বৃষ্টি ভাসা ম্যাচে সামির সুইংয়ে ‘বোল্ড’ সৌরভও
রের মাঠে ধোনির বিপর্যয়ের দিনে জোড়া বরাত পেয়ে গেলেন মহম্মদ সামি।
এক নম্বর যদি হয় সিরিজে তাঁর প্রথম ম্যাচে দুর্ধর্ষ বোলিং, তা হলে দু’নম্বরটা অবশ্যই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সার্টিফিকেট।
বুধবারের রাঁচিতে তিন উইকেটের পরে কি বাংলার পেসারের ভারতের টেস্ট টিমে ডাক পাওয়ার সময় এসেছে? শুনে সৌরভের স্ট্রেট ড্রাইভ, “ডাক পাওয়াই শুধু নয়, টেস্ট টিমে খেলা উচিত সামির।”
টেস্ট দলে ডাক পাওয়া আপাতত পরের প্রশ্ন। তবে দিন এক আকাশ মেঘের নীচে, প্রায় ফুল -হাউজ রাঁচি স্টেডিয়ামে তাঁর পারফরম্যান্সের পরেও যদি ওয়ান ডে টিমে নিয়মিত মুখ না হন সামি, তার চেয়ে আশ্চর্যের বোধহয় আর কিছু হবে না। নিজের প্রথম ওভারেই তাঁর বল পিচ করে হাল্কা ইনসুইংয়ে উড়িয়ে দিল অ্যারন ফিঞ্চের স্টাম্প। কয়েকটা ওভার পর তাঁর বাউন্স ধরতে না পেরে খরচের খাতায় অস্ট্রেলিয়ার অন্য ওপেনার ফিল হিউজও। পরের বলে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা বিরাট কোহলি ক্যাচটা না ফস্কালে সামির শিকারের খাতায় থাকত জর্জ বেইলির নামও। অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক তখন ব্যাটিং। সিরিজে ব্যক্তিগত রানের তালিকায় এক নম্বরে থাকা বেইলিকে (৩১৮ ) তখন ফিরিয়ে দেওয়া গেলে অস্ট্রেলীয় ইনিংস ২৯৫ - পৌঁছত কি না, সন্দেহ আছে।

প্রথম স্পেলে তিন উইকেট। সামিকে অভিনন্দন রায়নার। ছবি : প্রশান্ত মিত্র।
সামির তিন নম্বর উইকেটটাও অবশ্য কম দামি নয়। শেন ওয়াটসন নামটা যে সব সময়ই বিপজ্জনক। দিন তাঁর আউট হওয়ার ধরনটা এক কথায় অবিশ্বাস্য। ব্যাট প্যাডের ভিতরে অল্প ফাঁক, আর সেটুকু দিয়েই ওয়াটসনের অফস্টাম্প বেলটা শুধু পড়ে গেল! আর প্রথম স্পেলের শেষে সামির বোলিং হিসেব দাঁড়াল:
মহম্মদ সামির সবচেয়ে বড় সুবিধে হচ্ছে, তিনি সিম আপ রেখে বলটা ছাড়েন। সঙ্গে পেসটাও ভাল হওয়ায় বল দু’দিকেই মুভ করতে থাকে। ভুবনেশ্বর কুমারের হাতে সুইং আছে, কিন্তু ঘণ্টায় একশো চল্লিশ কিলোমিটার তোলার সাধ্য নেই। ইশান্ত? তিনি যে কোনটা ঠিক ভাল পারেন, সেটা বোধহয় গুগল সার্চ দিয়েও পাওয়া যাবে না ! সৌরভ যেমন বলছিলেন, “সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সামির পেস। উপমহাদেশের উইকেটে কোনও ভারতীয় পেসারকে এই পেসে সুইং করাতে বিশেষ দেখা যায় না। সামি যে লেংথে বলটা রাখে, ওর সিম পজিশন যা, তাতে যে কোনও পিচে, যে কোনও পরিবেশে উইকেট পেতে বাধ্য।”
বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার পরে সামি নিজে বলছিলেন, “আমি সব সময় চেষ্টা করি পেসটা বাড়াতে। একশো চল্লিশে যদি রাখতে পারি, তা হলে যেমন আমার সুবিধে, আমার টিমেরও সুবিধে। আজ আমাকে বলে দেওয়া হয়েছিল, শুধু লাইন আর লেংথটা ঠিক রেখে বলটা করে যেতে। আমি সেটাই করে গিয়েছি।” দিনের পর দিন টিমের বাইরে বসে থাকার হতাশা তাঁকে নাড়ায় না। বরং সামি বলে দেন, “না, না সে সব কিছু না। আমার টিমমেটরা আমার সঙ্গে আছে। আমি ঠিক করেছিলাম, যে দিনই সুযোগ পাই, একশো শতাংশ দেব।”
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সামির পেস। উপমহাদেশের উইকেটে কোনও ভারতীয় পেসারকে এই পেসে সুইং করাতে বিশেষ দেখা যায় না। সামি বলটা যে লেংথে রাখে, ওর সিম পজিশন যা, তাতে যে কোনও পিচে, যে কোনও পরিবেশে ও উইকেট পেতে বাধ্য।
দিনের শেষে টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন্স লগবুকে প্রাপ্তি বলতে ওই একটাই নাম। বৃষ্টিতে প্রায় দু’ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকার পর শেষমেশ ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় শহরের ক্রিকেটদর্শক যতটা হতাশ, তার চেয়ে ধোনির হতাশা কম হওয়ার কথা নয়। সিরিজে ফিরতে গেলে যে ম্যাচটা তাঁকে জিততেই হত, সেখানে - তো হলই না, উল্টে বাকি তিনটে ম্যাচের আকাশ আরও কালো হয়ে থাকল। কটকেও প্রচণ্ড বৃষ্টি চলছে। আউটফিল্ড জলের তলায়। শনিবার সিরিজের পঞ্চম ম্যাচও রীতিমতো অনিশ্চিত।
এর সঙ্গে রয়েছে আরও কিছু প্রশ্ন। রাঁচির যে মেঘলা উইকেটে ভাল রকম সুইং হচ্ছিল, সেখানে ইশান্তের সঙ্গে সঙ্গে টিম থেকে ‘ঘচাং ফু’ হয়ে গেলেন ভুবনেশ্বরও। দিনের সবচেয়ে বিপজ্জনক বোলার সামি পুরো দশ ওভারের কোটা পেলেন না। তাঁর চেয়ে বেশি ওভার দেওয়া হল বিনয় কুমারকে। ৪৯ নম্বর ওভারে বল করতে চলে এলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, যিনি ধোনির তুরুপের তাস থেকে ক্রমশ ‘ওনার্স এনভি, নেবার্স প্রাইড’ হয়ে চলেছেন। অস্ট্রেলীয় ইনিংসে ক্যাচ পড়ল হাফ ডজন। বেইলিকে ছাড়া হল দু’বার, ম্যাক্সওয়েলকে দু’বার এবং শেষ দিকে জনসন ফকনারকে এক বার করে। বেইলি এবং ম্যাক্সওয়েল দু’জনেই শেষ পর্যন্ত নব্বইয়ের উপর রান করে গেলেন।
সামি নিয়ে ধোনি যুক্তি দিতে পারেন, শেষ দিকে স্পিনাররা ভাল করছিলেন তাই আনা যায়নি। কিন্তু সেটাকে সমর্থন করেও প্রশ্ন তোলা যায়, বেইলি -ম্যাক্সওয়েল যখন বাইশ গজে খেলাটা ধরতে শুরু করেছিলেন, একশো রানের পার্টনারশিপের দিকে প্রবল ভাবে এগোচ্ছিলেন, তখন কি সামিকে আরও দু’টো ওভার দেওয়া যেত না? বাংলা পেসারকে দীর্ঘক্ষণ দূরে রেখে দেওয়া নিয়ে এক সময় দেখা গেল কমেন্ট্রি বক্সে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় পর্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেলেন।
ধোনির কপাল হয়তো সত্যিই চওড়া, না হলে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার হতাশায় প্রশ্নগুলো চাপা পড়ে যায়!

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.