মিলিত মঞ্চেও ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’ এড়ালেন কারাট
এক অন্য প্রকাশ কারাট। যিনি এখন বাড়তি ঝুঁকি নিতে নারাজ। যিনি এখন হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের মতো ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’-এর সরকার গঠনের কারিগর হওয়ার স্বপ্ন দেখেন না। যিনি এখন নিজের দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই বেশি আগ্রহী।
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মায়াবতীকে প্রধানমন্ত্রী করে তৃতীয় ফ্রন্টের সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন কারাট। ২০১৪-র ভোটের আগে সেই কারাটই তৃতীয় ফ্রন্টের কথা বলতে নারাজ। সে তাঁর পাশে স্বয়ং মুলায়ম সিংহ যাদব এবং নীতীশ কুমার কিংবা নবীন পট্টনায়ক বা জয়ললিতার দলের প্রতিনিধিরা এসে দাঁড়ালেও না।
নরেন্দ্র মোদীকে বিজেপি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার পরেই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। সুযোগ বুঝে এগিয়ে আসেন মুলায়ম-নীতীশরা। নামে অরাজনৈতিক মঞ্চ হলেও আজ দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে সেই মঞ্চে ১৭টি রাজনৈতিক দল এসে যোগ দিয়েছে। মুলায়ম, নীতীশ, দেবগৌড়ারা নিজে ছিলেন। নবীন, জয়ললিতা প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। বাদ যায়নি ইউপিএ শরিক এনসিপি-ও। স্বাভাবিক ভাবেই নতুন তৃতীয় ফ্রন্টের সম্ভাবনা মাথাচাড়া দিয়েছে। এখনই সেই ফ্রন্ট গড়া হোক-না হোক, তার প্রয়োজনীয়তার কথা কেউই অস্বীকার করেননি। কিন্তু যাঁর হাতে সম্মেলনের সলতে পাকানো শুরু, সেই কারাট নিজে এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
কেন এই পরিবর্তন? সিপিএমের নেতারা বলছেন, কারাট এ বার অনেক বেশি সাবধানী।
, পাঁচ বছর আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি তিনি আর চান না। মায়াবতীকে সামনে রেখে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের জন্য তাঁকে দলের মধ্যে এবং পার্টি কংগ্রেসে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। ভুল স্বীকারও করতে হয়েছিল। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের পরেই ২০১৫ সালে ফের পার্টি কংগ্রেস। বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া সেখানেই সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন কারাট। কারণ, সাধারণ সম্পাদক পদের মেয়াদ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কাজেই নিজের জমানার শেষ পর্যায়ে ‘অ্যাডভেঞ্চার’ করতে গিয়ে দলের প্রশ্নের মুখে পড়তে চান না তিনি।

মধ্যমণি প্রকাশ কারাট। সঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরি, এইচ ডি দেবগৌড়া, এ বি বর্ধন, নীতীশ কুমার,
মুলায়ম সিংহ, শরদ যাদব প্রমুখ। বুধবার নয়াদিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামের মঞ্চে। ছবি: পিটিআই।
, সিপিএমের শেষ পার্টি কংগ্রেসের দলিলে আঞ্চলিক দলগুলিকে ‘সুবিধাবাদী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। তাই তাদের সঙ্গে মিলে যেন-তেন-প্রকারে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা না করে নীতির ভিত্তিতে তৃতীয় বিকল্প তৈরির কথা বলা হয়। এখন সেই দলগুলিকেই নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা করলে কারাটের বিরুদ্ধে পার্টি লাইনের উল্টো পথে হাঁটার অভিযোগ উঠতে পারে। তা ছাড়া, আগামী দিনেও মুলায়ম-দেবগৌড়ারা তাঁর পাশেই থাকবেন, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। তৃতীয়ত এবং সর্বোপরি, কারাট উপলব্ধি করেছেন, এখন দলের শক্তি কম। পশ্চিমবঙ্গে দলের অবস্থা এমনই যে, লোকসভা ভোটে আসন সংখ্যার বিশেষ উন্নতির সম্ভাবনা নেই। শক্তি না থাকলে শেষ পর্যন্ত কোনও দলই যে পাশে থাকবে না, তা-ও কারাটের অজানা নয়।
বস্তুত, শক্তির প্রসঙ্গ তুলেই আজ সিপিএম-কে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। তাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেছেন, “সিপিএম তো পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতে অপ্রাসঙ্গিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। তাই দিল্লিতে সম্মেলন করে গুরুত্ব ফিরে পেতে চাইছে।” তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওদের এক নেতা বলেছিলেন, ‘হেলে ধরতে পারে না, কেউটে ধরতে গিয়েছে!’ এটাও তা-ই।”
পরিস্থিতি বুঝেই কারাট আজ সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সম্মেলনে শুধুই মোদী-আরএসএস-কে তোপ দেগেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, কেন লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে? কার হাত রয়েছে এর পিছনে? নীতীশ-মুলায়মরা সরাসরি মোদীর নাম না নিলেও কারাট কিন্তু মোদীর নাম করেই আক্রমণ করেছেন। তৃতীয় ফ্রন্টের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া আজ নিজের সরকারের জনমুখী নীতির গুণগান গেয়েছেন। প্রয়াত জ্যোতি বসুর স্মৃতিচারণ করেছেন। কিন্তু তা শুনেও সে দিনের সুরজিৎ হওয়ার কথা স্বপ্ন দেখেননি কারাট। সমাজবাদী পার্টির সমর্থকেরা মুলায়মকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চেয়ে স্লোগান দিয়েছেন। কিন্তু কারাট বাস্তববাদীর মতো বলেছেন, “এই ১৭টি দলের নীতি ও ভাবনা পৃথক। তা সত্ত্বেও শুধু সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে তারা একজোট।” তবে আখেরে এই সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মঞ্চ কংগ্রেসকেই ফায়দা দেবে বলে মেনে নিচ্ছেন সিপিএম নেতারা। সীতারাম ইয়েচুরির যেমন বিশ্বাস, এই পথে কংগ্রেসের সাহায্য না নিয়ে উপায় নেই। প্রয়োজনে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে কংগ্রেসকে ফের সমর্থন দিতে হবে। এবং কারাটও এখন নিজের কট্টর কংগ্রেস বিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসে সেই যুক্তি মেনে নিয়েছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.