প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি ইউনিট গড়া হতে চলেছে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার (ডিএসপি) ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে। বর্তমানে ওই প্ল্যান্টে ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি ইউনিট রয়েছে। কারখানার ভিতরে ও বাইরে বাড়তে থাকা বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতেই নতুন ইউনিট দু’টি গড়ার পরিকল্পনা হয়েছে বলে সেল সূত্রে জানা গিয়েছে।
পঞ্চাশের দশকে গড়ে ওঠে এই ডিএসপি কারখানা। তখন বছরে ১০ লক্ষ টন ক্রুড স্টিল প্রস্তুত করা ছিল লক্ষ্যমাত্রা। সত্তরের দশকে লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ লক্ষ টনে। কিন্তু ইস্পাতের বাজার পড়ে যাওয়া ও পুরনো প্রযুক্তির কারণে আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে মন্দা দেখা দেয় কারখানায়। তার প্রভাব এসে পড়ে ডিএসপি টাউনশিপে, যেখানে আবাসনের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। মৃতপ্রায় হয়ে ওঠে সেই সময়ে মূলত ডিএসপি নির্ভর দুর্গাপুর শিল্পনগরীও। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ডিএসপি-র আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। বর্তমানে এই কারখানায় বছরে ২.০৮৮ মিলিয়ন টন হট মেটাল, ১.৮ মিলিয়ন টন ক্রুড স্টিল এবং ১.৫৮৬ মিলিয়ন টন বিক্রয়যোগ্য ইস্পাত উৎপাদন হয়ে থাকে। কারখানার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ায় শিল্পনগরী দুর্গাপুরও।
আধুনিকীকরণের পরে কারখানায় বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি)-এর সঙ্গে সেল যৌথ ভাবে গড়ে তোলে এনটিপিসি-সেল পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (এনএসপিসিএল)। দুই সংস্থার অর্ধেক অংশীদারিত্ব। ২০০১-এর মার্চে ডিএসপি-র ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট দু’টি অধিগ্রহণ করে নতুন সংস্থা। কারখানা ও কারখানার বাইরে টাউনশিপ, একাধিক স্কুল, ৬৪০ শয্যার ডিএসপি হাসপাতাল, চারটি প্রেক্ষাগৃহ, স্টেডিয়াম, পার্কে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় এই ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকেই।
সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগের ইউনিট দু’টির মিলিত ক্ষমতা ১২০ মেগাওয়াট। ২০১১-১২ বর্ষে এই দুই ইউনিট থেকে ১০৪০.৮ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় যা বছরে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতার ৯৮.৭ শতাংশ। তবে গত আর্থিক বর্ষে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতার ৯০.৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পেরেছে ইউনিট দু’টি। কারিগরি কারণেই একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার পরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিটগুলির কার্যকারিতা কমতে থাকে। কিন্তু, কারখানা ও কারখানার বাইরে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। তা ছাড়া, নাগরিক চাহিদা মেটাতে এনএসপিসিএল আবার বাড়তি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে দেশের কিছু এলাকাতেও। গত জুনে দুর্গাপুরে ১৫০০ কোটি টাকা লগ্নি করে বার্ষিক ৫ লক্ষ টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ‘আয়রন ওর নাগেট প্ল্যান্ট’ গড়ে তুলতে জাপানের কোবে ইস্পাতের সঙ্গে চুক্তি করেছে সেল। পরিবেশ বিষয়ক ছাড়পত্র জোগাড়ের প্রক্রিয়া চলছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের সাংসদ সাইদুল হক কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রকের কাছে অবিলম্বে ডিএসপি-তে নতুন ইউনিট গড়ে তোলার আর্জি জানান। সাংসদ বলেন, “সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী বেণীপ্রসাদ বর্মা আমাকে চিঠি দিয়ে দুর্গাপুরে আরও দু’টি নতুন ইউনিট গড়ার পরিকল্পনা সেলের বোর্ড অনুমোদন করেছে বলে জানান। প্রতিটি ইউনিট ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫৬ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা।”
এনএসপিসিএলের দুর্গাপুরের এক আধিকারিক জানান, ডিএসপি-র পুরনো ক্যাপটিভ প্ল্যান্ট নিয়েই এনএসপিএলের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০১ সালে। ডিএসপি-র আধুনিকীকরণের পরে কারখানায় যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে বহু গুণ। ফলে, বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। একই পরিস্থিতি ডিএসপি-র অধীন অন্য কারখানাতেও। সব মিলিয়ে প্রতিদিন দরকার প্রায় ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কাজেই, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুর্গাপুরের জন্য বিদ্যুৎ ধার করতে হয় এনএসপিসিএল-কে। ওই আধিকারিক বলেন, “সে জন্য ৬০ মেগাওয়াট বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি ৪০ নেগাওয়াটের অনুমোদন মিলেছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।” |