লিটল মাস্টারের সঙ্গে তাঁর যে এমন অদ্ভুত যোগসূত্রের খোঁজ পাওয়া যাবে, বুধবারের আগে কেউ জানত?
তিনি মানে ধবল কুলকার্নি। লাহলির সবুজ পিচে সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে যিনি বুধবার সকালে পড়ে থাকলেন ঘণ্টা দেড়েক, মহামূল্যবান ষোলোটা রান করলেন, জয়ের কভার ড্রাইভটাও বেরোল তাঁর ব্যাট থেকে এবং শেষ পর্যন্ত এমন এক আশ্চর্য তথ্যের সম্মুখীন হয়ে পড়লেন যা তিনি বহু দিন পর্যন্ত জানতেন না!
সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের যে দিন ওয়াংখেড়েতে গুজরাতের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয়েছিল, সে দিন মুম্বইয়ে জন্ম হয়েছিল এক শিশুর। যে ক্রিকেটে হাতেখড়ির দিন থেকে স্বপ্ন দেখত, ঘরোয়া ক্রিকেটে জাতীয় মহানায়কের শেষ দিনে তাঁর উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকার। যাতে ইতিহাস সচিনের সঙ্গে তাঁকেও মনে রাখে।
সে দিনের ওই শিশু আজকের ধবল কুলকার্নি! জন্ম ১০ ডিসেম্বর, ১৯৮৮। ঠিক যে দিন ঘরোয়া ক্রিকেটে ‘জন্ম’ হয়েছিল সচিন রমেশ তেন্ডুলকর নামের এক ঝাঁকড়া চুলের কিশোরের।
দুপুর তিনটে নাগাদ যে ধবল কুলকার্নিকে ধরা গেল, তাঁর গলা এই তথ্য জানার পর আবেগতাড়িত শোনায়। একে তো সচিনের সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধের রেশ এখনও কাটেনি। তার মধ্যে এমন যোগসূত্রের খোঁজ। “অনেক দিন আমি এটা জানতাম না। পরে আমাকে এক জন বলেছিল। কী বলব, বলুন? ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম সচিন পাজির সঙ্গে কোনও এক দিন রঞ্জি ম্যাচ খেলব। যেটা ওঁর হয়তো অবসর ম্যাচ হবে। কিন্তু কখনও এটা খেয়াল হয়নি যে, আমার জন্মের দিনটার সঙ্গে ওঁর ক্রিকেট শুরুর দিনটাও মিলে যাবে,” আনন্দবাজারকে বলছিলেন ধবল।
|
মাস্টারক্লাস বিদায়ী রঞ্জি শেষে হরিয়ানা ড্রেসিংরুমে। ছবি টুইটার। |
সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “আজকের পর লোকে বোধহয় সচিনের সঙ্গে আমাকেও মনে রাখবে। বলবে যে, এই ছেলেটা সচিনের শেষ রঞ্জি ট্রফি ম্যাচে ক্রিজে উল্টো দিকে ছিল। ম্যাচটা সচিনের সঙ্গে বের করেছিল। আমিও আমার উত্তরসূরিদের বলতে পারব যে, লাহলির ওই ষোলোটা রান আমার জীবনের সেরা। যে কোনও সেঞ্চুরির চেয়ে লক্ষ গুণ দামি। কারণ, ওই ষোলোটা রান আমি করেছি সচিন পাজির শেষ রঞ্জি ইনিংসে। করেছি সেই লোকটার সঙ্গে যার ক্রিকেট শুরুর দিনটার সঙ্গে আমার জন্মের দিনটা মেলে। এর পর যত দিন বাঁচব লোককে কথাটা গর্ব করে বলতে পারব।”
শুধু নিজের ষোলোটা রান নয়, বিদায়লগ্নে তাঁকে দেওয়া লিটল মাস্টারের টিপসগুলোও কোনও দিন ভুলতে পারবেন না ধবল। বলছিলেন, “কাল যখন আমি নেমেছিলাম, ওরা বাউন্সার দেওয়া শুরু করল। দু’একটা গায়েও খেলাম। সচিন পাজি এগিয়ে এসে তখন আমাকে বললেন, তু সির্ফ বল কো দেখ। বলটা দ্যাখ। এ রকম বাউন্সার গায়ে খেতেই হতে পারে। শুধু ঘাবড়ে যাস না।”
আর বুধবার সকালে মনে মনে কী ঠিক করেছিলেন ধবল? আজও তো দরকার ছিল প্রায় চল্লিশ রান, একটা উইকেট তখন চলে যাওয়ার অর্থ ছিল বাকি ব্যাটিং লাইন আপে থরহরিকম্পের আশঙ্কা? ধবল বলে দিলেন, “আমি শুধু একটা জিনিসই ঠিক করেছিলাম। কোনও ভাবেই আউট হব না। সেটা পারলে বাকিটা হয়ে যাবে। সচিন পাজি আছেন। আজ যখন ব্যাট করছিলাম, মাঝে মাঝে প্রবল আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমার যত বয়স তত দিন ধরে এই লোকটা দেশের জন্য খেলেছে। এখনও খেলছে। এখনও টিমকে টানছে। ম্যাচ জেতাচ্ছে। মনে হচ্ছিল, আজ যদি আমি পাজির ইনিংসকে মর্যাদা দিতে না পারি, তা হলে আর কবে দেব? সত্যি বলতে গেলে, আউট হলে নিজেকে আজ ক্ষমা করতে পারতাম না।” |