|
|
|
|
ঝাড়গ্রামে পুরভোট |
কোন্দল মিটিয়ে শেষ দিন তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
লক্ষ্য একটাই! যে ভাবেই হোক ২১ বর্গ কিলোমিটার অরণ্য-শহরের ক্ষমতা দখল করতে হবে। দলনেত্রীর এই অমোঘ নির্দেশের ফলে গত কয়েক দিনের গোষ্ঠী কাজিয়ার আপাত যবনিকাপাত ঘটল। মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে দলের ‘স্বীকৃত’ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করল তৃণমূল। এ দিনই ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এ দিন বিকেলে মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক তথা পুরসভার রিটার্নিং অফিসার এস অরুণ প্রসাদের হাতে প্রার্থীর নামের তালিকা তুলে দেন। পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে সুকুমারবাবু বলেন, “১৮টি ওয়ার্ডে সর্বসম্মত ভাবে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ ভিত্তিহীন। দলনেত্রীর নির্দেশই চূড়ান্ত।”
কেন মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হল, সেই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন জেলার শীর্ষ নেতারা। সুকুমারবাবুর অবশ্য দাবি, “আমাদের প্রার্থী তালিকা তৈরি ছিল বলেই তো এ দিন রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিলাম।” অন্দরের খবর, প্রার্থী বাছাই ঘিরে তৃণমূলের ভিতরে গোষ্ঠী কোন্দল এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে অনেক ওয়ার্ডেই অশনি সংকেত দেখতে শুরু করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। অভিযোগ, যাঁরা দীর্ঘদিন খেটে দলের সংগঠন গড়েছেন, তাঁদেরই টিকিট দেওয়া হয়নি। খোদ মন্ত্রী সুকুমারবাবুর আপ্ত সহায়ক দশরথ হেমব্রমকে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে মুকুল রায় শিবিরের হস্তক্ষেপে দশরথকে নাকচ করে দিয়ে পুরসভার বিরোধী দলনেতা আনন্দমোহন পণ্ডাকে টিকিট দেওয়া হয়। সোমবারই আনন্দমোহনবাবু ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। মঙ্গলবার ফের তিনি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন দাখিল করেন। এ হেন আকচা-আকচির জেরে দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ রীতিমতো বিরক্ত। ১০ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের দু’জন গোঁজ প্রার্থীও দাঁড়িয়ে পড়েছেন। তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা চলছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। |
মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ চলছে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
বস্তুতপক্ষে ঝাড়গ্রাম পুরভোট ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে এক ধরনের অস্বস্তিও কাজ করছে। দলীয় সূত্রের খবর, টানা তিন দশক ধরে বামেদের দখলে থাকা ঝাড়গ্রামকে এবার বর্ধমান বানানোর নিদান দিয়েছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সেপ্টেম্বরে জঙ্গলমহল সফরে এসে মমতা বন্দোপাধ্যায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের মাধ্যমে দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বকে সাফ জানিয়ে দেন, ঝাড়গ্রামকে বর্ধমান বানাতে হবে। ১৮টি ওয়ার্ডের সব ক’টিতে ঘাসফুল ফোটাতে হবে। এ জন্য যোগ্য প্রার্থীর পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন দলীয় কর্মীদের একাংশ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়গ্রামকে বর্ধমান বানানোটা কঠিন বলেই মানছেন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ।
বুধবার বিকেল তিনটায় ঝাড়গ্রাম ডিএম হলে তৃণমূলের এক কর্মী সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে একতার বার্তা দিতে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ১৮ জন প্রার্থীও হাজির থাকবেন।
মমতার নির্দেশে গত ৯ অক্টোবর মেদিনীপুরে মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতিতে ঝাড়গ্রাম পুর নির্বাচন বিষয়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে রাখা হয় ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, দলের ঝাড়গ্রাম শহর সভাপতি প্রশান্ত রায়, শহরের প্রভাবশালী নেতা তথা জেলা সাধারণ সম্পাদক দুর্গেশ মল্লদেব-সহ জেলা সভাপতি দীনেন রায়, দুই কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ ও নির্মল ঘোষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। কিন্তু দফায় দফায় বৈঠকের পরেও তৃণমূলের পক্ষ থেকে গত কয়েক দিনে সর্বসম্মত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
তবে ঝাড়গ্রাম শহরে তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে টানাপোড়েন থাকায় বাম শিবির রাজনৈতিক ভাবে সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করতে পারে। বিষয়টি অনুধাবন করেই জেলা তৃণমূলের একাংশ এখন থেকেই দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করার জন্য মাঠে নেমে পড়েছেন। মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে ১৯ জন (তৃণমূল-৮, কংগ্রেস-৫, ঝাড়খণ্ড পার্টি নরেন-১, বিজেপি-৩, নির্দল-২) মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ পর্যন্ত মোট ৬২ জন (বামফন্ট-১৮, তৃণমূল-১৮, কংগ্রেস-১৫, ঝাড়খণ্ড পার্টি নরেন-১, বিজেপি-৫, নির্দল-৫) মনোনয়ন দাখিল করেছেন। মনোনয়নপত্র স্ক্রুটিনির দিন বুধবার। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন শুক্রবার ১ নভেম্বর। |
|
|
|
|
|