জাতীয় পরিবেশ আদালতে বাতিল হয়ে গেল বাজি প্রস্তুতকারকদের আর্জি। বুধবার দিল্লি থেকে সেই খবর কলকাতায় পৌঁছতেই শব্দবাজির বিরুদ্ধে একসঙ্গে অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নিল পুলিশ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পরিবেশ দফতর।
গত ২১ অগস্ট পরিবেশ আদালত রায় দিয়েছিল, দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল করতে হবে। কিন্তু ৯ অক্টোবর এ রাজ্যে ৯০ ডেসিবেলের চেয়ে বেশি শব্দের বাজি নিষিদ্ধ করে একটি নির্দেশিকা জারি করে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। এর বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি। তাদের বক্তব্য ছিল, পর্ষদের নির্দেশিকায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের অবমাননা করা হয়েছে। বুধবার জাতীয় পরিবেশ আদালত সমিতির আবেদনটি বাতিল করে তাদের নতুন করে আবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে।
ওই নতুন আবেদন দাখিল হওয়ার আগেই রাজ্য জুড়ে শব্দবাজির বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমে পড়তে চাইছে রাজ্য। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলেন, “৯০ ডেসিবেলের চেয়ে বেশি শব্দ সৃষ্টিকারী বাজির বিরুদ্ধে শহর জুড়ে অভিযান চালানো হবে।” এ দিনই রাজ্য পুলিশ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং পরিবেশ দফতর বৈঠকে বসে। পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বৈঠকের পরে জানান, পুলিশ শব্দবাজি আটক করবে এবং প্রস্তুতকারক ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আর, শব্দবাজির বিরুদ্ধে প্রচারও চালানো হবে।
সুদর্শনবাবু বলেন, “জাতীয় পরিবেশ আদালত বুধবার যা নির্দেশ দিয়েছে, তাতে এ রাজ্যে শব্দবাজি নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে আর কোনও আইনি বাধা রইল না। এই ব্যাপারে সমন্বয় রক্ষার জন্য একটি কমিটিও তৈরি করা হবে।” এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, রাজ্যের প্রতিটি থানা এলাকায় ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে সামিল করে পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে প্রচার চালানো হবে। রবিবার, ২৭ অক্টোবর কলকাতার রাসবিহারী মোড় থেকে শব্দবাজির বিরুদ্ধে বেরোবে কেন্দ্রীয় মিছিল। শব্দবাজির তাণ্ডব ঠেকাতে ১, ২ ও ৩ নভেম্বর এই তিন দিন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খুলবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় দাবি করেন, “জাতীয় পরিবেশ আদালত আমাদের আবেদন খারিজ করেনি, যথাযথ ভাবে আবেদন জমা করার নির্দেশ দিয়েছে। এ দিনের নির্দেশের ভিত্তিতে শব্দবাজির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলে তা হবে বেআইনি ও আদালত অবমাননাকর। বৃহস্পতিবারই আমরা নতুন আবেদন জমা দিচ্ছি।”
দীপাবলির (২ নভেম্বর) আর মাত্র ন’দিন বাকি। এখন শব্দবাজির বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর অভিযান শুরু করলেও তাতে সাফল্য কতটা মিলবে সে ব্যাপারে পুলিশ ও পর্ষদ-কর্তারা সন্দিহান। রাজ্য জুড়ে প্রায় ৫০ টন শব্দবাজি ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তবে লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “আইনি জটিলতায় অভিযানে অনেকটা দেরি হল ঠিকই। কিন্তু কিছুটা প্রভাব তো হবেই।” |