রাস্তা তো নয়, যেন মরণফাঁদ! কোথাও পিচ উঠে গিয়েছে, কোথাও আবার পিচ-বোল্ডার কিছুই নেই। রাস্তা জুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ও ইন্দাস ব্লকের বেশ কয়েকটি রাস্তার এমনই বেহাল দশা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পাত্রসায়র-বর্ধমান, রসুলপুর-ইন্দাস এবং খোসবাগ-শান্তাশ্রম রাস্তার। দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তাগুলির শোচনীয় অবস্থার জন্য ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। অবিলম্বে ওই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা। পাত্রসায়র থেকে বর্ধমান যাওয়ার রাস্তার মধ্যে কাঁকরডাঙা মোড়, হাট কৃষ্ণনগর, ফকিরডাঙা, ইদিলচক, রসুলপুর এলাকায় রাস্তার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। একই ভাবে ইন্দাসের খোসবাগ মোড় থেকে আউসনাড়া, শ্রীপুর, বেলবাঁধি, পাহাড়পুর হয়ে শান্তাশ্রম পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাও বেহাল। রসুলপুর থেকে কুমরুল, বিউর, খোসবাগ হয়ে ইন্দাস পর্যন্ত রাস্তায় দু’হাত অন্তর বড় বড় গর্ত। মঙ্গলবারই ওই রাস্তায় একটি বাস দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তা খারাপের জন্যই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রায় এক বছর ধরে ওই রাস্তাগুলির খারাপ অবস্থা। ইন্দাস ব্লকের আমরুল, ভগবানবাটি, কেনেটি, রসুলপুর, বাগমারি, আব্দুলপুর, করিশুন্ডা, পাত্রগাঁতি-সহ আশপাশের প্রায় ২০টি গ্রামের ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তা সংস্কারে হুঁশ নেই প্রশাসনের। |
কেনেটি-রসুলপুর গ্রামের অসিতবরণ দে বলেন, “শান্তাশ্রম থেকে এই রাস্তায় আগে বর্ধমান, বিষ্ণুপুর যাওয়ার ৬-৭ টি বাস চলত। বৃষ্টিতে রাস্তার অনেক জায়গায় বড় বড় গর্ত হয়েছে। পিচ, বোল্ডার সব উঠে গিয়েছে। রাস্তার এই দশা দেখে প্রায় সব বাস চলাচল বন্ধ হতে বসেছে। এখন মাত্র দু’টি বাস সারা দিনে যাতায়াত করছে।” এলাকার ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ, “বাস চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়ায় কলেজ ও টিউশনি পড়তে যেতে ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।” পাত্রসায়রের বাসিন্দা, স্বর্ণব্যবসায়ী উজ্জ্বল দত্তের কথায়, “দোকান খোলার জন্য প্রতিদিন চার বার পাত্রসায়র থেকে রসুলপুর যেতে হয়। আগের তুলনায় রাস্তার অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে পড়ছে। আমাদের মতো নিত্যযাত্রীরা চরম সমস্যায় পড়ছি।”
গাড়ি ও বাসের চালকদের ক্ষোভ, খন্দে ভরা রাস্তায় প্রায় দিনই গাড়ির যন্ত্রাংশ ভাঙছে। সময় মতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছনো যাচ্ছে না। এলাকার মানুষের অভিযোগকে সমর্থন করে তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কিছু কিছু এলাকায় রাস্তার অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ। রাস্তাগুলি অবিলম্বে সংস্কারের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি।” ইন্দাসের তৃণমূল বিধায়ক গুরুপদ মেটে অবশ্য দাবি করেন, খোসবাগ থেকে শান্তাশ্রম রাস্তাটি জেলা পরিষদের। বামফ্রন্ট পরিচালিত বিগত জেলা পরিষদ ওই রাস্তা সংস্কারে বিশেষ উদ্যোগী হয়নি। নতুন জেলা পরিষদ খুব শীঘ্রই রাস্তা সংস্কার করবে। ইন্দাসের বিডিও পুষ্পেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই আমরা জেলা পরিষদের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। জেলা পরিষদের তরফে রাস্তাটি সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।” রাজ্য পূর্ত দফতরের বাঁকুড়া ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শুভঙ্কর মাজি এবং পূর্ত দফতর (সড়ক)-এর বাঁকুড়া ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সৌগত সরকার জানান, ওই রাস্তাগুলি ভালভাবে সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, টানা বৃষ্টির জন্য কাজ আটকে রয়েছে। দ্রুত রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হবে।
|