শপথগ্রহণ হয়ে গিয়েছে মাস দুয়েক আগে। কিন্তু আইনি জটে থমকে রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া। এর ফলে নানা নাগরিক পরিষেবা ও উন্নয়নমূলক কাজ থেকে সালানপুরের বাসিন্দারা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি করেছে নানা রাজনৈতিক দল। যদিও মহকুমা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আদালতে বিচারাধীন একটি মামলার রায় বেরোলে বোর্ড গঠন হবে।
সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতি এ বার দখল করেছে বামফ্রন্ট। গত ৩১ অগস্ট জয়ী প্রার্থীদের শপথগ্রহণ হয়। সভাপতি ও সহ-সভাপতিও মনোনীত হয়েছেন। কিন্তু কর্মাধ্যক্ষেরা মনোনীত হননি। গঠন হয়নি স্থায়ী কমিটিও। ফলে, পরিচালন সমিতি পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বোর্ড গঠন থমকে থাকার পিছনে রয়েছে বাসুদেবপুর-জেমারি পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচনের পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে সিপিএমের দায়ের করা মামলা।
আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, নির্বাচিত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানেরা ক্ষমতাবলে পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন। এ ছাড়া সমিতির বিভিন্ন দফতরের কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচনে পঞ্চায়েত প্রধানেরা ভোট দেওয়ার অধিকারী। সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে এই প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার কথা বাসুদেবপুর-জেমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের। কিন্তু সেই প্রধান নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে মামলা চলায় পঞ্চায়েত সমিতিরও বোর্ড গঠন থমকে আছে। কবে এই সমস্যা মিটবে, সে প্রশ্নে মহকুমাশাসক বলেন, “বিষয়টি বিচারাধীন। কোনও মন্তব্য করব না। তবে চাই, দ্রুত সমাধান হোক।”
বাসুদেবপুর-জেমারি পঞ্চায়েতের প্রধানের পদটি তফসিলি জাতির মহিলা প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত। গত ১৬ অগস্ট প্রধান নির্বাচনের দিন সিপিএম এবং তৃণমূল দু’দলই এই পদের জন্য প্রার্থী দেয়। নির্বাচন আধিকারিক দু’দলের প্রার্থীকে তফসিলি জাতির শংসাপত্র দেখাতে বলেন। সিপিএম প্রার্থী শংসাপত্র দেখালেও তৃণমূল প্রার্থী জানান, তা বাড়িতে রয়েছে। নির্বাচন আধিকারিক তাঁকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেটি নিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু তৃণমূল প্রার্থী সেটি সময় মতো আনতে না পারায় সিপিএম প্রার্থীকে প্রধান পদে নির্বাচন করা হয়।
এর পরেই বিক্ষোভ শুরু করে তৃণমূল। দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয় প্রশাসনের আধিকারিকদের। এর পরে ওই নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিল করে ২৩ অগস্ট ফের প্রধান নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে ব্লক প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তেরই প্রতিবাদে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে সিপিএম। তাঁদের দাবি, অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রথম বারের নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে। ২৩ অগস্ট বামেদের কেউ যোগ না দেওয়ায় প্রধান নির্বাচিত হন তৃণমূলেরই সদস্য। কিন্তু এর পরেই সিপিএমের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন প্রক্রিয়াটির উপরে স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই মামলার এখন শুনানি চলছে।
এর জেরে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন না হওয়ায় নাগরিক পরিষেবার কাজ প্রায় হচ্ছেই না বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সালানপুর, রূপনারায়ণপুর-সহ নানা এলাকা প্লাবিত হয়। কিন্তু সমিতির তরফে কোনও পরিষেবাই পাননি নাগরিকেরা। নিয়মিত এলাকা সাফাই, আবর্জনা পরিষ্কার হচ্ছে না। উৎসবের মরসুমেও এলাকার রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কার হয়নি। রাস্তায় আলো লাগেনি। উন্নয়নমূলক কাজ যে বন্ধ পড়ে আছে, তা স্বীকার করেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জগদীশ মালাকার। তিনি বলেন, “দ্রুত আইনি জট কাটলে ভাল হয়। কাজ করতে পারছি না।” এই পরিস্থিতির জন্য সিপিএমকে দায়ী করেছে তৃণমূল। দলের ব্লক সভাপতি ধরম কর্মকারের দাবি, অবিলম্বে সিপিএমের মামলা তুলে নেওয়া উচিত। কংগ্রেসের প্রদেশ সদস্য তথা সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহ-সভাপতি শ্যামল মজুমদারেরও দাবি, “অযথা আইনি জটিলতা তৈরি করে পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। প্রশাসন দ্রুত সমাধানের রাস্তা বের করুক।” সিপিএমের বারাবনি জোনাল সম্পাদক অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বাসুদেবপুর-জেমারির প্রধান নির্বাচন নিয়ে মামলার জেরে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গড়া যাচ্ছে না, এ কথা মানতে চাননি। |