|
|
|
|
ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ থেকে বাসে আগুন, অন্ধ্রে মৃত ৪৫
সংবাদ সংস্থা • মেহবুবনগর |
গ্রামের বাতাসে শুধু আর্তনাদ আর কান্নার শব্দ। টিভি থেকে তত ক্ষণে অনেকেই জেনে ফেলেছেন তাঁদের স্বজন আর বেঁচে নেই। ঘুমের মধ্যেই পুড়ে খাক সবাই।
আজ ভোরে হায়দরাবাদ থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে পালেমের কাছে একটি ভলভো বাসের তেলের ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণের জেরে আগুন লেগে যায়। ৫০ জন যাত্রীর মধ্যে আগুনের গ্রাসে আধ ঘণ্টায় পুড়ে ছাই ৪৫ জন। তার মধ্যে রয়েছে একটি শিশুকন্যাও। কোনও মতে প্রাণে বেঁচেছেন পাঁচ জন যাত্রী এবং চালক ও তার সহযোগী। বেঙ্গালুরু থেকে বাসটি আসছিল হায়দরাবাদে।
অনেকেই কাজের জায়গা থেকে পরিবারের সঙ্গে দীপাবলির ছুটি কাটাতে হায়দরাবাদে ফিরছিলেন। তাঁদের অপেক্ষায় থাকা পরিবারের লোকজন মর্মান্তিক এই ঘটনার কথা জানার পরেই ছুটে যান পালেমে। সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে মৃতদেহ বলতেও সে ভাবে কিছু আর নেই। রয়েছে শুধু অবশেষ। তা থেকেই চলছে শনাক্তকরণের কাজ।
|
জ্বলছে বাস। বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ ন্যাশনাল হাইওয়েতে। |
কী হয়েছিল বুধবার ভোরে?
হায়দরাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি ভি নবীন চন্দ জানিয়েছেন, “বেঙ্গালুরু থেকে বাসটি রওনা দিয়েছিল মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ। বুধবার ভোর পাঁচটা বেজে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ ন্যাশনাল হাইওয়েতে (এনএইচ ৪৪) দুর্ঘটনাটি ঘটে। হায়দরাবাদগামী বাসটির চালক একটি গাড়িকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল। এই সময়ে পালেমের কাছে একটি কালভার্টের উপরের রেলিংয়ে বাসের পিছনে ডান দিকে তেলের ট্যাঙ্কের ধাক্কা লাগে। কয়েক সেকেন্ডে আগুন ধরে যায় ট্যাঙ্কে। তার পরেই বিস্ফোরণ। এর পরেই লেলিহান শিখা গিলে ফেলে বাসটিকে।”
ঘটনাস্থলে দেখা যায় বাসের কাঠামোটা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুলিশের দাবি, মৃতদেহের অবশেষ থেকে প্রাথমিক ভাবে কিছুই চেনার উপায় নেই। তাই বলা যায়নি কত জন পুরুষ আর কত জন মহিলা যাত্রী ছিলেন। চার জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। প্রথম দিকে এই নিয়ে একেবারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন যাত্রীদের আত্মীয়রা। কাঁদতে কাঁদতেই অনেকে ছুটে গিয়ে এক একটি দেহের অবশেষ থেকে সোনার গয়না, জামাকাপড় খুঁটিয়ে দেখছিলেন। এই ভাবেও শনাক্ত করা হয় দু’জনকে। এক আত্মীয় বলেছেন, “টিভিতে খবরটা শুনেই ছুটলাম ঘটনাস্থলে। আমার শালা বেদপতি অভিশপ্ত বাসে ছিল। দীপাবলিতে আমাদের সঙ্গে ছুটি কাটাবে বলে আসছিল। কিন্তু ওর দেহ চিনতে পারিনি।”
চালক ফিরোজ পাশা এবং তার সহযোগী আয়াজ আপৎকালীন জানলা দিয়ে বেরিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন। দগ্ধ অবস্থায় তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই জানলার কাচ ভেঙেই বেরোতে পেরেছিলেন আর এক যাত্রী। হাসপাতালে শুয়ে যিনি বলেন, “বাসে যখন আগুন লেগেছে আমরা সবাই ঘুমোচ্ছিলাম। টের পাওয়ার পরে পাশের জানলা খুলে বেরোতে চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি। তার পরে দৌড়োই আপৎকালীন জানলার দিকে। সৌভাগ্যক্রমে কাচটা ভাঙতে পেরেছিলাম। সেখান থেকে বাইরে ঝাঁপ। আর কিছু মনে নেই।” পুলিশ জানায়, বাসের সামনে
ছিল একটিই দরজা। আর আপৎকালীন জানলা অনেকেই ব্যবহার করতে পারেননি কারণ, জানলার বিশাল
কাচ ভাঙার হাতুড়িটাই সেখানে রাখা ছিল না। |
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃতের স্বজন। হায়দরাবাদে। |
মেহবুবনগরের জেলা কালেক্টর গিরিজা শঙ্কর এবং জেলা এসপি জি নগেন্দ্র কুমার জানিয়েছেন, আত্মীয়দের ডিএনএ পরীক্ষা এবং রক্তের নমুনা নিয়ে মৃতদের শনাক্ত করা হবে। তার পরে দেহাবশেষ তুলে দেওয়া হবে পরিজনদের হাতে। বাসের একেবারে সামনে জমে ছিল মৃতদেহের স্তূপ। পুলিশ জানিয়েছে, সবাই সামনের দরজা খুলে বেরোনোর হয়তো আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। সেখান থেকে মৃতদেহ বার করতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। দরজা কেটে বার করা হয় সেই দেহাবশেষ। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু আধপোড়া সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং-এর বই। যা থেকে পরে পুলিশ জেনেছে, আইবিএম এবং গুগল-এর পাঁচ জন কর্মী ছিলেন ওই বাসে। তার মধ্যে এক জন মহিলা।
বেঙ্গালুরুর বেসরকারি সংস্থা জব্বার ট্র্যাভেলসের ওই ভলভো বাসটির চলার উপযুক্ত সার্টিফিকেট রয়েছে ২০১৪ সালের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত। পারমিটের বৈধতা রয়েছে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। তাই প্রযুক্তিগত কোনও ত্রুটি বাসটিতে নেই বলেই ধারণা পুলিশের। তাদের মতে, চালক ওভারটেক করার চেষ্টা করায় অতিরিক্ত গতিই ডেকে আনে বিপদ।
অনলাইন বুকিং-এর তালিকা থেকে ৩৩ জন যাত্রীর নাম পেয়েছে পুলিশ। বাকিরা মাঝ পথে উঠেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। শনাক্তকরণে আরও কয়েক দিন লেগে যাবে মত ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এই ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন।
|
ছবি: এ এফ পি। |
|
|
|
|
|