শেষ রঞ্জি ম্যাচে পাচ্ছেন সবুজ পিচ
‘ভূশণ্ডির’ মাঠে উধাও ক্রিকেটের ভগবান
রোহতাক বাজার থেকে ডান দিকের যে রাস্তাটা নাক বরাবর চলে গিয়েছে, বঙ্গজ লোকজনের সেটাকে খুব অচেনা মনে হবে না।
স্বল্পপরিসর রাস্তার দু’ধারে যত দূর যায় ধু-ধু মাঠ, মাঝেমধ্যে কয়েকটা উল্টে থাকা ল্যাম্পপোস্ট, কালেভদ্রে মাটির দু-একটা বাড়ি, বিশাল জায়গা জুড়ে নাম-না-জানা কিছু সবুজের জঙ্গল, ঝিঁঝিঁ-র শশব্যস্ত ডাকাডাকি, পড়ন্ত বিকেলে কুয়াশার চাদর শীতের আগমনীতে বঙ্গদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের যে দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, লাহলি-র সঙ্গে তার সাদৃশ্য প্রচুর। সময়-সময় মনে হবে, এ তো পরশুরামের বই থেকে আস্ত ভূশণ্ডির মাঠটাই উঠে এসেছে! এখানে আবার ক্রিকেট স্টেডিয়াম? মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটলেই বোধহয় ভাবা যায়, নইলে নয়!
কেউ এর পর বিশ্বাস করবে, ওখানে আস্ত একটা ক্রিকেট স্টেডিয়াম সত্যিই আছে, এবং কয়েক ঘণ্টা পর ব্যাট-প্যাড-গ্লাভস নিয়ে নামতে চলেছেন ক্রিকেট-দেবতা স্বয়ং!
কেউ বিশ্বাস করবে, জীবনের শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ সচিন রমেশ তেন্ডুলকর খেলতে নামছেন হরিয়ানার এমন এক গ্রামের স্টেডিয়ামে, যার সামনের রাস্তায় কাউকে ছেড়ে দেওয়া মানে তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছনো নির্ভর করবে ঈশ্বরের উপর! পথচলতি গাড়ি-ঘোড়া ভুলে যান, পদব্রজে যাত্রা সম্ভব একমাত্র।
কেউ বললে বিশ্বাস করবে, দিল্লি এয়ারপোর্টে পা দেওয়া মাত্র রঞ্জির অতিথি টিমকে দু’টো ভাগে ভেঙে ফেলা হল চটপট। একটা টিমের নাম মুম্বই, অন্য ‘টিমটার’ নাম সচিন তেন্ডুলকর! এবং হরিয়ানার সাম্রাজ্যে লিটল মাস্টার পা দিলেন কি দিলেন না, তাঁকে মোটামুটি ‘উধাও’ করে দিল রাজ্য প্রশাসন, খুব সহজে মিনিট কয়েকের মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হল প্রায় ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’!
আশ্চর্য শোনালেও সত্যি যে, অবসরের পৃথিবীর দিকে ধীরে ধীরে এগোনো মহানায়ককে ঘিরে শুক্রবারের হরিয়ানায় যা চলল, তাতে আস্ত একটা মুচমুচে ‘থ্রিলার’ লিখে ফেলা যায়। সচিনকে ঠিক কোথায় রাখা যায়, তা নিয়ে শেষ এক সপ্তাহ ভেবেচিন্তেও কোনও কুল-কিনারা পাচ্ছিল না হরিয়ানা ক্রিকেট সংস্থা। কারণ তাঁর মতো আন্তর্জাতিক মহাতারকার উপযোগী কোনও হোটেল গোটা রাজ্যে নেই। মাঝে ঠিক হয়, উপায় যখন নেই তখন রোহতাকের সেরা হোটেলেই টিমের সঙ্গে রাখা হবে সচিনকে। কিন্তু এ দিন মুম্বই টিম দিল্লিতে নামামাত্র আবিষ্কার করল, সর্বশেষ ওই পরিকল্পনাও মোটামুটি ঘেঁটে ‘ঘ’। টিম যাবে বাসে, নিজেদের মতো। সচিন যাবেন ভিভিআইপি গাড়িতে, রাজ্য সরকারের বিশিষ্ট নিরাপত্তাবেষ্টনী সমেত। আর উঠবেন কোথায়? সেটা মিডিয়া বা আর পাঁচজনকে জানানো দূরস্থান, মুম্বই টিমকেই জানানো হল না। নইলে এ দিন সন্ধেয় টিম হোটেলে শুকনো মুখে মুম্বই মিডিয়া ম্যানেজার শ্রীকান্ত টিগডি কেন-ই বা বলবেন, “আমরা শুধু জানি যে সচিন তেন্ডুলকর শনিবার সকাল দশটায় প্র্যাকটিসে আসবে। কিছু আর জানলে তো বলব?”
কিন্তু তাতে তো আর জল্পনা আটকানো যায় না। বিকেল বিকেল অন্তত পাঁচ রকম কাহিনি শোনা গেল তাঁর সম্ভাব্য গতিবিধি নিয়ে। কেউ বলতে থাকলেন, সচিন এ দিন হরিয়ানায় ঢোকেনইনি। দিল্লিতেই থেকে গিয়েছেন। কখনও সরকারি গেস্টহাউসে ফোন করে জানা গেল, আজ কোনও ভাবেই নয়, তাঁর নামে বুকিং নাকি শনিবার থেকে। রাতের দিকে আবার খবর এল, তিনি আছেন রোহতাকেরই সার্কিট হাউসে, নির্দেশপ্রাপ্ত পুলিশের অতন্দ্র প্রহরায়। সব দেখলে-শুনলে মনে হবে, মহানায়কের সন্ধানে সাংবাদিক নয়, কোনও এক প্রদোষ চন্দ্র মিত্র-র বুঝি বেশি প্রয়োজন ছিল!
তবে তাঁর জীবনের শেষ রঞ্জি ম্যাচের বাইশ গজের চরিত্র ধরতে বোধহয় বিশেষ মগজাস্ত্র প্রয়োগের দরকার নেই। কয়েক বছর আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাংলা যে ধরনের উইকেট পেয়েছে, সচিনের মুম্বইও ঠিক তেমনই পাচ্ছে। উইকেটে ঘাস আছে ভাল রকম, বল আসবেও গতিতে, বাউন্সও পাওয়া যাবে যথেচ্ছ। পিচ কিউরেটর যশমের সিংহ-র কথা ধরলে, মোটামুটি সবুজ পিচ, বোলারদের পোয়াবারো, সকালের দিকে বল ভাল রকম সুইং করবে এবং কোনও ভাবে পাঁচশোর উইকেট নয়। কিউরেটর বলছিলেন, “যে ব্যাটিংটা পারে, তার কোনও সমস্যা হবে না। এখানে রেজাল্ট হবে।”
কিন্তু ঘটনা হল, পিচের মন-মেজাজ, মুম্বই বনাম হরিয়ানা সব তো কোথাও গিয়ে ফুটনোটে পরিণত। প্রাসঙ্গিক, শুধু তিনি ও তাঁর পাঁচ দিনের উপস্থিতি। ঠিক যে কারণে ওই একফালি গ্রামের স্টেডিয়ামেও বিয়েবাড়ির মেজাজ। যে কারণে আপাত-সাধারণ রঞ্জি ম্যাচেও মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিংহ হুডা-র উপস্থিতি। যে কারণে অতীতে তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থ ও বর্তমানে হরিয়ানার কোচ কাম ক্যাপ্টেন অজয় জাডেজার নস্ট্যাজলিক হয়ে সাংবাদিকদের বলে দেওয়া, “সচিন ক্রিকেট ছেড়ে দেবে, সেটা যেমন আমার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে, তেমনই নিশ্চয়ই ওরও হচ্ছে...।”
এক দিক থেকে ঠিক। সচিন রমেশ তেন্ডুলকরকে নিয়ে লাহলির উৎসবের আন্দাজ ছিল, সেটা আছে যথারীতি। কিন্তু কোথাও গিয়ে বিষাদের রেশও তো একটা থেকে যাচ্ছে সেখানে।
যতই হোক, রবিবার থেকে তো তাঁর শেষের শুরু।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.