দেড় বছরের বেশি হয়ে গেল, তার খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। অথচ কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইটে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকাতেই সে অনুপস্থিত!
সে, অর্থাৎ কাদের খান। খাস কলকাতারই বাসিন্দা বছর সাতাশের যে যুবকটিকে পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারীরা। এবং এখনও যার নাগাল পাওয়া যায়নি। এ হেন এক ফেরার আসামির নাম কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইটে না-থাকায় লালবাজারের অন্দরেই বিস্ময় ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এর বোধগম্য কোনও ব্যাখ্যাও কর্তৃপক্ষের তরফে মেলেনি।
২০১২-র ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে পার্ক স্ট্রিটের এক পাঁচতারা হোটেলের পানশালার সামনে এক মহিলাকে গাড়িতে তুলেছিল কাদের ও তার সঙ্গীরা। অভিযোগ, লিফ্ট দেওয়ার অছিলায় মহিলাকে তারা সঙ্গে নিয়েছিল, এবং চলন্ত গাড়িতেই তাঁকে গণধর্ষণ করে এক্সাইড মোড়ের কাছে ফেলে তারা চম্পট দেয়। পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ প্রথমে অভিযোগটিতে গুরুত্ব না-দিলেও পরে সংবাদ মাধ্যমের চাপে লালবাজার নড়ে-চড়ে বসে। দু’সপ্তাহ বাদে ধরা পড়ে চার অভিযুক্ত সুমিত বজাজ, নৌশাদ খান, রুমান খান ও নাসের খান। কিন্তু গণধর্ষণে মূল অভিযুক্ত কাদের খান ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, ধৃত নাসের হল কাদেররই ভাই। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গত এই দেড় বছর ধরে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা কাদেরের খোঁজে মুম্বই-গোয়া থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হানা দিয়েছেন। প্রতি বারই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এ বছরের গোড়ার দিকে খবর আসে, কাদের বাংলাদেশে ঢুকেছিল, পরে আশ্রয় নিয়েছে নেপালে। সেই ইস্তক ইন্টারপোল লুক-আউট নোটিস জারি হয়ে রয়েছে পার্ক সার্কাসের ছেলে কাদের খানের নামে। |
এমন ‘হাই প্রোফাইল’ মামলার আসামির নাম কলকাতা পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় না-থাকাটা যে অস্বাভাবিক, লালবাজারের একাংশ তা মানছেন। কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইটে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় আপাতত মোট ৫৮ জন। এর মধ্যে আমেরিকান সেন্টার হামলায় অভিযুক্ত তথা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)-এর প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য আমির রেজা খান বা খুররম খৈয়মের মতো লোক যেমন রয়েছে, তেমন আছে শাহ আলমের মতো ডাকাতির আসামিও। লালবাজার-সূত্রের খবর, কলকাতা গোয়েন্দা-পুলিশের প্রতিটি বিভাগ ঠিক করে, তাদের খাতায় পলাতকদের মধ্যে কাকে কাকে হাতে পাওয়া সবচেয়ে জরুরি। প্রতি বিভাগের নির্বাচিত নাম গোয়েন্দা বিভাগের ক্রিমিন্যাল রেকর্ড সেকশন (সিআরএস)-এ পাঠানো হয়। সেই সব নিয়ে সিআরএস বানায় কলকাতা পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ লিস্ট।
তা হলে কাদেরের নাম তালিকায় দেওয়া হবে কি হবে না, সেটাও তো ঠিক করেছে কোনও একটা বিভাগ! কোন বিভাগ? পুলিশ-সূত্রের খবর: পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণের তদন্তভার রয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের উইমেন গ্রিভ্যান্স সেলের হাতে। মামলার তদন্তকারী অফিসারও ওই সেলের মহিলা ইন্সপেক্টর। কিন্তু পুরো মামলাটি গোড়া থেকে তদারকি করছে গুন্ডাদমন শাখা। এক পুলিশকর্তার দাবি: ঘটনার দু’সপ্তাহ বাদে চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিলেন গুণ্ডাদমনেরই গোয়েন্দারা, যাঁরা কাদেরের খোঁজও চালাচ্ছেন। আর এর প্রেক্ষাপটে লালবাজারের একাংশের দাবি, কাদেরের নাম ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকবে কি না, প্রাথমিক ভাবে গুন্ডাদমনের অফিসারদেরই তা ঠিক করার কথা।
দায়িত্ব যারই থাক, কাদেরের নাম তালিকায় নেই। কারণটা কী হতে পারে? লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। কলকাতা পুলিশের যুগ্ন কমিশনার (অপরাধ) পল্লবকান্তি ঘোষ মঙ্গলবার শুধু বলেন, “টেকনিক্যাল কারণেই কাদেরের নাম মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় রাখা হয়নি।”
‘টেকনিক্যাল’ কারণটি যে কী, তার ব্যাখ্যা অবশ্য দেননি পল্লবকান্তিবাবু।
|