|
|
|
|
মাহি মুগ্ধতায় ভারত ভুলেছে ইশান্ত-আতঙ্ক
প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত • রাঁচি |
সকাল দশটা বাজতে তখনও মিনিট দুয়েক দেরি। বিরাট কোহলিদের টিমবাস স্টেডিয়ামের সিংহদরজা পেরিয়ে ঢুকতে না ঢুকতেই একটা মিনি হাতাহাতি। বয়স কুড়ির এক ধোনি-পাগল স্টেডিয়ামে ঢুকতে যত বদ্ধপরিকর, নিরাপত্তা-কর্মীরা ঠিক ততটাই নাছোড় তাঁর পথ আটকাতে।
ঘণ্টাখানেক পরে যখন লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে ধোনি এবং তাঁর টিমের, তখন বাউন্ডারির বাইরে কচিকাঁচাদের ভিড়। বিরাট কোহলি বা যুবরাজ সিংহ নন, তাদের অটোগ্রাফের খাতা আর ক্যামেরার লেন্সের ফোকাসে ক্যাপ্টেন ইন্ডিয়া।
রাঁচির রাজপুত্র শহরে পা দেবেন আর এমনটা হবে না, হয় নাকি?
রবিবারই ঘরে ফিরেছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কিন্তু ঘরের মাঠে এ বার তাঁর প্রথম আবির্ভাব মঙ্গলবারই। আর মঙ্গলবার যে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি রাঁচি স্টেডিয়ামে ঢুকলেন, তাঁকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তাঁর টিম সিরিজে ১-২ পিছিয়ে। মাঠে নামার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চলে গেলেন পিচ পরিদর্শনে। মিনিট দশেক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাইশ গজ দেখার পর ধোনি-সহ গোটা টিমের ডাক পড়ল ‘কোচেস কর্নারে’। ডানকান ফ্লেচারের নির্দেশে তৈরি হাডলে ধোনি যতটা চনমনে, তার চেয়েও বেশি টগবগে দেখাল একটু পরে, টিম ধোনি বনাম টিম কোহলি ফুটবল ম্যাচে। শুধু ধোনি কেন, ‘মোহালি ম্যাসাকারের’ দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে উঠে গোটা টিমটাই যেন নতুন অক্সিজেন পেয়েছে।
অক্সিজেনের নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। মোহালিতে ইশান্ত শর্মার পারফরম্যান্স যদি কাঁটা হয়, তা হলে গোলাপ ফুল ধোনির ১৩৯ নট আউট। মঙ্গলবার সকালে টিম ইন্ডিয়ার হাডলের ‘মাথা’ যতই কোচ ফ্লেচার হন, টিমের জেন ওয়াই ক্রিকেটারদের আইকন এবং আইডল এই মুহূর্তে ওই এক জনই। যাঁর কথা উঠতে বিপক্ষ যোদ্ধা ফিল হিউজ খানিকটা আঁতকে উঠে বললেন, “এমএসডিই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।” যাঁর কাছে এ দিন একে একে ক্লাস করে গেলেন শিখর ধবন, বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাডেজারা। প্র্যাকটিস শেষে যাঁকে নিয়ে সুরেশ রায়না বলে গেলেন, “হমারা মাহি ভাই স্পেশ্যাল হ্যায়।” যাঁকে সামনে রেখে টিম ইন্ডিয়ার নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি দেখে একটা জিনিস পরিষ্কার— ধোনি-মডেলেই ধোনি-রাজ্যে কামব্যাক চায় ভারত। |
শপথ নেওয়ার পালা। মঙ্গলবার রাঁচিতে। ছবি: পিটিআই। |
আর এই একটা জায়গায় শহরের আর পাঁচ জন ধোনি-ভক্তের সঙ্গে যেন এক হয়ে গিয়েছেন কোহলি-অশ্বিনরা। ধোনির শহর চাইছে ঘরের ছেলের ব্যাটে একটা ‘দে ঘুমাকে’ ইনিংস। আর ধোনির টিম চাইছে তাঁকে পরশপাথর করে জয়ের রাস্তায় ফিরতে। বুধবারের ম্যাচে যে বজ্র-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির চোখরাঙানি যে আছে, সে সবে কারও খেয়ালই নেই! উল্টে চারদিকে মাহি-মুগ্ধতা। রায়না তো বলেই গেলেন, “মাহি ভাই এখন বিশ্ব-ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ফিনিশার। আমি নিজে তো বটেই, গোটা টিম ওর কাছ থেকে শিখছে। ফিনিশিংয়ে মাহি ভাই যে কাজটা করছে, আমাকে আর জাডেজাকেও এ বার সেই দায়িত্বটা নিতে হবে।” হেলিকপ্টার শট নিয়ে বলতে গিয়েও রায়নার গলায় বিস্ময়। “ওই শটটা একদম মাহি ভাইয়ের এক্সক্লুসিভ। হেলিকপ্টার শট ধোনিকেই মানায়। আর বলে রাখি, ওই শটটা কিন্তু খুব কঠিন। প্রচুর প্র্যাকটিস ছাড়া অসম্ভব।” বা কখনও ক্যাপ্টেনের মুখপাত্র হিসেবে সমর্থন করে গেলেন ইশান্তকে। জানিয়ে দিলেন, একটা দিন খারাপ গেলে ধোনির সংসারে কেউ ত্যাজ্যপুত্র হয়ে যায় না।
ধোনি নিয়ে আবেগ প্রচুর আছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দিনের শেষে তো ম্যাচটা জিততে হবে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে লেটার মার্কস পেয়ে। বুধবার রাঁচিতে ১-৩ হয়ে যাওয়া মানে সাত ম্যাচের সিরিজ থেকে কার্যত ছিটকে যাবে ভারত। রাঁচির মাঠে শেষ ওয়ান ডে ম্যাচে ভারতীয় বোলিংয়ের হিসেবটায় এক বার চোখ বুলিয়ে নিলে বাড়তি আত্মবিশ্বাস পেতেই পারেন ইশান্ত-অশ্বিনরা। এ বছরের জানুয়ারিতে সেই ম্যাচে দেড়শোর কাছাকাছি রানে ইংল্যান্ডকে শেষ করে দিয়েছিল ভারত। রাঁচির স্লো উইকেট মিচেল জনসনদের শর্ট বলের অস্ত্রটা ভোঁতা করে দিলে, রবিচন্দ্রন অশ্বিন পিচের টার্ন কাজে লাগাতে পারলে কিন্তু অ্যাডভান্টেজ ইন্ডিয়া। যে পিচে বুধবার বিনয় কুমারের জায়গায় টিমে ডাক পেতে পারেন জয়দেব উনাদকট বা সামি আহমেদ। এ দিন নেটে যাঁরা দু’জনেই টানা বল করে গেলেন।
আর ইশান্ত? ফুটবল ম্যাচে এ দিন টিম ধোনির গোলকিপার ইশান্ত প্রায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা গোল হজম করলেন। রাঁচির সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশ নিশ্চয়ই চাইবে, বুধবার যেন নতুন গোল না খেতে হয় তাঁকে!
|
পুরনো খবর: ‘ভুল’ শুধরোতে মাঠে একা ইশান্ত |
|
|
|
|
|