দমদমে কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে ধন্দে পরিবার
মদমের নয়াপট্টির দশম শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়সী দেবনাথের (১৫) মৃত্যুর ঘটনায় খুনের অভিযোগ দায়ের করলেন তার বাবা সঞ্জয় দেবনাথ। বুধবার সঞ্জয়বাবু বলেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। তাকে কোনও ভাবে মারা হয়েছে। কে বা কারা এই কাজে জড়িত, তা আমার জানা নেই। পুলিশের কাছে আমার একান্ত আবেদন যে, নিরপেক্ষ তদন্ত করে সত্য ঘটনা প্রকাশ হোক।” বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান দেবাশিস বেজ বলেন, “খুনের মামলা দায়ের হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এখনও আসেনি। তদন্ত শুরু হয়েছে।”
মঙ্গলবার সকালে স্কুলের পোশাক পড়া অবস্থাতেই দমদমের বাপুজি কলোনির এক নম্বর পুকুরে ভাসছিল বছর পনেরোর শ্রেয়সীর দেহ। উপুড় হয়ে থাকায় জলের উপরে দেখা যাচ্ছিল পিঠের স্কুলব্যাগটাও। সকাল আটটা নাগাদ দেহটি দেখে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। পুলিশকে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
শ্রেয়সীর বাবা সঞ্জয়বাবু কর্মসূত্রে ওড়িশার আঙ্গুলে থাকেন। মঙ্গলবারই তিনি কলকাতায় আসেন। যে পুকুরে তাঁর মেয়ের দেহ ভেসে থাকতে দেখা গিয়েছিল, এ দিন সকালে সেখানে যান তিনি। সঞ্জয়বাবু বলেন, “মেয়ের দেহ গতকাল আমি দেখেছি। জলে ডুবে গেলে শরীর যে রকম ফুলে ওঠে, সে রকম কোনও লক্ষণ ছিল না। তা ছাড়া, শ্মশানের কর্মীরাও আমাদের বলেছেন জলে ডোবা দেহ দাহ হতে বেশি সময় লাগে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সাধারণ মৃতদেহ দাহ হতে যে রকম সময় লাগে, তেমনই লেগেছে। তা হলে কী ভাবে বলব যে ওর পুকুরে ডুবে জল খেয়ে মৃত্যু হয়েছে?”
সঞ্জয়বাবু আরও বলেন, “আমার মেয়ে সাঁতার জানত না। জলে ভয়ও পেত খুব। আত্মহত্যা করতে চাইলেও কখনওই সে জলে ঝাঁপ দেবে না।” সেই সঙ্গেই তিনি জানান, ঘটনার দিন সকাল পর্যন্ত তাঁর মেয়ে খুব স্বাভাবিক ছিল। কোনও মানসিক অবসাদ মেয়ের মধ্যে লক্ষ করেননি মা পাপিয়াদেবীও।
পাপিয়াদেবী জানিয়েছেন, সোমবার শেষ দিন স্কুলে যাওয়ার সময়েও শ্রেয়সী বেশি চিন্তিত ছিল তার স্কুলের প্রোজেক্ট পেপার নিয়ে। স্কুলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সেই কাজ নিয়েই ব্যস্ত ছিল সে। রওনা হওয়ার সময়েও মাকে বলে গিয়েছিল বাড়িতে ফিরেই সে ফের ওই কাজ নিয়ে বসবে। পাপিয়াদেবী বলেন, “অন্যান্য দিন ও খাবার টেবিলে বসে খায়। সোমবার ও প্রোজেক্ট পেপার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমিই ওকে খাইয়ে দিই।” সঞ্জয়বাবু বলেন, “মঙ্গলবার আমার আঙ্গুল থেকে বাড়ি আসার কথা ছিল। আমাদের বিছানায় ওর বই ছড়ানো ছিল। আমি আসব বলে ও মাকে বলে যায় বাড়ি ফিরে ঘর গুছিয়ে রাখবে।”
সঞ্জয়বাবুদের প্রশ্ন, এমন স্বাভাবিক এক মেয়ে কেন হঠাৎ আত্মঘাতী হতে যাবে? তাঁদের আরও প্রশ্ন, মেয়ের মোবাইল পাওয়া গেলেও ফোনের ভেতর সিম কার্ড নেই কেন? কেনই বা যে মেয়ে জল এত ভয় পেত, সে পুকুরে ঝাঁপ দেবে? পুলিশ জানতে পেরেছে, জল থেকে শ্রেয়সীর দেহ উদ্ধারের সময়ে তার নাক মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছিল। ফলে এটি স্বাভাবিক জলে ডোবা মৃত্যু কি না, সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশও।
দমদম স্টেশন সংলগ্ন সেভেন ট্যাঙ্কসের কাছে ডব্লিউ ডব্লিউ এ কাশীপুর ইংলিশ স্কুলে পড়ল শ্রেয়সী। সঞ্জয়বাবু জানান, পাড়ায় তাঁর মেয়ের কোনও বন্ধু ছিল না, সকলেই স্কুলের বন্ধু। ফেসবুকে অবশ্য বন্ধু ছিল। তিনি বলেন, “মেয়ের সঙ্গে বন্ধুবান্ধবদের কী কথা হত, তা সব জানা সম্ভব নয়।” পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রেয়সী ছোট থেকেই নানা ঘটনা ডায়রিতে লিখত। সব রকম অনুভূতির কথাও ডায়েরিতে লিখত সে। সঞ্জয়বাবু জানান, তাঁর মেয়ে ডায়েরিতে শেষ বার লেখে চলতি মাসের ২০ তারিখ। সেখানে সে লেখে একটি ঘটনায় সে আঘাত পেয়েছে। আর কোনও দিন ডায়েরি লিখবে না। কিন্তু কী সেই ঘটনা, তা অবশ্য লেখেনি শ্রেয়সী।


পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.