স্কুলপোশাকেই জলে উপুড় হয়ে ভাসছিল বছর পনেরোর কিশোরীর দেহটা। ওপর থেকে দেখা যাচ্ছিল পিঠের স্কুলব্যাগটাও।
দমদমের বাপুজি কলোনির এক নম্বর পুকুরে সকাল আটটা নাগাদ ওই কিশোরীর দেহ ভাসতে দেখেন বাসিন্দারা। তারাই পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ জানিয়েছে, কিশোরীর নাম শ্রেয়সী দেবনাথ (১৫)। সে দমদমের নয়াপট্টির এক আবাসনের বাসিন্দা। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করলেও ওই কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রোজকার মতো সোমবারও স্কুলে যায় শ্রেয়সী। দমদম স্টেশন সংলগ্ন সেভেন ট্যাঙ্কসের কাছে একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী সে। নাগেরবাজার থেকে সে রোজ লেকটাউনগামী অটো বা বাস ধরে তাঁর বাড়ি নয়াপট্টিতে নেমে বাড়ি যায়। শ্রেয়সীর বন্ধুরা জানিয়েছে, সোমবার স্কুলছুটির পরে সে নাগেরবাজারেই নেমেছিল। কিন্তু তার পর সেখান থেকে সে বাড়ি যায়নি বলে জানিয়েছে তার পরিবারের লোকজন।
শ্রেয়সী দেবনাথ। |
শ্রেয়সীর মা পাপিয়া জানান, স্কুল থেকে শ্রেয়সী পাঁচটা-সওয়া পাঁচটায় বাড়ি ফেরে। কিন্তু সোমবার ছ’টা বেজে যাওয়ার পরেও বাড়ি না ফেরায় পাপিয়া মেয়ের মোবাইলে ফোন করেন। কিন্তু তখন থেকেই ফোন সুইচড অফ ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে শ্রেয়সী। তাঁর বাবা সঞ্জয় দেবনাথ ভুবনেশ্বরে একটি নির্মাণ সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার। খবর দেওয়া হয়েছে তাঁকেও।
মঙ্গলবার সকালে বাপুজি কলোনির পুকুরে শ্রেয়সীর দেহ ভাসতে দেখা যায়। পুলিশ এলে তোলা হয় দেহ। স্কুল ব্যাগের ভিতরে ডায়েরি থেকে তার নাম-ঠিকানা জানতে পারে পুলিশ। মোবাইল পেলেও তাতে সিম কার্ড ছিল না। ব্যারাকপুর কমিশনারেটে গোয়েন্দাপ্রধান দেবাশিস বেজ বলেন, “দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।” তবে তার ডান গালে একটা আঁচড়ের চিহ্ন মিলেছে।
প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর পাননি। প্রথমত ওই এলাকা দিয়ে শ্রেয়সীর বাড়ি পৌঁছনোর রাস্তা নেই। স্কুল ছুটির পরে সে সেখানে গেল কেন? তার কোনও বন্ধু ওই অঞ্চলে থাকে কিনা, তা-ও দেখছে পুলিশ। স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, সোমবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ স্কুল পোশাকে ওই কিশোরীকে বাপুজি কলোনির তিন নম্বর পুকুরের সামনে ঘুরতে দেখেছেন। তাঁর দাবি যদি সত্যি হয়, তা হলে প্রশ্ন অত রাতে ওই এলাকায় শ্রেয়সী কেন ঘুরছিল? তা ছাড়া ডুবে যাওয়া মানুষের দেহে যে সব লক্ষণ থাকে যেমন, পেটে জল জমা বা দেহ ফুলে যাওয়া, তেমন কিছুই শ্রেয়সীর ক্ষেত্রে হয়নি। সে যদি কোনও ভাবে ডুবেও যায়, তা হলে পিঠে ভারী ব্যাগ নিয়েও এত দ্রুত ভেসে উঠল কী ভাবে? বাপুজি কলোনির ওই এলাকা যথেষ্ট জনবহুল। স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত কুমার কর বলেন, “সোমবার রাত দু’টো পর্যন্ত ওখানে কালীপুজোর প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলেছে। তখন পর্যন্ত কিন্তু পুকুরে কোনও কিছু নজরে আসেনি।” |