একজন ‘বিবাগী’। অন্যজন ‘দলছুট’। ওই দু’জনকে নিয়ে আপাতত উদ্বেগে সরকারি কর্তারা। যে কোনও সময়ে রেললাইনের পাশে চলে আসছে। ‘অভিমানী’ ওই দু’জনের রেললাইনের পাশে ঘোরাফেরা মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না সরকারি কর্তারা। উদ্বেগ এতটাই বেড়েছে যে বুধবার খোদ মন্ত্রী তাদের দেখতে গিয়েছিলেন মহানন্দা অভয়ারন্যের কোর এলাকার গুলমা নজরমিনারে। এর আশেপাশেই মাসখানেক ধরে একটি গন্ডার আর হাতি ঘুরছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা ঘাস জমিতে চরে বেড়ালেও, বেলা বাড়ন্ত হলেই তারা উঠছে জঙ্গল চিরে যাওয়া রেল লাইনের উপরে।
বুধবার বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন গুলমা নজরমিনারে গিয়ে গন্ডারটিকে অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করতে দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এদিন বনমন্ত্রী বলেন, “রেল দফতর থেকে আমাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। গন্ডারটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়ে অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করা হবে। গন্ডার ও হাতিদুটোকে নিয়ে বেশ চিন্তাতেই রয়েছি।” |
গন্ডারটি অবশ্য বনকর্তাদের কাছে পূর্ব পরিচিত। আর ওকে নিয়ে বন দফতরের উদ্বেগও দীর্ঘদিনের। ডান কানটি অপেক্ষাকৃত বেশি বড় হওয়ায় বনদফতর থেকে গন্ডারটির নাম দেওয়া হয় ‘কানহেলা।’ বনদফতরের নথিতে গরুমারা জঙ্গলের স্থায়ী বাসিন্দা কানহেলা ২০১০ সালের শেষের দিকে গরুমারা জঙ্গল ছেড়ে চাপড়ামারি চলে আসে। বনকর্মীরা জানিয়েছিলেন, সঙ্গিনী দখলের লড়াইয়ে গরুমারার জঙ্গলে পুরুষ গন্ডারদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তেমনই এক সংঘর্ষের ঘটনার পরে কানহেলা গরুমারা ছেড়ে চাপরামারির জঙ্গলে চলে যায় বলে একাংশ বন আধিকারিকদের মতামত। চাপরামারির জঙ্গল থেকে বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গলে চলে যায় কানহেলা। কুনকি হাতি দিয়ে তাকে ‘ঘরে’ ফেরানোর চেষ্টা করেও বিফল হতে হয় বনদফতরকে। এরপরে প্রায় মাসছয়েক ওর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। একাংশ বনকর্তা আশঙ্কা করেছিলেন, অচেনা জঙ্গলে হয়ত খাওয়ার না পেয়ে তার মৃত্যুও হতে পারে। যদি সে আশঙ্কাকে মিথ্যে করে ফের নজরে এসেছে কানহেলা। এবং সুস্থ, সবল শরীর নিয়েই ফের বনদফতরের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বৈকুন্ঠপুর থেকে জঙ্গল পথে প্রায় ৪০ কিলোমিটার ঘুরে সে পৌঁছেছে মহানন্দা অভয়ারন্যে। বনমন্ত্রীর কথায়, “মহানন্দায় আসার পরে তার স্বাস্থ্য আরও ভাল হয়েছে বলে আধিকারিকরা জানিয়েছেন। আসলে মহানন্দার গুলমা এলাকায় আর কোনও গন্ডার নেই। সেখানে সবুজ ঘাস রয়েছে। দিব্যি ঘাস খেয়ে স্বাস্থ্য বানিয়েছে ও।”
পাশাপাশি কানহেলার সঙ্গে একটি দলছুট হাতিও ‘দোসর’ হয়েছে। গত একমাস ধরে কানহেলার পেছনে কিছুটা দূরেই ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে একটি হাতিকেও। বনকর্তারা জানিয়েছেন, দলবদ্ধ ভাবে থাকতে অভ্যস্ত হাতিরা। সে কথা মাথায় রেখে একটি হাতি কেন দল ছেড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা নিয়েও উদ্বেগে আধিকারিকরা। উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণী বিভাগের মুখ্য বনপাল বিপিন কুমার সুদ বলেন, “কানহেলা যে ভাবে রেল লাইনের পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাতে উদ্বেগ তো রয়েইছে, পাশাপাশি একটি হাতিও তার পেছনে ঘুরছে। সে হাতিটিও রেললাইনে উঠে এলে বিপদ আরও বাড়তে পারে।”
এ দিন গুলমা যাওয়ার আগে পুনডিং-খইরানি-গুলমা বনবস্তিতে যান হিতেনবাবু। উত্তরবঙ্গে অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল অনুপ কুমার সাহাও গিয়েছিলেন। বাসিন্দারা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ জানান বনমন্ত্রী এলাকায় পর্যটনের প্রসার ঘটাতে প্রকল্প গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। |