সুর নরম করেও গুরঙ্গ আন্দোলনেই
রাজ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। কিন্তু সেই সঙ্গেই গোর্খাল্যান্ড নিয়ে আন্দোলনের পথ থেকেও তারা সরে দাঁড়াতে নারাজ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড় ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দার্জিলিংয়ের চকবাজারে এক দলীয় সমাবেশে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ জানিয়ে দিলেন, গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন চলবে, তবে পাহাড়ে কোনও অশান্তি হবে না। তাঁরা পাহাড়ে আর বন্ধও ডাকবেন না। বরং উন্নয়নের দিকে তাঁদের দৃষ্টি থাকবে।
এ দিন খোদ গুরুঙ্গের মুখ থেকেই আর বন্ধ হবে না শুনে স্বস্তি পেয়েছেন পাহাড়বাসী। এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও মোর্চার প্রতিনিধিরা সে কথা বলেছেন। কিন্তু ভিড়ে ঠাসা জনসভায় খোদ গুরুঙ্গের ‘আর পাহাড়ে বন্ধ হবে না’ ঘোষণায় স্বস্তিতে রাজ্য সরকারও। সেই সঙ্গে কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়েই পাহাড়ে নির্ভয়ে বেড়াতে যাওয়ার জন্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আহ্বানও করেছেন গুরুঙ্গ। গুরুঙ্গ বলেন, “পাহাড়ে কোনও অশান্তি হবে না। কোনও বন্ধ হবে না। আমাদের সকলে নির্ভয়ে পাহাড়ে আসতে পারেন। কারও কোনও অসুবিধে হবে না।” তাঁর কথায়, “আমাদের দলের একাংশ জিটিএ চালিয়ে পাহাড়ের উন্নয়ন করবেন। অন্য অংশ গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।” গুরুঙ্গ জানান, গোখার্ল্যান্ডের দাবিতে ২০ ডিসেম্বর দিল্লিতে গিয়ে তিন দিন ধরে মহা মিছিল, অবস্থান করবে মোর্চা।
এ দিন দার্জিলিংয়ের পথে বাগডোগরায় নেমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। পাহাড় সমস্যা সমাধানে তাঁর ভূমিকাকে ‘গ্রেট জব’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। দার্জিলিঙে থাকাকালীন মোর্চার সঙ্গে দেখা করবেন কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল বলেন,“ মোর্চা যদি কোনও বিষয় নিয়ে দেখা করতে চায়, তাহলে আমার কোনও আপত্তি নেই।” এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বাগডোগরায় পৌঁছন রাজ্যপাল। সেখান থেকে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ব্যক্তিগত সফরে সড়কপথে দার্জিলিঙে যান। আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেখানেই থাকবেন।
মোর্চার অন্দরের খবর, অস্তিত্বের সঙ্কট থেকেই গুরুঙ্গ এ দিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলেছেন। এক দিকে, জিটিএ চালানোর কথা বলে, বন্ধ না-করার ঘোষণা করে ফের রাজ্যের কাছাকাছি হতে চাইছেন। যাতে সাম্প্রতিক আন্দোলনে ধৃত মোর্চা নেতা-কর্মীরা তাড়াতাড়ি ছাড়া পান এবং সিআরপি প্রত্যাহৃত হয়। কিন্তু গোর্খাল্যান্ডের দাবি জিইয়ে না রাখলে পাহাড়ে তাঁদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে। জিএনএলএফ, গোর্খা লিগ, সিপিআরএমের মতো দলগুলি পাহাড়ে মোর্চার বিরোধিতায় সুর চড়িয়ে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করতেও পারে। সেই জন্য গোর্খাল্যান্ড নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছেন মোর্চা সভাপতি। সেক্ষেত্রেও লোকসভা ভোটের আগে দিল্লির উপরে চাপ বাড়ানোর কৌশলও নিয়েছেন।
তবে আগের মতো চড়া স্বরে না হলেও, এ দিন মুখ্যমন্ত্রীরও সমালোচনা করেছেন গুরুঙ্গ। গুরুঙ্গ সভায় এবং তারপরে সাংবাদিক বৈঠকে জানান, মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা পাহাড়ে সব সময় স্বাগত জানান। মোর্চা কখনও বাধা দেয় না। গুরুঙ্গ বলেন, “কিন্তু তিনি প্রতিটি সফরে এলে নানা সম্প্রদায়ের লোকজন তাঁর সঙ্গে দেখা করে উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের দাবি করেন। লেপচাদের তেমন পর্ষদ তৈরিও হয়েছে। অথচ তিনি জিটিএ চালিয়ে পাহাড়ের সামগ্রিক উন্নয়ন করতে বলছেন। আরও কিছু সম্প্রদায় কিন্তু তাদের বোর্ড হবে বলে আশা করছে।” তাঁর কটাক্ষ, “এই বিভাজনের জন্য পাহাড়ে অশান্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমরাও সংশয়ে রয়েছি।”
নিজের হয়ে সাফাইও দিয়েছেন গুরুঙ্গ। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে আমি বলতে চাই, আমি শুধু লড়াই-ঝগড়া করতে রাজনীতি করতে আসিনি। পাহাড়ে শান্তি রাখার চেষ্টা করেছি। কখনও হিংসার পথে যাইনি। আমি চাই, আপনি আরও বেশি করে পাহাড়ে আসুন। নির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা আনুন। কিন্তু, আমার অনুরোধ, বিভাজনের জন্য নানা বোর্ড গঠনের পথে হাঁটবেন না। এর ফলে সামগ্রিক উন্নয়ন কী ভাবে হবে?”
এদিন সভার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গুরুঙ্গ এ কথাও জানিয়ে দেন, তাঁকে ফের জিটিএ চিফ হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমার লক্ষ্য জিটিএ চিফ হওয়া নয়। কারণ জিটিএ গোর্খাল্যান্ডের স্বপ্নের চেয়ে বড় নয়। সেটা মাথায় রেখেই পদক্ষেপ করব।”
বিমল গুরুঙ্গের মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মুকুল রায় বলেন, “কোনও ব্যক্তি কী বলল, তাতে পাহাড়ের কিছু এসে যায় না। সেখানকার মানুষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারবার কাছে পেতে চান। তাঁরা শান্তি চান। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বিপুল সংখ্যায় জমায়েত হয়ে পাহাড়ের মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা অশান্তি চান না।”

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.