বাম জমানা থেকেই তাঁরা ছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলে। কিন্তু এ বার কাউন্সিল থেকে বাদ পড়েছেন বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ, ইতিহাসবিদ মুশিরুল হাসান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস-সহ পাঁচ বিশিষ্ট শিক্ষক। এত দিন পরে কেন তাঁদের ছেঁটে ফেলা হল, প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষাজগতে। এতে অসৌজন্যও দেখছেন অনেকে।
প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের ন’জনই আপাতত কাউন্সিলের মনোনীত সদস্য। বাদ পড়া পাঁচ জন মেন্টর গ্রুপে নেই। কাউন্সিল থেকে তাঁদের সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কেন, উত্তর নেই প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষের কাছে। আর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন যে, মেন্টর গ্রুপ আর কাউন্সিলের সদস্যেরা একই হবেন, যাতে সমস্যা না-হয়। তাঁর সেই ঘোষণা অনুসারেই এই সংশোধন।”
প্রেসিডেন্সির কাউন্সিলের সদস্যেরা মনোনীত হন বাম সরকারের আমলে। পালাবদলের পরে নতুন সরকার এসে প্রেসিডেন্সির জন্য মেন্টর গ্রুপ গড়ে, সেই সঙ্গে বাম আমলে গড়া কাউন্সিলও পুনর্গঠন করে। তখনই বাদ পড়েন অমিয় বাগচী, প্রদীপনারায়ণ ঘোষের মতো কয়েক জন। তবে তৃণমূল সরকার মুশিরুল, সুরঞ্জনবাবু, বিকাশবাবু-সহ এই পাঁচ জনকে রেখে দিয়েছিল নয়া কাউন্সিলে। সেই জন্যই প্রশ্ন উঠছে, এখন তাঁদের বাদ দেওয়ার কারণ কী?
উপাচার্য মালবিকা সরকারের বক্তব্য, ওঁদের মধ্যে বিকাশবাবু ছাড়া বাকিরা নিয়মিত বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারতেন না। তাই ওঁরা না-থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চালাতে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৫৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী কাউন্সিল গঠিত হয় বাম আমলে। সেখানে বলা হয়েছিল, কাউন্সিলে কমপক্ষে ১০ জন এবং সর্বাধিক ১৫ জন সদস্য থাকবেন। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের মনোনীত করবেন আচার্য-রাজ্যপাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সরকার মনোনীত সদস্যেরা ছাড়াও বিকাশবাবু, সুরঞ্জনবাবু, মুশিরুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র তৎকালীন চেয়ারম্যান এইচ এ রঙ্গনাথ এবং বিহার কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জনক পাণ্ডেকে রাখা হয় ওই কাউন্সিলে।
গত জুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ আইন কার্যকর হওয়ার আগে শুধু মেন্টর গ্রুপের সদস্যেরাই কাউন্সিলে মনোনীত সদস্য হিসেবে থাকবেন। প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি তৈরির কাজ চলছে। তা কার্যকর হবে জানুয়ারির মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন তখনই পুরোদস্তুর বলবৎ হবে। তার পরে গড়া হবে পূর্ণাঙ্গ গভর্নিং বোর্ড। তার সদস্য-সংখ্যা অনেকটাই বেশি হবে। আপাতত কাউন্সিলে শুধু মেন্টর গ্রুপের সদস্যেরাই থাকছেন।
পূর্ণাঙ্গ বোর্ড গঠিত হওয়ার আগে এই বদলের দরকার ছিল কি? মালবিকাদেবী বলেন, “সেটা আমার জানা নেই। জুলাই-অগস্ট নাগাদ পরিবর্তিত আইন আমাদের হাতে আসে। তার পরে ওই পাঁচ জনের কাছে চিঠি পাঠাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ওঁদের অবদানের জন্য ধন্যবাদও জানিয়েছি।”
চিঠি যে তাঁরা পেয়েছেন, বাদ পড়া শিক্ষাবিদেরা তা স্বীকার করছেন। কিন্তু ক্ষোভও গোপন করছেন না তাঁরা। বিকাশবাবু বলেন, “সমাজে তো আমাদের একটা প্রতিষ্ঠা আছে। এ ভাবে আমাদের বার করে দেওয়া কি ঠিক! মেন্টর গ্রুপের বেশির ভাগ সদস্যই বাইরে থাকেন। এ ভাবে আচমকা একটা কাউন্সিলের গঠন বদলে ফেলার কথা আমি অন্তত কখনও শুনিনি।” কাউন্সিল থেকে হঠাৎ বাদ পড়ায় বিস্মিত অন্য এক শিক্ষাবিদ বলেন, “এমন যে হতে পারে, আগে বুঝতে পারিনি!”
সরকার অবশ্য এতে অস্বাভাবিকতা দেখছে না। উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “নতুন সরকার আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেন্টর গ্রুপ গড়েন। তিনিই জানিয়েছিলেন, মেন্টর গ্রুপের সদস্যেরাই কাউন্সিলে থাকবেন। কিন্তু বাম আমলে তৈরি আইনে সেই সংস্থান ছিল না। তাই আইন সংশোধন করা হয়েছে। কাউন্সিল থেকে ওই শিক্ষকদের বাদ দেওয়া মানে তাঁদের অপমান করা নয়।”
|