খুনের তদন্তে হদিস কিডনি পাচার চক্রের
লেক থানা এলাকার একটি গেস্ট হাউসে এক যুবকের খুনের ঘটনার কিনারা করতে নেমে কিডনি পাচার চক্রের হদিস পেল কলকাতা পুলিশ।
দিন পনেরো আগে ওই গেস্ট হাউসের একটি ঘর থেকে বিহারের সমস্তিপুরের বাসিন্দা রাকেশ যাদব নামে এক যুবকের পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। এই খুনের অভিযোগে মঙ্গলবার হুগলির ধনেখালি থেকে বিশ্বজিৎ সিংহ ওরফে মহম্মদ শোহন এবং শরিফা বেগম নামে দু’জন গ্রেফতার হয়। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গেস্ট হাউসের ঘর থেকে একটি ব্যাগ এবং একটি মোবাইল ফোনের বাক্স মেলে। সেখানে একটি ফোনের আইইএমআই নম্বর ছিল। সেই সূত্র ধরেই ধনেখালিতে শরিফার বাবা ও বাড়ির খোঁজ পায় পুলিশ। বুধবার আলিপুর আদালতে তাদের হাজির করানো হলে বিচারক ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ধৃতদের পুলিশি হেফাজত দেন।
পুলিশ জেনেছে, বিহারের বাঁকা জেলার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ ও তার স্ত্রী শরিফা কাজের সন্ধানে বছরখানেক আগে পঞ্জাবে গিয়েছিল। রাকেশের সঙ্গে সেখানেই আলাপ তাদের। তখন রাকেশ তাদের জানান, তাঁর টাকার দরকার। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশ্বজিৎ ও শরিফা তাঁকে কিডনি বিক্রির পরামর্শ দেয়।
পুলিশ জানায়, পঞ্জাবের এক বাসিন্দাকে লক্ষাধিক টাকায় কিডনি বিক্রি করেছিলেন রাকেশ। সেপ্টেম্বর মাসের শেষে ই এম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছিল।
তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জেনেছেন, কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পরে রাকেশ শারীরিক পরীক্ষা করাতে কলকাতায় এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল বিশ্বজিৎ ও শরিফাও। ১৩ অক্টোবর তিন জনেই ওই গেস্ট হাউসে ওঠেন। ১৫ অক্টোবর গেস্ট হাউসের মালিক ঘর থেকে পচা গন্ধ পেয়ে খবর দেন পুলিশে। ঘরের দরজা ভেঙে রাকেশের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ওই গেস্ট হাউসের সিসিটিভি-র ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা যায়, ১৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্বজিৎ ও শরিফার সঙ্গে রাকেশ গেস্ট হাউসের ওই ঘরে ঢুকেছিলেন। বিকেলে তিন জনেই গেস্ট হাউস থেকে বেরোন। সন্ধ্যায় এক সঙ্গেই ফেরেন তিন জন। ওই দিনই রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বিশ্বজিৎ ও শরিফা ওই ঘরে তালা দিয়ে বেরিয়ে যান বলেও জেনেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, দেহ উদ্ধারের সময়ে গেস্ট হাউসের ঘর থেকে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের লেটারহেডে লেখা একটি প্রেসক্রিপশন পাওয়া যায়। সেখানে খোঁজ করে জানা যায়, মাস কয়েক আগে রাকেশ সেখানে পঞ্জাবের এক ব্যক্তিকে কিডনি দান করেন। পঞ্জাবের ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। সেখান থেকেই কিডনি বিক্রির কথা জানতে পারে পুলিশ। যদিও হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছেন, আইনি কাগজপত্র খতিয়ে দেখেই তাঁরা কিডনি প্রতিস্থাপন করেছিলেন। এই দাবি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এ দিন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “নিহত ব্যক্তি কিডনি বিক্রি বাবদ টাকার একটা ভাল অংশ পেয়েছিলেন। তার ভাগ নিয়েই এই খুন কি না, তা দেখা হচ্ছে।” পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জানিয়েছে, পঞ্জাবের একটি চক্র শহরে কিডনি বিক্রির দালালি করে। ধৃতেরাও এই দালালির সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ পুলিশের।
পুলিশের দাবি, খুনের পিছনে অন্য কারণ আছে বলে জেরার মুখে দাবি করেছে বিশ্বজিৎ। সে পুলিশকে জানিয়েছে, ১৩ তারিখ সন্ধ্যায় সে গেস্ট হাউসের একতলায় জল আনতে গিয়েছিল। ফিরে সে দেখে, রাকেশ শরিফার সঙ্গে অশালীন আচরণ করছেন। তখন উত্তেজিত হয়ে একটি প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে রাকেশকে খুন করে বিশ্বজিৎ। এর পরেই স্ত্রীকে নিয়ে সে গেস্ট হাউস থেকে পালিয়ে যায়।
বিশ্বজিতের এই দাবি অবশ্য পুলিশ বিশ্বাস করেনি। পুলিশ সূত্রের খবর, কিডনি বিক্রির দালালিতে আরও কয়েক জন জড়িত। কিডনি পাচারকারী ভিন্ রাজ্যের একটি চক্রের খোঁজে নতুন করে তদন্তে নেমেছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.