বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে জাল নোট পাচার চক্রের এক চাঁইকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। মহম্মদ আলি নামে ওই ব্যক্তিকে জেরার পরে এসটিএফ গোয়েন্দাদের ধারণা, সে পটনার সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (আইবি), জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এবং বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এসটিএফ।
ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ইয়াসিন ভটকল নাম ভাঁড়িয়ে এসটিএফ-কে ধোঁকা দিয়েছিল। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে ইয়াসিনকে জাল নোট-সহ গ্রেফতার করেছিল এসটিএফ। কিন্তু তার আসল পরিচয় মেলেনি। ফলে কিছু দিন জেল খেটে সে বেরিয়ে যায়। পুণেতে জার্মান বেকারি বিস্ফোরণের পরে জানা যায়, ওই জাল নোটের কারবারিই আদতে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ইয়াসিন ভটকল। চলতি বছরেই ইয়াসিনের সঙ্গী আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করার পর গোয়েন্দারা জানতে পারেন, এই রাজ্য থেকে বিস্ফোরক নিয়ে গিয়েছিল ভটকলই। তাই এ দিন ধরা পড়া মহম্মদ আলিকে নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় এসটিএফ।
এসটিএফ জানিয়েছে, ধৃত মহম্মদ আলির বাড়ি বিহারের মজফ্ফরপুরে। বৃহস্পতিবার কলকাতার ময়দান এলাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার জাল নোট-সহ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে দুবাইয়ের একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স-সহ বেশ কিছু পরিচয়পত্র মিলেছে। তার মধ্যে কয়েকটি জাল হতে পারে বলেও গোয়েন্দাদের সন্দেহ। তার কাছ একটি পাসপোর্টও উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। তিন দিন আগে শহরে এসেছিল মহম্মদ আলি। শহরের একটি অতিথিশালায় আশ্রয় নিয়েছিল সে। কেন সে কলকাতা এসেছিল এবং জাল টাকার সঙ্গে অন্য সব
নথি সে কেন নিয়ে এসেছিল, তার কোনও সদুত্তর এ দিন রাত পর্যন্ত পাননি গোয়েন্দারা।
রবিবার পটনার গাঁধী ময়দানে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ হয়। নিহত হয়েছিলেন ছ’জন। সেই ঘটনায় ঝাড়খণ্ড ও বিহার থেকে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের চার জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার রাতে বিহারের মজফ্ফরপুর থেকে গ্রেফতার হয়েছে আর এক জঙ্গি। মহম্মদ আলিও মজফ্ফরপুরের বাসিন্দা হওয়ায় পটনা বিস্ফোরণের সঙ্গে তার যোগসূত্রের কথা বেশি করে ভাবাচ্ছে।
মহম্মদ আলিকে গ্রেফতার করার পরে কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এ বারে আর কোনও ভুল করতে চাই না আমরা। তাই মহম্মদ আলির ব্যাপারে সব কিছু খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।”
কলকাতার সঙ্গে অবশ্য ভিন্ রাজ্যের বিস্ফোরণে নাম জড়ানো এই প্রথম নয়। মুম্বই হামলার পরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন, কাসভদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনের সিম কার্ডের বেশ কয়েকটি কলকাতার একটি দোকান থেকে কেনা হয়েছিল। তার আগে ২০০৭ সালে হায়দরাবাদে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের অন্যতম অভিযুক্ত বিলালকে গ্রেফতার করা হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থেকে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ২০১১ সালে দিল্লিতে গ্রেফতার হওয়া দ্বারভাঙা মডিউলের সদস্য কাতিল আহমেদ সিদ্দিকিও এক সময় পার্ক সার্কাসে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। এ ছাড়াও, লস্করের বোমা বিশেষজ্ঞ আব্দুল করিম তুন্ডার শ্বশুর মহম্মদ জ্যাকারিয়া ও তুন্ডার শাগরেদ আলাউদ্দিন নামে আর এক জঙ্গিকেও গ্রেফতার করাহয়েছিল এ রাজ্য থেকেই।
|