন। গত কাল মুজফ্ফরনগরে নতুন করে সংঘর্ষে মৃত্যুর খবর মিলেছে। সে দিকেই আপাত ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের কিছু প্রান্তে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।” আর সনিয়া বলেন, “আমাদের কাছে জাতীয় সংহতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কিছু মতাদর্শ, সংগঠন ও ব্যক্তি আমাদের আলাদা করতে চায়। আমাদের ইন্দিরা গাঁধীর সাহসের কথা মনে রাখা দরকার।”
এ দিকে, গুজরাতে মোদীর অনুষ্ঠানের পরক্ষণেই আজ কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র অজয় মাকেন নাম না করে সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে এক মহিলা সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেন। তিনি জানান, সর্দার পটেল আরএসএস-কে দিয়ে যে মুচলেকা লিখিয়ে নিয়েছিলেন, সঙ্ঘ পরিবার এখন তার খেলাপ করছে বলে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে লিখেছিলেন ওই সাংবাদিক। তার পর থেকে তাঁকে ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আজ কংগ্রেসের তরফে মাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দেকে চিঠি দিয়ে এর তদন্তও দাবি করেছেন। প্রসঙ্গত, গাঁধীজির মৃত্যুর পর সর্দার পটেল আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করেছিলেন। পরে সঙ্ঘ পরিবারকে দিয়ে তিনি মুচলেকা লিখিয়ে নেন যে, আর কখনও তারা রাজনৈতিক কার্যকলাপ করবে না।
বস্তুত, সাংবাদিককে হুমকির অভিযোগ তুলে কংগ্রেস বোঝাতে চাইছে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্রের জন্য সঙ্কট তৈরি হবে। গত কাল সংবাদমাধ্যমকে একই ভাবে সতর্ক করেছিলেন নীতীশ কুমারও। বলেছিলেন, “সাংবাদিক বন্ধুরা জেনে রাখুন, এখন গণতন্ত্র রয়েছে, তাই আপনাদের কলম চলছে। কিন্তু যে দিন গণতন্ত্র থাকবে না, সে দিন কলমও চলবে না।”
আক্রমণের লক্ষ্য যিনি, সেই নরেন্দ্র মোদী অবশ্য সাফ বলছেন, তিনি জনতায় আস্থাশীল। মোদীর আশা, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিকে ক্লিন বোল্ড করবে জনতাই। |
|
|
|
|
|