|
|
|
|
এনডিএ প্রসারে বিজেপির ভরসা চৌটালা-চন্দ্রবাবু
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লোকসভা ভোটে বা তার পরে কে কোন দিকে থাকবেন, কেউ জানে না। তবে প্রকাশ কারাটদের ডাকে সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী মঞ্চে অনেক নেতাই জড়ো হয়েছিলেন আজ। মুলায়ম সিংহ যাদব, নীতীশ কুমার, দেবগৌড়া, তাঁদেরই কয়েক জন। ছিলেন শরদ পওয়ার, নবীন পট্টনায়ক ও জয়ললিতার প্রতিনিধিরাও। অথচ ভবিষ্যতে এনডিএ-র শক্তি বাড়াতে এঁদেরই অনেকের দিকে তাকিয়ে বিজেপি। তাই সমর্থনের পরিধি বাড়ানোর পথ খোলা রাখছে বিজেপি-ও। লোকসভা ভোটের জন্য নরেন্দ্র মোদীই তাদের মুখ। কিন্তু জোট-বিস্তারের পথ খোলা রাখতে ওমপ্রকাশ চৌটালা, চন্দ্রবাবু নায়ডুর মতো এনডিএ-র সম্ভাব্য শরিককে এ কাজে এগিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে বিজেপি।
আজ যাঁরা দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে একত্রিত হলেন, ভবিষ্যতে তাঁদেরই অনেকে যে কংগ্রেসের হাত ধরবেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই বিজেপি-র। রাজনাথ সিংহদের কাছে এটাও স্পষ্ট, যে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সরব হয়ে আসলে মোদীর বিরুদ্ধেই একজোট হওয়ার বিকল্প পথ খোলা রাখতে চাইছেন এই নেতারা। সে কারণেই মোদীকে দূরে রেখে জোট-বিস্তারের বিকল্প পথ খোলা রাখছে বিজেপি। চৌটালার উদ্যোগে হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে একটি জনসভার আয়োজন করা হচ্ছে। অ-কংগ্রেসি আঞ্চলিক দলগুলিকে ডাকা হচ্ছে সেখানে। সভার দিনটিও রাজনৈতিক দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, ১ নভেম্বর। চৌটালার বাবা চৌধুরি দেবীলালের জন্মদিন। দেশের জোট রাজনীতিতে এক সময় বিশেষ গুরুত্ব পেতেন তাউজি (জ্যাঠামশাই) হিসেবে পরিচিত এই নেতা। ছিলেন জরুরি অবস্থার ঘোর বিরোধী। জোট রাজনীতির পথ ধরে হয়েছিলেন দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীও। তা-ও এক বার নয়, দু’বার।
সেই তাউজির জন্মদিনে ডাকা সভায় কাদের থাকার সম্ভাবনা?
অবশ্যই থাকবে এনডিএ-র শরিক অকালি দল। আসছেন সম্প্রতি মোদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডু। এনডিএ-র পুরনো শরিক প্রফুল্ল মহন্তকেও আনার চেষ্টা চলছে। হরিয়ানার গুড়গাঁওয়ে সদ্য কংগ্রেস ছাড়া সাংসদ রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহও পৌঁছে যেতে পারেন এই সভায়। হরিয়ানায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বেআইনি ভূমিকার কারণে দশ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে চৌটালার। গ্রেফতার হয়ে তিনি এখন রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বন্দি অবস্থাতেই এই সভার ডাক দিয়েছেন তিনি। কারাবাসের আগেই বিজেপি নেতাদের সঙ্গে চৌটালা ও চন্দ্রবাবু নায়ডুর গোপন বৈঠক হয়েছিল। কথা হয়েছে মোদীর সঙ্গেও। ভবিষ্যতে এনডিএ-তে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন দু’জনে। দেশের আঞ্চলিক দলগুলিকে যখন নানা ভাবে একজোট করার চেষ্টা করছে, সেই সময় এনডিএ-র বিস্তারের লক্ষ্যে এই নেতারাই ঝাঁপাতে চলেছেন।
বিজেপি নেতারা অবশ্য প্রকাশ্যে দাবি করছেন, চৌটালার সভার সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় তাঁরা কবুল করছেন, মোদীর নামে এখনও অনেক দল প্রকাশ্যে বিজেপি-র হাত ধরতে চাইছে না। সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী মঞ্চের মাধ্যমে যে তৃতীয় ফ্রন্টের চেষ্টা করছেন কিছু নেতা, তাঁদের অনেকেই পরোক্ষে কংগ্রেসের হাত শক্ত করছেন। কারণ, আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদী যতই উন্নয়নের প্রসঙ্গকে সামনে রাখার চেষ্টা করুন না কেন, কংগ্রেসই একে সাম্প্রদায়িক বনাম ধর্মনিরপেক্ষদের লড়াই হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। তালকাটোরা স্টেডিয়ামে আজ তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে।
এই অবস্থায় এনডিএ-র বিস্তারের জমি তৈরি করে রাখতে হচ্ছে বিজেপি-কেও। তাদের অঙ্কটা স্পষ্ট। মোদীর নেতৃত্বে দল যদি দু’শোর বেশি আসন নিয়ে আসতে পারে, তা হলে অনেক দলই আপনা থেকেই এনডিএর শরিক হবে। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “দলের সদর দফতর অশোকা রোডে তখন লাইন পড়ে যাবে দলগুলির। কংগ্রেস যতই নির্বাচনকে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার লাইনে নিয়ে যেতে চাক, মোদী দুশোর বেশি আসন আনতে পারলে তিনিই রাতারাতি সাম্প্রদায়িক নেতা থেকে ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যাবেন।” বিজেপি যদি দু’শোর চেয়ে কম আসন পায় ও শরিকদের নিয়ে সরকার গড়ার মতো অবস্থায় পৌঁছয়, তখন কী হবে? সেই অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে রাজনাথ সিংহদের। নতুন শরিক পাওয়া গেলেও তারা বিজেপি-র নেতা বদলের জন্য চাপ দিতে পারে। সরকার গড়ার পথ খুলতে দলের ভিতর থেকেও সেই দাবি ফের জোরালো হয়ে উঠতে পারে।
বিজেপি নেতারা তাই পিছনে থেকে আপাতত বিশ্বস্ত ও সম্ভাব্য শরিকদেরই এনডিএ প্রসারের কাজে ব্যবহার করতে চাইছেন। দলের প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গডকড়ী সম্প্রতি জর্জ ফার্নান্ডেজের সহযোগীদেরও একত্রিত করেছেন। তাঁরাও আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে কথা বলবেন। যাতে এখন না হোক, ভোটের পর এই দলগুলি এনডিএ-র সঙ্গে আসে।
বিজেপি-র এক নেতার কথায়, “কংগ্রেস ও বিজেপি-কে বাদ দিয়ে কোনও সরকারই গঠন করা সম্ভব নয়। দেখার বিষয় এদের কার কাছে কত সংখ্যা আসছে। সবটাই অঙ্কের খেলা। তাই সব রকম পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যই প্রস্তুত হচ্ছি আমরা।” |
|
|
|
|
|