জঙ্গিঘাঁটি ছড়িয়েছে ঝাড়খণ্ডে, এটিএস চায় পুলিশ
ঠাকুর্দা ছিলেন পুলিশ অফিসার। ছোটবেলা থেকে ভাল ছাত্র ছিল সে। কিন্তু, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দ্বারভাঙায় যাওয়ার পরই পাল্টে গেল সব কিছু। পুলিশ সূত্রের খবর, ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ শীর্ষনেতা ইয়াসিন ভটকলের সঙ্গে সেখানেই পরিচয় হয় তেহসিন আখতারের। বদলে যায় জীবনের লক্ষ্য।
অনেকটা একই রকম এরশাদ আহমেদের কাহিনি। পূর্ব চম্পারণের বাসিন্দা রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের ছাত্র ছিল। পড়াশোনার জন্য রাঁচিতে গিয়েছিল। ‘কোচিং সেন্টার’ খুলে বসে। তখনই আলাপ হয় ইমতিয়াজ আনসারির সঙ্গে। জঙ্গি সংগঠনে নাম লেখায় এরশাদও। চাকরি পাওয়ার নাম করে ১০-১১ মাস আগে রাঁচি ছেড়ে মোতিহারিতে ফিরে যায়।
তেহসিন আখতার
তেহসিনের খোঁজ না-পেলেও বুধবার গ্রেফতার করা হয় এরশাদকে। জেরায় পটনা পুলিশকে সে জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের রামগড় জেলায় গোপনে মুজাহিদিন গোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ শিবির চলত। যেখানে হাজির থাকত সে-ও। মেধাবী ছাত্রদের এই পরিণতিতে হতবাক গোয়েন্দারাও। শুধুমাত্র টাকার জন্য, না কি অন্য কোনও প্রলোভনে তারা এ পথে এগিয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
সন্ত্রাসের ‘শিকড়’ যে এ ভাবেই ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জেলায় যুবসমাজের মধ্যে ছড়িয়েছে, পটনা বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে তা ভালভাবে বুঝতে পারছে রাজ্য পুলিশ। মাওবাদীরা আগে থেকেই ছিল, এ বার জেহাদি জঙ্গি সমস্যার দিকে তাকিয়ে ‘অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড’ (এটিএস) চাইছে প্রশাসন।
রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব কুমার বলেন, “রাজ্যে জঙ্গি কার্যকলাপ ঠেকাতে পুলিশি নজরদারি রয়েছে ঠিকই। তবে এ বার শুধুমাত্র জঙ্গি-সমস্যার মোকাবিলায় এটিএস তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে।” পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, মনজর ইমাম কিংবা দানেশদের মতো জঙ্গিরা এ রাজ্যের বাসিন্দা ছিল ঠিকই। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করা হয় অন্য রাজ্যে নাশকতার কোনও ঘটনায়। পটনায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পর পুলিশের ধারণা---ইয়াসিন ভটকল, তেহসিনদের মতো জঙ্গিরা ঝাড়খণ্ডকে সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণ-কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছিল। রাজ্য পুলিশের এক প্রাক্তন পুলিশকর্তার কথায়, “এ রাজ্যের পুলিশ বেশির ভাগ সময়েই মাওবাদী সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মৌলবাদী জঙ্গিরাও যে এখানে ঘাঁটি গড়ছে, তা তারা বুঝতে পারেনি। জঙ্গিরা সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে।”
মঙ্গলবার রাতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে রাঁচির বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায় এনআইএ। রাঁচির ডোরান্ডা থেকে উজ্জয়ের আহমেদ নামে এক যুবককে আজ গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি,২০১২ সালের একটি বিস্ফোরণের মামলায় সে জড়িত ছিল। পটনা বিস্ফোরণ-কাণ্ডেও তার যোগাযোগ রয়েছে। জঙ্গিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিত সে। আদালতের অনুমতিতে তিন দিনের ‘ট্রানজিট রিমান্ডে’ পুলিশ তাকে পটনা নিয়ে গিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত এক বছরের মধ্যে দু’বার রাঁচি গিয়েছিল তেহসিন। জেরায় এমনই জানিয়েছে ইমতিয়াজ আনসারি। হায়দরাবাদের দিলখুশনগরে বিস্ফোরণ-কাণ্ডে জড়িত অভিযোগে অন্ধ্র পুলিশ তেহসিনের খোঁজ শুরু করেছিল। মোবাইল ফোনের টাওয়ার ‘লোকেশন’ ধরে তাকে রাঁচি পর্যন্ত ধাওয়াও করা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পালায় তেহসিন। পটনায় হামলার আগেও সে রাঁচি ঘুরে গিয়েছিল বলে ইমতিয়াজ পুলিশকে জানিয়েছে। পূর্ব চম্পারণের কল্যাণপুরের আলৌলা গ্রামের বাসিন্দা এরশাদও জানিয়েছে, তার সঙ্গে তেহসিনের যথেষ্টই ঘনিষ্ঠতা ছিল। সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণও তাকে দিয়েছে তেহসিন। রাঁচিতে থাকাকালীন ইমতিয়াজের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারপর একে একে তার সঙ্গে আলাপ হয় হায়দর, এনুলের।
এ দিকে, তেহসিনের কাকা, জেডিউ নেতা তকি আখতারের পাশে দাঁড়িয়েছে দল। আজ দলের শীর্ষ নেতা ও জলসম্পদ মন্ত্রী বিজয়কুমার চৌধুরী এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান, পুলিশ একাধিক বার আখতার-পরিবারকে জেরা করছে। কিন্তু ২০১০ সালের বকরি ঈদের সময়ে বাড়ি এসেছিল তেহসিন। তার পর থেকে পরিবারের সঙ্গে সে আর কোনও যোগাযোগ রাখেনি। পুলিশও মোবাইলের রেকর্ড ঘেঁটে দেখেছে, তকি বা পরিবারের অন্য কারও সঙ্গে গত দু’বছরে তেহসিনের কোনও কথাবার্তা হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার পটনা জংশনে বিস্ফোরণে গুরুতর জখম এনুলের পরিস্থিতি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার মাথায় বোমার স্পিলন্টার ঢুকে গিয়েছে। হুঁশও ফেরেনি। এই পরিস্থিতিতে অস্ত্রোপচার করাও তা-ই সম্ভব হচ্ছে না।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.