‘জঙ্গল সাফারি’র সময়ে দুর্ঘটনায় এক পর্যটকের মৃত্যুর পরে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হল বন দফতর। বন দফতর সূত্রের খবর, এখন সাফারির জন্য যে ‘জিপসি’ নামের গাড়িগুলি চলে, সেগুলির অধিকাংশের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালানোর লাইসেন্স নেই। ফলে, ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ও প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হয় না ওই সব গাড়ির মালিকদের। ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গাড়ি চালানোর জন্য বাণিজ্যিক লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু, ওই জিপসি গাড়ির মালিকদের অনেকেই তা নেননি। এবার বন দফতরের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ জারি করে বলা হয়েছে, ১ নভেম্বরের মধ্যে সাফারির জন্য ব্যবহার হয় যে সব গাড়ি, তাদের মালিকদের বাণিজ্যিক লাইসেন্স নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন পত্র জমা দেওয়ার নথি না দেখালে সংশ্লিষ্ট জিপসি সাফারিতে যেতে দেওয়া হবে না।
ওই বিভাগের ডিএফও রাজেন্দ্র জাখর বলেন, “যে সমস্ত জিপসি জঙ্গল সাফারিতে পর্যটকদের জঙ্গলে ঘোরায়, সেগুলির বাণিজ্যিক লাইসেন্স দরকার। জিপসি-গাড়ির মালিকদের জানানো হয়েছে ১ নভেম্বরের মধ্যে বাণিজ্যিক লাইসেন্স নিতে হবে।” যে সব গাড়ির মালিকরা ওই লাইসেন্স নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে পারবেন না, তাঁদের অন্তত আবেদনপত্র ও ফি জমা করার নথি বন দফতরকে দেখাতে হবে। আলিপুরদুয়ার মহকুমার পরিবহণ অফিসার শিশির লেপচা বলেন, “জঙ্গল সাফারির গাড়ি গুলি বাণিজ্যিক লাইসেন্স করালে ফি বছর পরীক্ষা করিয়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া বাধ্যতামূলক। এখন কী ভাবে গাড়ি গুলি চলে তা আমাদের জানা নেই।” গত ২২ অক্টোবর ব্যারাক পুরের প্রবীর মজুমদার নামে বাসিন্দা ডুয়ার্সে ঘুরতে গিয়ে জঙ্গল সাফারির জিপসির ধাক্কায় মারা যান। ঘটনার পরে বন দফতর তদন্তে নেমে জানতে পারে, জিপসি গাড়ি গুলি নিয়ম মেনে জঙ্গলে চলছে না। বিষয়টি নিয়ে পর্যটকরাও অভিযোগ তোলেন। অভিযোগ, কোনও গাড়ির টায়ার ক্ষয়ে গিয়েছে। কোনও গাড়ির জঙ্গলে চলার মতো শক্তপোক্ত নয়। ঘটনার পরে বন্যপ্রাণ ৩ বিভাগের ডিএফও জিপসি মালিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করে জানিয়ে দেন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স নিতে হবে।
জিপসি মালিক সংগঠনের তরফে বিমল রাভা, গণেশ শারা জানান, রোজগারের জন্য জমি বিক্রি করে বনবস্তির বাসিন্দারা সেনাবাহিনীর নিলাম থেকে ৭০-৮০ হাজার টাকায় জিপসি গুলি কিনেছেন। তা চলাচলের উপযুক্ত করাতে আরও ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। গত বছর থেকে চিলাপাতায় জিপসি সাফারি শুরু হয়েছে। এখন মোট ১২ টি গাড়ি চলে চিলাপাতা জঙ্গলে।
বন দফতর ১৭৫০ টাকা করে পর্যটকদের থেকে নেয়। গাইডদের ২০০ টাকা ও গাড়ির মালিকদের ৯৫০ টাকা করে বন দফতর দেয়। তার মধ্যে থেকে চালকের খরচ ও তেল খরচ বাদ দিলে হাতে ৩০০-৪০০ টাকা হাতে থাকে। চিলাপাতা এলাকায় সকালে ও বিকেল দু’বার জঙ্গলে প্রবেশ করে। জলদাপাড়ায় অবশ্য ১৭টি গাড়ি চলে। একটি গাড়ির মালিক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় জানান, জলদাপাড়ায় বন দফতর পর্যটকদের থেকে ১৫৫০ টাকা করে নেয়। বন দফতর জলপাড়ার গাড়ির মালিকরা পান ৭৫০ টাকা। সুব্রতবাবু বলেন, “গাড়ি বাণিজ্যিক লাইসেন্স করাতে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা কর দিতে হবে। প্রতি বছর বছরে মাত্র ৯ মাস গাড়ি ঢোকার অনুমতি রয়েছে। জঙ্গলে বাকি সময় গাড়ি বসে থাকে। গাড়ির মেরামতির খরচ রয়েছে। কী করব বুঝতে পারছি না। আগেও আমরা বাণিজ্যিক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। তা পাইনি। ফের আবেদন করব।”
|