চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
এই সময় ও ঐতিহ্যকে চিনতে শেখায় সমকালীন জীবন
ম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে ‘স্পেকট্রাম আর্টিস্টস সার্কল’-এর ৩৮তম সম্মেলক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল। প্রদর্শনীটি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সুপরিকল্পিত উপস্থাপনার জন্য। প্রত্যেক শিল্পী খুব যত্ন ও মন দিয়ে কাজ করেছেন। সমকালীন জীবনের কথা ভেবেছেন। আমাদের চিত্রকলার পরিচিত ঐতিহ্যকে প্রেক্ষাপটে রেখে তাকে এই সময়ের সাযুজ্যে বিস্তার করার চেষ্টা করেছেন। ফলে প্রদর্শনীটি এই সময় ও ঐতিহ্যকে চিনতে শেখায়। ভাবতে শেখায়। নিরন্তর বহু অগোছালো, অপরিকল্পিত প্রদর্শনীর ভিড়ে এ রকম একটি প্রদর্শনী দর্শককে তৃপ্ত করে।
এই দলটি গড়ে উঠেছিল ১৯৮২ সালে। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অনেকেই পরে দল ছেড়েছেন। নতুন শিল্পী যোগ দিয়েছেন। দলের যে কোনও নির্দিষ্ট দর্শন বা আন্দোলন ছিল, তা নয়। এটুকু ছিল যে তাঁরা ভাল করে ভাল ছবি আঁকবেন। জীবনের কথা বলবেন। এখন শিল্পের জগতেও নানা প্রতিকূল হাওয়া। সেখানে টিকে থাকতে হলে সংঘবদ্ধতা খুব দরকার। এ বারের প্রদর্শনীতে সেই ইঙ্গিত রয়েছে। অংশগ্রহণ করেছেন দশ জন শিল্পী।
অর্পিতা বসু ঐতিহ্যগত দেশীয় আঙ্গিকে কাজ করেন। এ বারের জলরঙে আঁকা ছবিটির শিরোনাম ‘
অ্যাট নাইট’। রাত্রিবেলায় শহরের নিসর্গ। প্রাচ্য পরিপ্রেক্ষিত রীতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা তাঁর ছবির একটি বৈশিষ্ট্য। এই ছবিটিতে আমরা দেখি কেমন করে অজস্র বহুতল বাড়ির প্রত্যেকটি তল, গৃহের অভ্যন্তর, আকাশের মেঘ ও পূর্ণ চাঁদ, পথের উপরের ল্যাম্পপোস্ট, গাছ, দাঁড়িয়ে থাকা রিকশা, পথের উপর খাটিয়ায় শুয়ে থাকা লোকজন সবই একই সঙ্গে চিত্রিত হয়। দৃশ্যের অন্তর-বাহির, দূর ও নিকটকে আমরা একই সঙ্গে দেখতে পাই। এ ভাবেই তিনি বেদনার মধ্যে সুপ্ত আনন্দকে উদ্ভাসিত করেছেন।
শিল্পী: অর্পিতা বসু
সুবুদ্ধ ঘোষের অ্যাক্রিলিকের বড় ক্যানভাসটির বিষয়ও স্থাপত্যের জ্যামিতি। বাড়ির বিভিন্ন তলকে তিনিও একসঙ্গে উপস্থাপিত করেছেন। আলো ছায়া ও জ্যামিতিক বিন্যাসে গগনেন্দ্রনাথের ছবির সঙ্গে কিছু সাযুজ্য অনুভব করা যায়। চারটি ছোট ছবিতেও তিনি ঘরের ভিতর ও বাইরেকে নিয়েই কাজ করেছেন।
বাসস্থান, অট্টালিকা, আবাসন, স্থাপত্য নিয়ে কাজ করেছেন আরও দু’জন শিল্পী। সমীর সাহা ও তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনেরই রচনা ক্যানভাসের উপর মিশ্রমাধ্যমে। দু’জনের ছবিই জ্যামিতিক। বাস্তবতার, অস্তিত্বের শূন্যতার দিকটা দেখাতে চেয়েছেন দু’জনেই। সমীরের ছবিতে দরিদ্রের ছোট ছোট বসতিপুঞ্জের পশ্চাৎপটে জেগে উঠেছে সুবিশাল বহুতল অট্টালিকা। দু’রকম জীবনধারা মিলে মিশে আছে। অথচ তাদের ভিতর কোনও সমন্বয় বা সহমর্মিতা নেই। তরুণের ছবিতে শুধুই হাইরাইজ। প্রকৃতিকে সম্পূর্ণ গলাধঃকরণ করে পুঞ্জীভূত হয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। বেঁকেচুরে গেছে। যেন নিজেরই ভারে পতনোন্মুখ। আজকের নগর-সভ্যতার নৃশংসতাকে তুলে ধরেছেন দু’জনেই।
বিশ্বজিৎ মণ্ডলের ছবিতেও এসেছে অস্তিত্বের সংকট। তাঁর আ্যাক্রিলিকের বড় ক্যানভাসটির শিরোনাম ‘উই আর নট সেফ অ্যাট অল’। বিস্তীর্ণ নিসর্গের দু’টি ভাগ। নিম্নভাগে দু’পাশে কালো জল, তাতে ভাসমান নৌকা। মাঝখানে আলোকিত পরিসরে ঘনসংবদ্ধ জীবনের বহুমুখী জটলা। উপরে শহরের ছায়াচ্ছন্ন অট্টালিকার পুঞ্জ। তাকে পিছনে রেখে উপস্থাপিত একটি বৃহদাকার মুখ। আদিমতাসম্পৃক্ত ঘনকবাদী রীতিতে আঁকা।
মলয়চন্দন সাহা তাঁর ক্যানভাসের উপর তুলি-কালির ছবিতে এই সময়ের নিহিত তমসাকে রূপায়িত করেছেন অবয়বী প্রতিমাকল্পে। প্রেক্ষাপট কালো। তার উপর সাদায় সংস্থাপিত ছায়াসদৃশ বিপন্ন মানুষ। শিরোনাম: ‘ডার্কনেস অ্যান্ড বিয়ন্ড’।
অনুপকুমার গিরি এঁকেছেন আদিবাসী নৃত্যের ছবি। রেখার গতিভঙ্গিতে নৃত্যের ছন্দের স্পন্দন এনেছেন। তাঁর ছোট ছবিতে বিভিন্ন ভঙ্গিতে আদিবাসী নারীর রূপায়ণ। দারিদ্র সত্তেও তাঁদের জীবনে পূর্ণতার বোধ আছে। মুরারীমোহন বসু তেলরঙের ক্যানভাসে স্বাভাবিকতা ও কল্পরূপকে মিলিয়ে উপস্থাপিত করেছেন নারীর তন্ময় রূপ। স্বপন পল্লে ‘শক্তি’ শিরোনামে এঁকেছেন শক্তিরূপিণী দেবী। বর্ষার নিসর্গ এঁকেছেন অঞ্জন সেনগুপ্ত। আঙ্গিকের পরিচ্ছন্নতা ও দায়বোধের জন্য প্রদর্শনীটি উল্লেখযোগ্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.