পঞ্চায়েতের পর পুরভোটেও দলীয় কোন্দল তাড়া করে বেড়াচ্ছে তৃণমূলকে। পরিস্থিতি এমনই যে মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়কের পাড়ায় ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলেরই ওয়ার্ড সভাপতি! কেন এমন পরিস্থিতি? বিধায়ক মৃগেন মাইতি বলছেন, “কারও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে থাকতেই পারে। তবে, দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এলাকার মানুষ তৃণমূলের পাশেই রয়েছেন। এ বারও তৃণমূল প্রার্থী বিপুল ভোটে জিতবে।”
শুধু বিধায়কের পাড়া নয়, বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে এ বার নির্দল প্রার্থীরা তৃণমূলের জয়ের পথে কাঁটা হতে পারেন। মনোনয়ন-চিত্র থেকে তেমনই ইঙ্গিত মিলছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের ৬৭টি আসনে তৃণমূলের মনোনয়ন জমা পড়েছিল ৩৯৪টি। অর্থাৎ, আসনপিছু গড়ে ৬টি করে। পঞ্চায়েত সমিতির ৭৯৮টি আসনে মনোনয়ন জমা পড়ে ছিল ২৩৭২টি। আসনপিছু গড়ে ৩টি করে। গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৮৪৬টি আসনে মনোনয়ন পড়েছিল ১০,০৯০টি। আসনপিছু গড়ে ৩টি করে। আর মেদিনীপুর পুরভোটে ২৫টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের মনোনয়ন জমা পড়েছে ১৪৮টি। অর্থাৎ, ওয়ার্ডপিছু গড়ে ৫টি করে।
দলের টিকিট না পেয়ে তৃণমূলের অনেকেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। প্রার্থী নিয়ে ঝাড়াই-বাছাই শুরু হতে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে আসে। এই পরিস্থিতিতে সব ওয়ার্ডের প্রার্থীর নাম একদফায় প্রকাশও করতে পারেনি তৃণমূল। প্রথমে ২৩টি ওয়ার্ডে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়, পরে বাকি ২টি ওয়ার্ডে। কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে তৃণমূল বিধায়কের পাড়াতেও। মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেনবাবু শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। গতবার এই এলাকা থেকে জেতেন তৃণমূলের দেবী চক্রবর্তী। দেবীদেবী পুরপ্রধান-পারিষদ ছিলেন। তাঁর দায়িত্বে ছিল পূর্ত দফতর। গত বছর পথ দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। দলীয় সূত্রে খবর, ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বেশ কয়েকজন প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। শেষমেশ শীর্ষ নেতৃত্ব জানান, প্রার্থী হবেন দেবীদেবীর ছেলে নির্মাল্য চক্রবর্তী। সেই মতো নির্মাল্য মনোনয়নও দাখিল করেছেন। একই সঙ্গে নির্দল হিসেবে মনোনয়ন দমা গিয়েছেন তৃণমূলের ২ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি অসীম ধর। অসীমবাবু বলেন, “অন্য যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা এলাকার উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। দেবীদি মারা যাওয়ার পর আমি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ছিলাম। সমস্ত রকম উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করেছি। সেই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতেই প্রার্থী হয়েছি।”
২ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার ৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। আপনার পাড়ায় ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলেরই ওয়ার্ড সভাপতি। এটা কী দলকে অস্বস্তি দিচ্ছে না? জবাবে মেদিনীপুরের বিধায়ক বলেন, “মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে রয়েছেন। প্রার্থী ঠিক করার ক্ষেত্রে রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। রাজ্য নেতৃত্ব চেয়েছেন বলেই দেবী চক্রবর্তীর ছেলে প্রার্থী হয়েছে।” প্রসঙ্গত, অসীমবাবুর ডানা কিছুটা ছাঁটা হয়েছে। ওই ওয়ার্ডের কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে মনোরঞ্জন দে-কে। শহর তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, অসীমবাবু ঠিকমতো কাজ করছিলেন না। তাই এই সিদ্ধান্ত।
কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে অন্যত্রও। যেমন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী শিপ্রা মণ্ডলের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছেন সীমা পানিগ্রাহী। শিপ্রাদেবী এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর। আর সীমাদেবী তৃণমূল নেতা শিবু পানিগ্রাহীর স্ত্রী। শিবুবাবু বলেন, “আমরা দলেরই কর্মী। আমাদের লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে।” ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী করেছে জিতেন্দ্রনাথ দাসকে। এখানেও নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা উত্তম রায়।
তবে নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে ভাবছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের শহর সভাপতি সুকুমার পড়্যা বলেন, “নির্দলরা ফ্যাক্টর নন। মানুষ দলের পাশে রয়েছেন। এ বার একক ভাবে পুরসভা দখল করবে তৃণমূল।” |