|
|
|
|
সালানপুরে আজ বোর্ড গঠন |
গোপন আস্তানায় সিপিএম সদস্যেরা, কংগ্রেস গৃহবন্দি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
কেউ গিয়েছেন অন্তর্ধানে। কেউ আবার রয়েছেন গৃহবন্দি। ভয় বা প্রলোভন, কোনও কিছু যাতে তাদের ছুঁতে না পারে, সে জন্য পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের আগে দলের সদস্যদের ব্যাপারে এমনই নানা পন্থা নিয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেস।
আজ, শনিবার সালানপুর ও বারাবনি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন হওয়ার কথা। বারাবনি পঞ্চায়েত সমিতি নিরঙ্কুশ ভাবে দখল করেছে তৃণমূল। কিন্তু সালানপুরে ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানে ২৩টি আসনের মধ্যে ১১টি পেয়েছে বামেরা। তৃণমূল ৮টি ও কংগ্রেস পেয়েছে ৪টি। ফলে, এই পঞ্চায়েত সমিতিতে কে বোর্ড গঠন করবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনও চিন্তায়। কারণ, এর আগে গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের সময়ে বাসুদেবপুর-জেমারিতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় প্রধান নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছিল। বিডিও এবং যুগ্ম বিডিও-কে প্রায় সাত ঘণ্টা ঘেরাও করে রেখেছিল তৃণমূল। সেখানকার প্রধান নির্বাচন প্রক্রিয়া আজও ঝুলে রয়েছে। তাই সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনেও গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।
এর মধ্যে আবার তাদের সদস্যদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, পুলিশের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। শনিবার ব্লক অফিসের আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন থাকবে। অবস্থার গুরুত্ব বুঝে পুলিশ যদি পুরো চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি করতে চায় তবে মহকুমা প্রশাসন সেই অনুমতিও দিতে পারে। তিনি বলেন, “নির্বিঘ্নে বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে আমরা কোনও আপস করব না।”
প্রশাসনের এই আশ্বাসবাণীতে অবশ্য পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না কংগ্রেস ও সিপিএম নেতারা। তাঁদের দাবি, হুমকি থেকে জয়ী সদস্যদের প্রশাসন যদিও বা রক্ষা করতে পারে, অর্থের প্রলোভনের হাত থেকে পারবে না। আর সেই কারণেই সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির ১১ জন সদস্যকে গোপন ঠিকানায় পাঠিয়েছে সিপিএম। শনিবার বোর্ড গঠনের খানিক আগে কয়েক হাজার দলীয় কর্মী-সমর্থকের ঘেরাটোপে তাঁদের ব্লক অফিসে নিয়ে যাওয়া হবে বলে সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে। দলের বারাবনি জোনাল সম্পাদক অসীম বন্দোপাধ্যায়ের দাবি, “এ ছাড়া আর উপায় ছিল না। তৃণমূল যে ভাবে হুমকি ও টাকার লোভ দেখাচ্ছে, তা থেকে সদস্যদের বাঁচাতে এই পথই বেছে নিতে হল।” ওই ১১ জনকে কোথায় রাখা হয়েছে তা অবশ্য খোলসা করেননি অসীমবাবু।
কংগ্রেসের তরফে আবার দাবি করা হয়েছে, শনিবার সালানপুরে বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ায় তাদের চার সদস্য যোগ দেবেন না। এই পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী সদস্য তথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শ্যামল মজুমদারের বক্তব্য, “সবাইকে গৃহবন্দি হয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছি। কোনও দলের কারও সঙ্গেই দেখা করা বা কথা বলার ব্যাপারে নিষেধ করেছি।” এর কারণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, তৃণমূল কোনও ভাবে তাঁদের সদস্যদের নিজেদের পক্ষে নিতে পারলেই পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে ফেলবে। তাতে আখেরে কংগ্রেসের ক্ষতি হবে বলেই এমন সিদ্ধান্ত, দাবি শ্যামলবাবুর।
তৃণমূল নেতারা যদিও ভয় দেখানো বা প্রলোভনের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। সালানপুরে তৃণমূলের নিবাচর্নী পর্যবেক্ষক পাপ্পু উপাধ্যায়ের দাবি, বোর্ড গড়তে হলে তাঁদের আরও চার জনের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু তা পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে, হুমকি দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। তাঁর কথায়, “নিজেদের কর্মীদের উপরে নিয়ন্ত্রণ বা ভরসা সিপিএম ও কংগ্রেসের নেই। তাই আমাদের উপরে দোষারোপ করছে।” বারাবনিতে ২১টি আসনের মধ্যে ১৬টি পেয়ে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গড়বে তৃণমূলই। পাপ্পুবাবু জানান, সেখানে সভাপতি হিসেবে বুধন বাউরি ও সহ-সভাপতি হিসেবে সজল চক্রবর্তীর নাম স্থির করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|