বিহারে বন্ধু জোটানোই লক্ষ্য
পদ্ম ছেড়ে নীতীশ বাম সভার মধ্যমণি
ছিলেন পদ্ম-সনে, এখন বাম সম্মেলনে!
পটনার গাঁধী ময়দানে গিয়ে যে আগুন ছুড়েছেন নরেন্দ্র মোদী, তা থেকে ঘর বাঁচাতে আজ সটান বামেদের সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী মঞ্চে হাজির হলেন নীতীশ কুমার। শুধু কি আসা! মুহূর্তে যেন নিজের অতীতটাও ভুলে গেলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। এনডিএ-র জন্ম থেকে বিজেপির দোসর তিনি। এমনকী গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার উত্তপ্ত দিনগুলোতেও বাজপেয়ী মন্ত্রিসভা আলো করে থেকেছেন। অথচ সেই নীতীশই আজ কার্যত আক্ষেপ করলেন তাঁর সেই পুরনো দোস্তির। সেই সঙ্গে প্রকাশ কারাটের পাশে দাঁড়িয়ে রীতিমতো জেহাদ ঘোষণা করলেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। মোদীর নাম না করেও বিজেপির বিরুদ্ধে তথাকথিত সব ধর্মনিরপেক্ষ দলকে এককাট্টা হওয়ার ডাক দিলেন।
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আজ দিল্লিতে অকংগ্রেসি-অবিজেপি দলগুলিকে নিয়ে সম্মেলন ডেকেছিল সিপিএম-সহ চার বাম দল। সেই সম্মেলনে নীতীশের উপস্থিতি স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহল জোগায় রাজনৈতিক শিবিরে।
তা হলে কি নয়া কোনও সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছেন রামমনোহর লোহিয়ার এই শিষ্য? নাকি লোকসভা ভোটের আগে কারাটের কাঁধ চওড়া করতে নামলেন বিহারের এই কুর্মি নেতা?
পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পরে স্পষ্ট তাগিদটা নীতীশেরই। ৭২ ঘণ্টা আগেই পটনার গাঁধী ময়দান থেকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রবল হুঙ্কার দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বিস্ফোরণের আশঙ্কা উপেক্ষা করে সেই সভায় বিজেপি সমর্থকদের ভিড় টলিয়ে দিয়েছে নীতীশের গদি। তা দেখেই উৎসাহী মোদী বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পরশু ফের বিহার যাচ্ছেন। এ হেন পরিস্থিতির মোকাবিলায় নীতীশ মোদীকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করছেন ঠিকই, কিন্তু এ-ও বুঝেছেন যে বিহারে তিনি নির্বান্ধব। মোদীর বিরুদ্ধে একা লড়াই করা কঠিন, এ জন্য তাঁর বন্ধু চাই। আজ সেই তাগিদই তাঁকে পটনা থেকে সটান টেনে এনেছে কারাটের পাশে।

পাশাপাশি। বুধবার নয়াদিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামের মঞ্চে নীতীশ কুমার ও মুলায়ম সিংহ। ছবি: পিটিআই।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে নীতীশ আজ বলেন, “যে ভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো হচ্ছে, তাতে দেশ এখন ঘোর বিপদে। এর মোকাবিলায় একজোট হতে হবে সব ধর্মনিরপেক্ষ দলকে।” তাঁর কথায়, “রাজনৈতিক ভাবে সব ধর্মনিরপেক্ষ দল হয়তো সব রাজ্যে একসঙ্গে চলতে পারবে না। কিন্তু যতদূর সম্ভব একসঙ্গে চলতে হবে। চলতেই হবে।”
এই সুরে অবশ্য অন্য বার্তাই শুনছেন রাজনীতিকরা। আসলে বিহারেই বিজেপি-বিরোধী সব শক্তিকে এখন একজোট হতে বলছেন নীতীশ। এমনকী সরাসরি না হলেও কংগ্রেসকে মাঝে রেখে লালুর সঙ্গে বোঝাপড়াতেও এখন তাঁর আপত্তি নেই।
তালকাটোরা স্টেডিয়ামে বামেদের ডাকা ওই সম্মেলনে আজ ভিড় জোটানোর কাজটি করে মুলায়ম সিংহের সমাজবাদী পার্টি। কিন্তু নীতীশও ছিলেন অন্যতম আকর্ষণ। সেই সভায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় বারবার স্পষ্ট হয়ে যায় তাঁর ব্যক্তিগত তাগিদটাই। দেশের সম্প্রীতির পরিবেশ ও ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি থেকে মোদী যে বিচ্ছিন্ন, সেটাই তুলে ধরতে সচেষ্ট হন নীতীশ। তাঁর কথায়, “এই সম্মেলনে ১৭টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। প্রত্যেকের মতাদর্শ ভিন্ন। কিন্তু সেই বিভেদের মাঝেও একটা মিল রয়েছে। তা ধর্মনিরপেক্ষতার। এই সম্প্রীতিই বেঁধে রেখেছে দেশকে। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন, মেরুকরণের রাজনীতি থেকে তাঁদের সুবিধা হবে। তাই ভোটের আগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিষ ছড়িয়ে দিতে চান সমাজে।” পটনা বিস্ফোরণের জন্যও পরোক্ষে বিজেপি-কেই আজ দায়ী করেন নীতীশ। বলেন, “সাম্প্রদায়িকতা আর সন্ত্রাসবাদ আলাদা কিছু নয়। এরা একে অপরকে সার-জল দেয়। লোকসভা ভোটের আগে যে ভাবে বিভাজনের রাজনীতি করা হচ্ছে, তার জন্যই বিস্ফোরণ হয়েছে পটনায়।”
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা দেওয়ার আগে সীতারাম ইয়েচুরি তাঁর নাম ঘোষণা করে বলেন, “এখন যে নেতা বক্তৃতা দেবেন, তিনি নিজেই ফায়ারিং লাইনে রয়েছেন!” তার পরেই বলতে উঠে নীতীশ বলেন, “ফায়ারিং লাইনে রয়েছি ঠিকই, কিন্তু আমরা এমনই কঠিন পাথর যে গুলি ঠিকরে ওদের দিকেই ফিরে যাবে।” দিল্লিতে এসে প্রথমে দলের একটি অনুষ্ঠানেও মোদীকে সরাসরি নিশানা করেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “কেউ কেউ দিবাস্বপ্নেই বিভোর হয়ে রয়েছেন। কোনও দিন লাল কেল্লায় পৌঁছতে পারবেন কি না সন্দেহ, কিন্তু নিজের প্রত্যেক সভা-মঞ্চের পেছনে নকল লাল কেল্লা খাড়া করে রাখছেন। এমনই তাঁদের গদির মোহ।”
বামেদের সম্মেলন থেকে আজ সোজা নর্থ ব্লকে চলে যান নীতীশ। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সঙ্গে দেখা করে পটনা বিস্ফোরণের তদন্ত ভার এনআইএ-কে দেওয়ার জন্য আর্জি জানান। তার পর দেখা করেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গেও। সাংবাদিকদের পরে তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া রাজ্য হিসেবে বিহারকে বিশেষ প্যাকেজ দেওয়ার যে দাবি তিনি জানাচ্ছেন, সেই সূত্রেই আজ চিদম্বরমের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই বৈঠকের নেপথ্যেও অন্য অর্থ খুঁজছেন। তাঁদের মতে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়তে এখন মরিয়া নীতীশ। কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া করে চলার রহস্য সেটাই। তা ছাড়া বামেদের মঞ্চে দাঁড়িয়েও মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে নীতীশ যে ভাবে চুপ থেকেছেন, তাতেও অঙ্কটা পরিষ্কার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.