প্রবীণের বিদায়ী ব্যাটন সফল নবীনের হাতে
ধোনির ভারত ব্যাকরণ গড়ছে
অস্ট্রেলিয়া: ৩৫০-৬ (৫০ ওভারে)
ভারত: ৩৫১-৪ (৪৯.৩ ওভারে)
খুব বেশি পুরনো দিনের কথা নয়। বড়জোর বছর এগারো-বারো। আমি তখন ভারতীয় দলে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে একটা ওয়ান ডে ম্যাচে রিভার্স সুইপ মেরে আউট হওয়ায় কোচ জন রাইট বকাঝকা করেছিলেন। কেন অত ঝুঁকিপূর্ণ শট মারতে গেলাম!
আর বুধবার নাগপুরে ম্যাক্সওয়েল ক্রিজে এসে প্রথম দু’টো বলই রিভার্স সুইপে বাউন্ডারিতে পাঠাল!
মাত্র এক দশকের মধ্যেই কী আকাশ-পাতাল তফাত ঘটে গিয়েছে সীমিত ওভারের ব্যাটিংয়ে! সচিন তেন্ডুলকরের অবসরের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসাটা যেমন বেদনাদায়ক কিন্তু কঠিন বাস্তব। তেমনই ওয়ান ডে ক্রিকেটে এখন সাড়ে তিনশো তুলেও নিশ্চিন্ত থাকতে না পারা এবং একই সিরিজে দু’-দু’বার সেই বিশাল টার্গেট বিপক্ষের টপকে যাওয়াটাও বাস্তব।
এবং এককালের অভাবনীয় ব্যাপারটাকে যারা প্রায় বলে-বলে বাস্তব করে তুলেছে সেই ধোনির ভারতের ব্যাটিং লাইন আপের মতো টি-টোয়েন্টি মানসিকতার ব্যাটিং এই মুহূর্তে আর কোনও দেশের নেই। ধবন-রোহিত ওপেনিং জুটি থেকে কোহলি-রায়না-যুবরাজের মিডল অর্ডার। ডেথে ধোনি-জাডেজার মতো ফিনিশার। একেবারে ডিজাইনার ব্যাটিং লাইন আপ।
সেই ব্যাটিং যে একই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার দু’দুটো অবিশ্বাস্য রানের টার্গেট (জয়পুরে দ্বিতীয় ওয়ান ডে-তে ৩৫৯ আর এ দিন নাগপুরে ষষ্ঠ ম্যাচে ৩৫০) টপকে গেল তাতে আমি খুব বেশি অবাক নই।
রাতে ভারতকে জিতিয়ে
কোহলির অসি-যুদ্ধ
টি-টোয়েন্টি
রাজকোট ২২ বলে ২৯।
কেরিয়ারের ওয়ান ডে
১১৮ ম্যাচে ৪৯১৯ রান। সর্বোচ্চ ১৮৩। গড় ৫২.৩২।
স্ট্রাইক রেট ৮৮.৫৩। সেঞ্চুরি ১৭।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে
নাগপুর ৬৬ বলে ১১৫ ন.আ., মোহালি ৭৩ বলে ৬৮,
জয়পুর ৫২ বলে ১০০ ন.আ, পুণে ৮৫ বলে ৬১।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চার ওয়ান ডে-তে কোহলি ৩৪৪ রান,
গড় ১৭২, স্ট্রাইকরেট ১২৪.৬৩।
টি-টোয়েন্টির যুগে এখন ওয়ান ডে-তে ২৭০-২৮০ অ্যাভারেজ স্কোর। বাংলাদেশ, জিম্বাবোয়েও তুলছে। ২০ রান করে ‘সেট’ হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যান বল প্রতি রান না করতে পারলে ধরা হচ্ছে, সে নিজের টিমকে হারিয়ে দিয়েছে। তিনশো রান এখনকার ওয়ান ডে-তে ভাল রান। সওয়া তিনশো বেশ ভাল রান। ৩৪০-৩৫০ নিরাপদ স্কোর। কিন্তু ধোনির ভারতের সৌজন্যে এখন দেখা যাচ্ছে তা-ও নয়।
এর পিছনে অনেকগুলো কারণ। তার মধ্যে আমার মতে আসল হল, এখনকার প্লেয়ারদের টি-টোয়েন্টি মানসিকতা। আর সেই মানসিকতার ব্যাটসম্যানের সংখ্যা ভারতীয় দলে বেশি বলে অস্ট্রেলিয়ার ৩৫০ তুলেও এ দিন সিরিজ জেতা হল না। উল্টে ভারত ছ’উইকেটে জিতে সিরিজে শুধু ২-২ সমতাই ফেরাল না, বেঙ্গালুরুতে চূড়ান্ত যুদ্ধে এই মুহূর্তে অ্যাডভান্টেজ টিম ইন্ডিয়া-ই।
দুনিয়া জুড়ে এখন ওয়ান ডে মানে বেশির ভাগ ম্যাচেই রানের মহোৎসব। তার মধ্যেও চলতি ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে প্রতিটা ম্যাচেই যে রকম ঝুড়িঝুড়ি রান উঠছে সেটা অবশ্যই আলাদা ভাবে বিবেচ্য। বিশেষ করে যখন উপমহাদেশের পিচে ধারাবাহিক ভাবে এত বিশাল স্কোর আগে উঠতে দেখা যায়নি। কিন্তু এই সিরিজে উঠছে তার কারণ
) ওয়ান ডে-র নতুন নিয়মে পাওয়ারপ্লে বেড়ে ২০ ওভারে দাঁড়িয়েছে। যখন সার্কেলের বাইরে মাত্র দু’জন ফিল্ডার থাকে।
) বাকি ৩০ ওভারেও সার্কেলের বাইরে সারাক্ষণ সর্বাধিক চার জন ফিল্ডার। সার্কেলে থাকা ফিল্ডারকে ‘বিট’ করলেই হল। দশ বারের মধ্যে ন’বার বাউন্ডারি নিশ্চিত। আউটফিল্ডে ‘কভার’ দেওয়ার প্রায় কেউই নেই।
) দু’দিক দিয়ে সারাক্ষণ দুটো নতুন বল ব্যবহার। ফলে পুরো ইনিংসেই বলটা শক্ত থাকছে। ব্যাটসম্যানের বড় শট খেলতে বাড়তি সুবিধে।
) আগে পুরো ইনিংসে একটাই বল ব্যবহারের সময় উপমহাদেশের পিচে ৩০ ওভারের পর বল আর পিচের ধূসর রং একই হয়ে যেত। স্পিনাররা টার্ন পেত। ব্যাটসম্যানদের আটকানো সম্ভব হত। এখন দু’দিক দিয়ে দু’টো বল ব্যবহার হওয়ায় বল পুরনো হয় না। যে জন্য স্পিনাররা সে রকম টার্ন পাচ্ছে না।
তিনশোর শৃঙ্গ জয়

নাগপুরে সেঞ্চুরির পরে।

শিখর আর রোহিত মঞ্চটা গড়ে দিয়েছিল। তার পরেও বড় রান তাড়া করতে গিয়ে শট মারার ঝুঁকি নিয়েছি। আত্মবিশ্বাস ছিল অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডারদের মাথার উপর দিয়ে বলটা ওড়াতে পারব। ছক কষেই ঝুঁকি নিয়েছি। আমি ফ্লাডলাইটে ব্যাট করতে ভালবাসি। স্কোরবোর্ডে একটা লক্ষ্য থাকলে তাড়া করতে দারুণ লাগে। বেঙ্গালুরুতে নামার জন্য তর সইছে না। ওখানেও দারুণ ব্যাটিং উইকেট।
তালিকায় সেরা পাঁচ
জয়পুর ২০১৩। অস্ট্রেলিয়া ৩৫৯-৫। ভারত ৩৬২-১। ম্যাচের সেরা রোহিত শর্মা।
নাগপুর ২০১৩। অস্ট্রেলিয়া ৩৫০-৬। ভারত ৩৫১-৪। ম্যাচের সেরা বিরাট কোহলি।
ঢাকা ২০১২। পাকিস্তান ৩২৯-৬। ভারত ৩৩০-৪। ম্যাচের সেরা বিরাট কোহলি।
লন্ডন ২০০২। ইংল্যান্ড ৩২৫-৫। ভারত ৩২৬-৮। ম্যাচের সেরা মহম্মদ কাইফ।
আমদাবাদ ২০০২। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩২৪-৪। ভারত ৩২৫-৫। ম্যাচের সেরা ক্রিস গেইল।
তার উপর বছরের এই সময় টার্নিং ট্র্যাক করলে মরসুমের শেষের দিকে উইকেট আন্ডারপ্রিপেয়ার্ড হয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিসিসিআইয়ের কিউরেটররা এই সিরিজে সে রকম টার্নিং পিচ বানানোর ঝুঁকি নেয়নি। ফলে ঘরের মাঠে ভারতীয়রা তো বটেই, অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানরাও বহু দিন পর উপমহাদেশের উইকেটেও রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। একদম পাটা উইকেটে দু’দলের বোলারদেরই অতিসাধারণ দেখাচ্ছে।
এ সবের নিটফল, অজি অধিনায়ক জর্জ বেইলির ১১৪ বলে ১৫৬ (১৩X৪, ৬X৬)। শেন ওয়াটসনের ৯৪ বলে ১০২। যার জবাবে বিরাট কোহলির ৬৬ বলে ১১৫ নটআউট (স্ট্রাইকরেট প্রায় ১৭৫!) শিখর ধবনের ১০২ বলে ১০০। আর বল হাতে কখনও অমিত মিশ্রের (১০ ওভারে ০-৭৮), কখনও মিচেল জনসন (১০ ওভারে ২-৭২) কিংবা জেমস ফকনারের (৯.৩ ওভারে ১-৭৩) মাথা খুঁড়ে মরা!
এত কিছুর পরেও অবশ্য কোহলির কথা আলাদা করে বলতেই হবে। জয়পুরে যখন ৫২ বলে সেঞ্চুরি করেছিল, বলাবলি হচ্ছিল ‘ওয়ান্স ইন আ লাইফটাইম ইনিংস’। কিন্তু দু’সপ্তাহের মধ্যেই যে ছেলে ফের ওই রকম ‘ওয়ান্স ইন আ...’ (এ দিন ১০০-এ পৌঁছয় বোধহয় ৬১ বলে) ইনিংস খেলতে পারে, তাকে বলতেই হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতের ব্যাটসম্যান। সচিনের বিদায়বেলায় তার মহাব্যাটন যোগ্য লোকের হাতেই এসে পড়েছে!

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.