মিডিয়ার সমালোচনার অদৃশ্য ইট-পাটকেল বেশ কিছু দিন ধরেই আছড়ে পড়ছিল তাঁর গায়ে। এ বার আক্ষরিক অর্থেই ক্রিকেটজনতার ‘মিসাইল’ ধেয়ে এল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দিকে। তা-ও কোথায়? না, নিজের পাড়ায়! রাঁচিতে!
বুধবারের ভারত-অস্ট্রেলিয়া ওয়ান ডে তখনও বৃষ্টিতে ভেস্তে যায়নি। সাক্ষী-সহ ধোনি পরিবারের বাকিরাও তখন জেএসসিএ স্টেডিয়ামে। আচমকাই হর্মু হাউজিং কলোনিতে ধোনির বাড়ির গায়ে আছড়ে পড়ে একের পর এক পাথর! বাংলো প্যাটার্নের বাড়িটার সামনে গাছের ‘দেওয়াল’ থাকায় সে দিকটা অক্ষত রয়েছে। কিন্তু মর্মর-আক্রমণে বাড়ির পিছন দিকের একটা জানলার কাচ ভেঙেও যায়।
ধোনির পরিবার থেকে সরকারি ভাবে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়নি। ভারত অধিনায়কের শ্যালক গৌতম গুপ্ত বলছিলেন, “যা দেখছেন, নতুন নয়। এই নিয়ে পাঁচ বার বাড়িটার উপর এ রকম হামলা হল। তবে আমরা এখনই কোনও অভিযোগ দায়ের করছি না। আগে সিসিটিভি ফুটেজ দেখব। দেখতে হবে আগে ঠিক কী হয়েছে। তার পর ভাবব। সব না জেনে কাউকে দোষ দেওয়াটা উচিত হবে না।”
ঠিক কী হয়েছে জানা না গেলেও শোনা যাচ্ছে, বুধবার রাতের ঘটনার পিছনে রয়েছেন রাঁচির কিছু অত্যুৎসাহী ক্রিকেট সমর্থক। তাঁদের মূল অভিযোগ বুধবার টস জিতে ধোনি কেন ফিল্ডিং নিলেন? কেন তাঁর শহরের লোকেদের ভারতীয় ব্যাটিং উপভোগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করলেন?
বুধবারের ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ ছিল রাঁচির নতুন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওয়ান ডে। চলতি সিরিজে যেখানে এক ইনিংসে তিনশোর আশেপাশে রান ওঠাটা নিয়ম হয়ে গিয়েছে, সেখানে গত জানুয়ারিতে রাঁচির ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে দু’ইনিংস মিলিয়ে তিনশোর গণ্ডি পেরিয়েছিল। মাত্র দশ মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পাওয়া শহরের লোকের খিদে মেটানোর পক্ষে সেটা যে যথেষ্ট নয়, বুধবার রাতের ঘটনাই তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। |
|
“যা দেখছেন, নতুন নয়। এই নিয়ে পাঁচ বার বাড়িটার উপর এ রকম হামলা হল।
তবে এখনই অভিযোগ দায়ের করছি না। আগে সিসিটিভি ফুটেজ দেখব। দেখতে হবে
ঠিক কী হয়েছে। তার পর ভাবব। সব না জেনে কাউকে দোষ দেওয়াটা উচিত হবে না।” গৌতম গুপ্ত (ধোনির শ্যালক) |
|
ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থার কেউ কেউ মনে করছেন, ‘শৌর্য-র আক্রান্ত হওয়ার পিছনে পরোক্ষ ভাবে হলেও বৃষ্টির ভূমিকা রয়েছে। বৃষ্টিতে বুধবার ম্যাচ ভেস্তে না গেলে দ্বিতীয় ইনিংসে শিখর ধবন-বিরাট কোহলি-ধোনিদের ব্যাট করার সুযোগ হাতছাড়া হত না প্রায় ফুল-হাউজ স্টেডিয়ামের। ক্যাপ্টেন কুলের বাড়িতেও তখন আর ইট-পাটকেল পড়ত না। ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থার এক কর্তা যেমন ফোনে বলছিলেন, “প্রচুর টাকা খরচ করে এরা সবাই কোহলি-ধোনিদের ব্যাটিং দেখতে এসেছিল। সেটা হল না। এখানে পরে আবার কবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হবে, কেউ জানে না। কেন এত হতাশা, বোঝা যায়।”
ঘটনা হচ্ছে, রাঁচির মতো কটকের দর্শকদের কপালেও শনিবার হতাশা থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। গত চার-পাঁচ দিন ধরে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি চলছে ওড়িশার উপকুলে। বৃহস্পতিবারও ব্যতিক্রম ছিল না। সারা দিন ধরেই তুমুল বৃষ্টি। টিম ইন্ডিয়া যার জন্য প্রথমে শুক্রবার প্র্যাক্টিস করবে না বলে দিয়েছিল। পরে অবশ্য ঠিক হয়েছে, ঘণ্টাদুয়েক ইন্ডোরেই প্র্যাক্টিস করবেন ধোনিরা। এই অবস্থাতেও অবশ্য ওড়িশা ক্রিকেট সংস্থার কর্তারা আশা ছাড়তে রাজি নন। বরাবাটি স্টেডিয়ামের পিচ কিউরেটর পঙ্কজ পট্টনায়ক এবং সংস্থার সচিব আশীর্বাদ বেহরা দু’জনেই জানালেন, শনিবারের আগে একটা রোদ্দুরের দিন পেলেই ম্যাচ করে দেওয়া যাবে। |
সামি-বরণ। ভূবনেশ্বরে পা রেখে ধোনিরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই। |
যে আশাবাদ বোধহয় এখন টিম ইন্ডিয়ারও ভরসা। সিরিজে ভারত এখনও পিছিয়ে ১-২, বাকি আর তিনটে। কটকে যদি শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হয়, তা হলে এখনও অ্যাডভান্টেজ টিম ইন্ডিয়া। কারণ অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক জর্জ বেইলি রাঁচি ম্যাচ-উত্তর স্বীকার করে নিয়েছেন, মহম্মদ সামির ওষুধ এখনও তাঁদের হাতে নেই এবং সামির এ রকম ফর্ম চললে নাকি তাঁদের বেশ ভাল রকম ভোগান্তিও আছে! কিন্তু কটক ম্যাচ না হলে? টেনশন আরও বাড়বে। সিরিজ জিততে গেলে শেষ দু’টো ম্যাচ তখন জিততেই হবে। একটা ম্যাচ তখন হারা মানে, সব শেষ।
নিজের পাড়া কেন, গোটা ভারতবর্ষের ক্ষোভ যদি তখন ভারত অধিনায়কের দিকে ছুটে আসে, খুব অবাক হওয়ার থাকবে কী? |