মা-দুর্গার ভাসান হয়ে গিয়েছে কবেই। জলে চলে গিয়েছেন লক্ষ্মীও। এর পর মা কালী, জগদ্ধাত্রীর পালা। কিন্তু একের পর এক পুজোয় ভাসানের পর মা গঙ্গার দশা কী?
শ্রীরামপুরে কলেজঘাটে দুর্গা প্রতিমার কাঠামো আজও জড়ো করে রাখা রয়েছে। কাঠামোর খড় মিশছে গঙ্গার জলে। একই ছবি ওই পুরসভার রায়ঘাটে। উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া, হুগলিতে গঙ্গার পাড়ের অধিকাংশ পুরসভার দশা এমনই। গঙ্গায় প্রতিমা ভাসানের ক্ষেত্রে এই রাজ্যে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশিকা আছে (বক্স দেখুন)। তা মানার কথা সবক’টি পুরসভার। এ বছরও দেখা গেল, শেষ অবধি সেই নির্দেশ মানছে হুগলির মাত্র কয়েকটি পুরসভা।
প্রথমেই বলতে হয় চন্দননগরের কথা। ২০০৩ সালে জগদ্ধাত্রী ভাসানে চন্দননগর গঙ্গা-দূষণ রোধে উল্লেখযোগ্য কাজ করে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং পুরকর্মীদের নিয়ে রাতভর কাজ করেছিলেন তাঁরা। বিশালাকার প্রতিমাগুলি ভাসানের কয়েক মিনিট পরেই ক্রেন দিয়ে তুলে ফেলেছিলেন। কিছুতেই খড় বা অন্যান্য উপকরণ গঙ্গায় জলে মিশতে দেননি। এখন এই পদ্ধতিই সবাই অনুসরণ করছে।
নৈহাটিতে প্রথা অনুসারে, কালী পুজোর পর কেবল ঘটখানি গঙ্গায় ভাসান হয়। প্রতিমা গঙ্গাতে ফেলাই হয় না। বড় হোস পাইপের জল দিয়ে প্রতিমার মাটি গলানো হয় মণ্ডপেই।
কল্যাণী পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয়, স্থানীয় একটিমাত্র পুকুরেই সমস্ত প্রতিমা ভাসান হবে নির্দিষ্ট দিনে। তারপর পুরসভা সেই পুকুর দূষণ মুক্ত করার ব্যবস্থা করে। এই ব্যবস্থা চলছে বেশ কয়েক বছর।
এমন ‘মডেল’ হাতের কাছে থাকলেও হুগলির অধিকাংশ পুরসভা গঙ্গার দূষণমুক্তির বিষয়ে উদাসীন থেকেছে এ বছরও। উত্তরপাড়া থেকে ভদ্রেশ্বর পুরসভাগুলি গঙ্গার দূষণ রোধে তেমন ব্যবস্থা নেয়নি। চন্দননগর এবং হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভা কিছুটা হলেও ব্যবস্থা নেয়। উত্তর ২৪ পরগনায় এবার সেইভাবে পরিবেশ বিধি মেনে ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন কর্তা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন,“লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে পুজো উদ্যোক্তারা পুজো করেন। অথচ তার থেকে শতকরা ১ শতাংশ যদি পুরসভাগুলিকে তাঁরা দেন তাহলে গঙ্গাকে দূষণের হাত থেকে বাঁচান সম্ভব।” রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশ অনুসারে, যদি কোনও উদ্যোক্তা পরিবেশ বিধি না মানেন , সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটির ব্যাপারে দূষণ পর্ষদকে জানাতে হবে পুরসভাকে। পরবর্তী সময়ে পর্ষদ সেইসব পুজো কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। |
পর্ষদের বিধি |
• গঙ্গার পাড়ে পুজোর সমস্ত উপকরণ রাখার জন্য একটি বাঁশের খাঁচা তৈরি করতে হবে।
• ঘাটের অদূরে একটি এলাকা বাঁশ দিয়ে ঘিরতে হবে যাতে কোনও উপকরণ গঙ্গায় ভেসে না যায়।
• এক থেকে দু’দিনের মধ্যে ভাসান শেষ করতে হবে পুজো উদ্যোক্তাদের।
• গঙ্গায় ফেলা প্রতিমা ও কাঠামোর কিছু যদি জলে থেকে যায় তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জল থেকে তুলে ফেলতে হবে পুরসভাকে।
• দূষণ রোধের খরচ মেটাতে পুরসভা উদ্যোক্তাদের থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নিতে পারে।
• ভাসানের দিনে ঘাটগুলিতে বিধি মানা হচ্ছে কি না তা দেখবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুলিশ। |
|