শব্দবাজি ধরায় ফাঁক, কবুল করল পুলিশ
ত বছর কালীপুজোর আগে তল্লাশি-অভিযানে নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ১৫ হাজার কিলোগ্রাম। এ বার সেখানে এখনও পর্যন্ত আটক হয়েছে তার অনেক কম। অথচ পুলিশের দাবি, বিভিন্ন জায়গায়, এমনকী সরকারি বাজির বাজারেও নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হচ্ছে হলে অভিযোগ আসছে। এর জন্য পুলিশ অবশ্য দায় চাপাচ্ছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উপরেই। তাদের দাবি, ষষ্ঠীর আগে পর্যন্ত শব্দসীমা বেঁধে দিতে পারেনি পর্ষদ। ফলে, অভিযানও শুরু করা যায়নি। আর তার ফাঁক গলেই বিভিন্ন জায়গায় মজুত হয়ে গিয়েছে প্রচুর নিষিদ্ধ বাজি। পৌঁছে গিয়েছে ক্রেতার হাতে।
মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের ক্রাইম কনফারেন্সে এই বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। ইতিমধ্যেই পুলিশকর্তারা জেনে গিয়েছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার নুঙ্গি-সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ বাজি। সেই বাজির বেশির ভাগটা আগেই এ শহরে চোরাপথে মজুত হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। এর জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে দায়ী করে কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “প্রতি বছরই আমরা দুর্গাপুজোর আগে থেকে নিষিদ্ধ শব্দবাজির বিরুদ্ধে অভিযান এবং নজরদারি শুরু করে দিই। এ বছর সেটা শুরু হয়েছে লক্ষ্মীপুজোর দিন থেকে। কারণ বাজির শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেল হবে, না ১২০ ডেসিবেল, ষষ্ঠীর আগে পর্যন্ত তা ঠিক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি পর্ষদ। তার পরে পুজোর ডিউটিতে ব্যস্ত ছিলেন আমাদের কর্মীরা। তার মধ্যেই নিষিদ্ধ বাজি মজুত ও বিক্রি হয়ে গিয়েছে।”
পর্ষদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “আমরা জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের চূড়ান্ত রায় অবধি অপেক্ষা করেছি। রায় না পাওয়া গেলে তো আমরা বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারি না। রায় পাওয়ার পরেই আমরা বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি।”
এ দিন এক পুলিশকর্তা জানান, প্রতি বছর দেখা যায়, বাজিবাজার থেকে কেনা বাজিও নির্ধারিত শব্দমাত্রা (৯০ ডেসিবেল) ছাপিয়ে যায়। কালীপুজোর রাতে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর জন্য মাঝেমাঝে ক্রেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বাজি বাজারের বিক্রেতার বিরুদ্ধে। বৈঠকে বলা হয়, বাজি বাজারের রসিদ দেখানোই সব নয়। বাজি বাজার থেকে যদি কেউ নিষিদ্ধ বাজি কেনেন এবং তা ফাটান, তা হলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ দেন কলকাতা পুলিশের অ্যাডিশনাল সিপি-৩ দেবাশিস রায়। কালীপুজোর রাতে শব্দদানব ঠেকাতে এবং বাইক বাহিনীর তাণ্ডব রুখতে থানার অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশকর্তারা। আজ বুধবার, বহুতলের ছাদে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানো ঠেকাতে পরিবেশ ভবনে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বৈঠকে বসছে বহুতল আবাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
এ দিনের বৈঠকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ পুজোর মাসে শহরে চুরি এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দক্ষিণ শহরতলি ডিভিশনের এক থানার ওসি-র কাছ থেকে তিনি জানতে চান, তাঁর এলাকায় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি কেন?
এর পাশাপাশিই সাধারণ মানুষের অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়াকে আধুনিক করার বিষয়টিও আলোচিত হয় বৈঠকে। ফেসবুকের পাতায় ট্রাফিক সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর পরিকল্পনায় সাফল্য এবং বিভিন্ন অভিযোগে নাগরিকেরা সুরাহা পাওয়ার পরে এ বার বিভিন্ন অভিযোগ জানানোর মাধ্যম হিসেবে এ বার থেকে ই-মেলকে ব্যবহার করতে চায় লালবাজার। বৈঠকে শহরের ৬৫ থানাকে সে রকমই নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। বিদেশে অনলাইনের মাধ্যমে থানার অভিযোগ জানানোর সুযোগ বহু বছর ধরেই রয়েছে।
কলকাতা পুলিশের থানাগুলির কলকাতা পুলিশের ৬৫টি থানার পৃথক ই-মেল আইডি থাকলেও পুলিশকর্তারা দেখেছেন, সেই সব আইডি-র অস্তিত্বই জানা নেই অধিকাংশ নাগরিকের। লালবাজারের কর্তারা ঠিক করেছেন, প্রতিটি থানার ভিতরে, বাইরে পুলিশ কিয়স্কে বা লাগোয়া রাস্তার সামনে এবং কলকাতা পুলিশ আয়োজিত অনুষ্ঠানের ব্যানার-ফেস্টুনে লেখা থাকবে ওই থানার ই-মেল আইডি। এক পুলিশকর্তা জানান, ঠিক হয়েছে, ই-মেলে অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাপ্তি স্বীকার জবাব দেওয়া হবে। তদন্ত কোন অবস্থায় রয়েছে বা পুলিশের কিছু করার না থাকলে তা-ও জানিয়ে দেওয়া হবে ই-মেলেই। ওই কর্তা আরও জানান, সিপি চাইছেন ওই আইডিতে মেল করে সাধারণ মানুষ তাঁদের পরামর্শও দিন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সমাজের একটা বড় অংশ, যাঁরা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না, তাঁরা তা হলে কী করবেন? লালবাজারের শীর্ষকর্তা জানান, তাঁরা আগের পদ্ধতিতেই অভিযোগ জানাবেন। পুলিশের একাংশ অবশ্য বলছে, ই-মেলের মাধ্যমে অভিযোগ জানানো শুরু হলে থানার দৈনন্দিন কাজ আরও মসৃণ হবে। এটা সবার জন্য নয় জেনেই সিপি ওই নির্দেশ দিয়েছেন।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.