|
|
|
|
বিকল্পের মঞ্চে পা হড়কে ক্ষিতি ফেললেন কারাটকেও
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রথম যে দিন বিমান বসু তাঁকে তালকাটোরা স্টেডিয়ামে হাজির থাকতে অনুরোধ করেছিলেন, তাঁর আপত্তি ছিল। বারংবার অনুরোধ এবং দলে আলোচনার পরে শেষ পর্যন্ত রাজধানীর ট্রেন ধরেছিলেন।
ভরা তালকাটোরায় সেই ক্ষিতি গোস্বামীই এলেন, দেখলেন এবং পড়লেন! ভূ-পতনে সঙ্গে নিলেন প্রকাশ কারাটকেও!
প্রথম জন ৭০। দ্বিতীয় জন ৬৫। বাম ও আঞ্চলিক দলগুলির আয়োজনে সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী সম্মেলনের শুরুতেই দুই প্রৌঢ়ের আচমকা পদস্খলন আজ রাজনীতিতে চর্চার বিষয় হয়ে থাকল! যা ঘটেছে, নেহাতই দুর্ঘটনা। তবু প্রতিবার লোকসভা ভোটের আগে তৃতীয় বিকল্প গড়তে সচেষ্ট বামেদের জন্য আজকের পতনের দৃশ্য প্রতীকী কি না, সরস চর্চায় এল সেই প্রসঙ্গও!
ঘড়ির কাঁটা তখন বেলা দু’টো ছুঁইছুঁই। সম্মেলনের মঞ্চের মধ্যেই আরও একটি উঁচু মঞ্চে নেতাদের বসার জায়গা। তার ধারে দাঁড়িয়েই ভিড় মাপছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক কারাট। আরএসপি নেতা ক্ষিতিবাবু কিছু একটা বলতে গিয়ে হঠাৎই পা ফস্কালেন (পরে বলেছেন, শতরঞ্চির নীচে শেষ সিঁড়িটা বুঝতে ভুল হয়েছিল)। পড়ে যেতে যেতে বড় শরিকের শীর্ষ নেতার হাত ধরেই পতন রোখার চেষ্টা করেছিলেন ক্ষিতিবাবু। কিন্তু ফল হল উল্টো। আচমকা শরিকি হাতের টানে টাল সামলাতে না-পেরে মঞ্চের উঁচু থেকে নিচু ধাপে দড়াম করে পড়ে গেলেন কারাটও! |
পপাত চ
বিপত্তি শুরুতেই। পা ফস্কে মঞ্চ থেকে পড়ে গেলেন আরএসপি নেতা ক্ষিতি গোস্বামী।
তাঁর হাতের টানে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও। উদ্বিগ্ন সকলেই। তবে কারাটের
মুখের হাসি তখনও অটুট। বুধবার নয়াদিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে। ছবি: পিটিআই।
|
পড়ে গিয়েও বড় শরিকের দায়িত্ব পালন করতে ভোলেননি কারাট। উঠে অগ্রজ ক্ষিতিবাবুর দিকে প্রথম হাতটা বাড়িয়েছেন! আর ক্ষিতিবাবু যথেষ্ট লজ্জাই পেয়েছেন! পরে অবশ্য দু’জনেই বক্তৃতা করেছেন। বাম-বিরোধী শিবির থেকে কটাক্ষ ভেসে বেড়িয়েছে, এতগুলো প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার দলের ভারেই কি ভেঙে পড়লেন কারাটরা!
কমিউনিস্টরা বাস্তু মানেন না। জ্যোতিষ মানেন না। তাই একে ‘অশুভ সঙ্কেত’ বলে মানতে কেউই রাজি নন। দুই প্রবীণ নেতার চোট লেগেছে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছিল প্রথমে। ওই ভাবে মঞ্চ বাঁধা যে ঠিক হয়নি, তা নিয়েও আলোচনা চলেছে। শুরুর এই ছন্দপতন সত্ত্বেও দিনের শেষে অবশ্য উচ্ছ্বসিতই দেখিয়েছে বাম নেতৃত্বকে।
কারণ? পশ্চিমবঙ্গ ও জাতীয় স্তরে কোণঠাসা সিপিএম সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে মঞ্চ তৈরি করে ১৭টা দলকে জড়ো করে অন্তত কিছুটা গা-ঝাড়া দিতে পারল বলে মনে করছেন নেতারা। তৃতীয় বিকল্পের সম্ভাবনা উস্কে রোজকার লড়াইটাকে রাহুল গাঁধী বনাম নরেন্দ্র মোদী থেকে বের করে ফের কিছুটা প্রচারের আলো কাড়তে পারলেন তাঁরা। যদিও এ দিন ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’ শব্দবন্ধটা মুখে আনেননি সাবধানী কারাট। ফলে সাংগঠনিক স্তরে কিছুটা চাঙ্গা হওয়ার বার্তা যাবে বলে আশাবাদী সিপিএম নেতৃত্ব।
কারাট-পতনের মঞ্চ আর এক অদৃশ্য লড়াইয়েরও সাক্ষী রইল মুলায়ম সিংহ বনাম নীতীশ কুমার। মুলায়ম চেয়েছিলেন, মুজফ্ফরনগরের দাঙ্গার দায় বিজেপি-আরএসএসের কাঁধে চাপিয়ে অখিলেশ-সরকারের ব্যর্থতা ধামাচাপা দিতে। আর বিজেপি-র সঙ্গত্যাগী নীতীশ নিজের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি প্রমাণে মরিয়া ছিলেন। তৃতীয় বিকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হওয়ার অদৃশ্য লড়াইটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে! নীতীশ নিজের বক্তৃতায় মুলায়মের বদলে বামেদের গুরুত্ব দেন। একই কাজ করেন মুলায়মও!
উত্তরপ্রদেশ থেকে গাড়ি ভর্তি করে সমর্থক নিয়ে এসে তালকাটোরা স্টেডিয়াম ভরিয়ে তোলেন মুলায়মই। তাঁর বক্তৃতার পরেই ফাঁকা হতে শুরু করেছে স্টেডিয়াম। আর নীতীশ ছিলেন ‘তারকা আকর্ষণ’! কারাট-ইয়েচুরি ছাড়া সিপিএমের পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটির কেউই সামনের সারিতে ছিলেন না। মঞ্চে ছিলেন বিজেডি-র জয় পণ্ডা, জয়ললিতার দলের থাম্বিদুরাই, কিছু দিন আগে পর্যন্তও বিজেপি-র সঙ্গী অগপ-র প্রফুল্ল মহন্ত। ইউপিএ-র শরিক এনসিপি-র নেতা ডি পি ত্রিপাঠীর উপস্থিতি নিয়েই সব চেয়ে বেশি চাঞ্চল্য হয়েছে। ত্রিপাঠী অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা ইউপিএ-তে থেকেই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সকলকে একজোট করতে চান। আজকের সম্মেলনকে ‘অরাজনৈতিক মঞ্চ’ প্রমাণ করতে সভাপতি করা হয় ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবকে। ফলে, কোনও দলেরই অসুবিধা হয়নি।
সিপিএম নেতারা অবশ্য জানেন, এই সব আঞ্চলিক দলের নেতারা আজ বামেদের মঞ্চে এলেও কাল মমতা বা অন্য কারও মঞ্চে যাবেন না, তার কোনও ঠিক নেই। তবু ভবিষ্যতের এ সব জল্পনাকে আজ অন্তত ছাপিয়ে গিয়েছে ক্ষিতি-কারাটের পতনের ছবিই। আরএসপি-র এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “পতন নিয়ে এত হইচইয়ের কী আছে! আমরা পড়ে না গেলে যেন তৃতীয় বিকল্প রাতারাতি উঠে দাঁড়াত! সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী একটা মঞ্চে সকলে একজোট হয়ে একটা বার্তা দিল। এর থেকে নির্বাচনী সমঝোতা তো বহু দূরের রাস্তা!” |
পুরনো খবর: তৃতীয় ফ্রন্টের লক্ষ্যেও মমতার লড়াই সেই সিপিএমের সঙ্গেই |
|
|
|
|
|