উৎসটাই বন্ধ করতে হবে। তা না-হলে শব্দবাজির তাণ্ডব ঠেকানো যে অসম্ভব, তা পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তাদের সাফ জানিয়ে দিলেন কলকাতা ও আশপাশের বহুতল আবাসন সমিতির কর্মকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, দীপাবলিতে তাঁরা নিজেদের বহুতলে শব্দবাজির ব্যবহার ঠেকানোর আন্তরিক চেষ্টা করবেন ঠিকই, কিন্তু তাণ্ডব ঠেকানোর উদ্যোগটা তার উৎস, অর্থাৎ উৎপাদন ও বিক্রির জায়গায় না হলে এই দূষণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। এ বার আইনি জটিলতায় অভিযান চালাতে দুর্গাপুজো পেরিয়ে গিয়েছে। অন্যান্য বার যা কালীপুজোর অন্তত মাস দেড়-দুই আগেই শুরু হয়ে যায়।
বুধবার, কালীপুজোর মাত্র তিন দিন আগে পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ-কর্তাদের উদ্যোগে সল্টলেকের পরিবেশ ভবনে শব্দবাজিতে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বৈঠকে কলকাতা এবং বিধাননগর, হাওড়া ও ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকার দুশোরও বেশি বহুতল আবাসন সমিতির কর্তারা হাজির ছিলেন। ছিলেন পুলিশকর্তারাও। শহর ও আশপাশের বহুতল আবাসনে শব্দবাজি ফাটানোর বিষয়টি নিয়ে প্রতি বছর বারবার বৈঠক হলেও সমস্যা থেকেই যায়। এ দিনের সভায় অবশ্য মন্ত্রী নিজে থাকতে পারেননি।
|
আইনি জটিলতায় দেরিতে পর্ষদের নির্দেশিকা জারি এবং তার ফলে পুলিশও দেরিতে অভিযানে নামায় এ বার যে সমস্যা গুরুতর আকার নিতে পারে, সেই আশঙ্কার কথা ঠারেঠোরে এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন পর্ষদ ও পুলিশকর্তারা। পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত বলেন, “আমি করজোড়ে আবেদন করছি, যাতে কেউ শব্দবাজি না ফাটান।” কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) অশোক বিশ্বাস জানান, শহরে এখনও পর্যন্ত আড়াই হাজার কেজি শব্দবাজি আটক করা হয়েছে। তাঁর ধারণা, “কালীপুজো পর্যন্ত এই ক’দিনের মধ্যে মোট আটক করা শব্দবাজির পরিমাণ এর তিন বা চার গুণ হয়ে যাবে।” তবে সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায়ের হিসেবে, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত এক টন শব্দবাজি বিক্রি হয়েছে এবং তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত তিনশো কেজি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করতে পেরেছে।
অশোকবাবু জানান, নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটিয়ে ধরা পড়লে ছ’মাস জেল পর্যন্ত হতে পারে। এ দিন সভায় বহুতল আবাসন সমিতিগুলির কর্তাদের কাছে ডিসি শব্দবাজির রোখা নিশ্চিত করার আবেদন করেন। তখনই কড়েয়া এলাকার শেক্সপিয়ার সরণি কো-অপারেটিভের পক্ষ থেকে মৃত্যুঞ্জয় সরকার বলেন, “আমরা আন্তরিক ভাবে শব্দবাজি ঠেকানোর চেষ্টা করব। কিন্তু এর উৎসটাই কি বন্ধ করা যায় না? প্রতি বারই এই ধরনের আলোচনায় যোগ দিই। শব্দবাজির উৎস বন্ধ না করলে সমস্যাটা সেই থেকেই যাবে।”
পর্ষদের বক্তব্য, শব্দবাজি তৈরি হয় মূলত দুই ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়া ও নদিয়ার মতো জেলাগুলিতে। ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) জানান, বাজি বিক্রিতে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করতে আগামী বছর কলকাতায় অন্তত ছ’টি বাজি বাজার তৈরি হবে এবং সেগুলির বাইরে কোনও খুচরো বিক্রেতাকে বাজি বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হবে না। এ বছর ময়দান, বেহালা চৌরাস্তা, যাদবপুরের কিশোর ভারতী স্টেডিয়াম ও টালা পার্কে চারটি বাজি বাজার বসেছে। চারটি মিলিয়ে মোট দোকান প্রায় আড়াইশো। |
জব্দের নকশা |
আগামী বছর কলকাতায় ছ’টি বাজি
বাজারের বাইরে খুচরো বিক্রেতাদের
অনুমতি দেওয়া হবে না। |
|
|
শব্দবাজি ব্যবহারে শাস্তি
ছ’মাস পর্যন্ত জেল। |
কলকাতায় বুধবার পর্যন্ত
আটক ২৫০০ কেজি শব্দবাজি। |
|
|
উড়ুক্কু যান ১৫ তলার বেশি উঁচু যে সব
বহুতলে নজরদারি করতে পারবে না, সে
সব বাড়ির ছাদে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। |
|
|
আগামী বছর বেলেঘাটা ও ভবানীপুরে আরও দু’টি বাজি বাজার বসাতে চেষ্টা করছে কলকাতা পুলিশ। সব ক’টি বাজারেই ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরা থাকবে।
বহুতলগুলিতে শব্দবাজি ফাটানো ঠেকাতে কালীপুজো ও তার পরের রাতে আনম্যান্ড এরিয়াল ভেহিক্ল (ইউএভি) বা উড়ুক্কু যান দিয়ে নজরদারির কথা কলকাতা পুলিশ আগেই জানিয়েছিল। লালবাজারের কর্তারা ওই যানের নাম দিয়েছেন ‘দুর্দান্ত’। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, ১৫ তলার বেশি ওই যান উঠতে পারে না। অথচ কলকাতায় কুড়িতলা, পঁচিশতলা, এমনকী পঁয়ত্রিশতলারও বাড়ি রয়েছে। সেগুলির ছাদে শব্দবাজি ফাটলে তা উড়ুক্কু যানের নজরদারির বাইরেই থেকে যাবে। সে ক্ষেত্রে কী হবে?
এক পুলিশকর্তা বলেন, “ইউএভি পৌঁছতে পারবে না, এমন বহুতলগুলির তালিকা আমরা তৈরি করেছি। কালীপুজো ও তার পরদিন সন্ধ্যায় আমরা সেগুলির ছাদে দু’জন করে পুলিশকর্মীকে মোতায়েন রাখব। ছাদের দরজাও বন্ধ থাকবে।”
|