ঘটনার পর থেকে এ রাজ্য-সে রাজ্য ঘুরে বেড়াচ্ছিল রফিকুল ইসলাম গাজি। শুক্রবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার শাসনে ঢুকেছিল সে। নিজের ক্লাবে বসে দিব্যি ক্যারমও খেলছিল। সেখান থেকেই কামদুনি গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনার অন্যতম আসামিকে কিছুটা কাকতালীয় ভাবেই ধরল পুলিশ।
গত কয়েক দিন ধরে শাসনে সংঘর্ষ ও বোমাবাজি চলছিল। তারই জেরে শনিবার রাতে এলাকায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। ধরা পড়ে আট জন দুষ্কৃতী। উদ্ধার হয় বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র। সেই সময়ই শাসনের পাড় খড়িবাড়ি এলাকা থেকে ধরা পড়ে রফিকুল। তখন সে স্থানীয় একটি ক্লাবে ক্যারম খেলছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ক্লাবঘরটি এক সময়ে ছিল সিপিএমের পার্টি অফিস। রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১১ সালে ওই পার্টি অফিসটির দখল নেয় রফিকুল ও তার ভায়রা নুর আলি-সহ কিছু তৃণমূল সমর্থক। তার পরেই ওই অফিসেই তৈরি হয় ক্লাবঘর। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, নুর আলি কামদুনি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত আনসার আলির ঘনিষ্ঠ। আনসারের সঙ্গে ভেড়ি ব্যবসা দেখত সে-ও। নুরের মাধ্যমেই আনসারের সঙ্গে যোগাযোগ হয় রফিকুলের। |
রবিবার রফিকুলকে বারাসতের বিশেষ আদালতে তোলা হলে তাকে সাত দিনের সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। কামদুনি মামলার বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি অনিন্দ্য রাউত বিচারকের কাছে আবেদন করেন, রফিকুলকে জেরা করা, তার ডাক্তারি পরীক্ষা, তার কাছ থেকে জিনিসপত্র উদ্ধার (ঘটনার দিন যে জামা-প্যান্ট পরেছিল সে) ইত্যাদির স্বার্থে তাকে সিআইডি হেফাজতে নেওয়া দরকার। বিচারক দেবাশিস সাঁতরা তা মঞ্জুর করেন।
৭ জুন কামদুনিতে বাড়ির কাছেই গণধর্ষণ করে খুন করা হয় রাজারহাট ডিরোজিও কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে। ঘটনার পরে রফিকুল, আনসার আলি-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে মৃতার পরিবার। এ দিন অনিন্দ্যবাবু বলেন, “সিআইডি ২৮ জুন ছয় জনের নামে চার্জশিট দেয়। এর পরে ১০ জুলাই অতিরিক্ত আরও তিন জনের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়। সেই অতিরিক্ত চার্জশিটে রফিকুলের নাম ছিল।” সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ন’জনের মধ্যে শুধু রফিকুলই ছিল অধরা।তার খোঁজেই এত দিন চলছিল তল্লাশি। তবে রফিকুলের স্ত্রী তাঞ্জিরা বিবি অবশ্য আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, “ঘটনার দিন আমার স্বামী বাড়িতেই ছিল। ওকে ফাঁসানো হয়েছে।” জেলা পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমরা বলেছিলাম, কামদুনির ঘটনায় সব অপরাধীকেই ধরা হবে। ও এত দিন পালিয়েছিল, অবশেষে পুলিশ ধরেছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই হবে।”
|