গয়ংগচ্ছ আর নয়, নবান্ন ঘুরে নির্দেশ মুখ্যসচিবের
রিকাঠামো অসম্পূর্ণ থাকায় নবান্নে প্রশাসনিক কাজকর্ম পুরোপুরি শুরু হয়নি বলে অভিযোগ উঠছিল। অভিযোগের সত্যাসত্য জানতে বৃহস্পতিবার দার্জিলিং থেকে ফিরে আচমকাই নবান্নের প্রতিটি তলা পরিদর্শন করলেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। নিজেই দেখলেন, সত্যিই অধিকাংশ দফতর এখনও পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি। অবিলম্বে ফাইলপত্র সাজিয়ে-গুছিয়ে জোর কদমে কাজ শুরু করে দেওয়ার জন্য বিভাগীয় সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
মুখ্যসচিব নবান্নে আসেন এ দিন সাড়ে ৯টা নাগাদ। লিফটের দিকে না গিয়ে সিঁড়ির রাস্তা ধরায় উপস্থিত পুলিশ ও সরকারি কর্মচারীরা অবাক হয়ে যান। সিঁড়ি দিয়ে উঠে একে একে প্রতিটি তলায় বিভিন্ন ঢুকে পড়েন মুখ্যসচিব। কর্মী-অফিসার এসেছেন কি না, ফাইলের বাক্স খোলা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে খোঁজ নেন। সংখ্যালঘু উন্নয়ন, বিপর্যয় মোকাবিলা, পূর্ত দফতরের একাংশ, স্বরাষ্ট্র দফতরের বড় অংশ এখনও পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। যে সব কর্মীরা দফতরে উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের কাছে সমস্যার কথা জানতে চান তিনি। অনেকেই তাঁকে নবান্নের বিস্বাদ জলের কথা বলেন। সঙ্গে সঙ্গে সঞ্জয়বাবু তাঁদের জিজ্ঞাসা করেন, আপনারা নিজে জল খেয়ে দেখেছেন? তাঁদের সামনে নিজেই সেখানকার জল খান মুখ্যসচিব। ১৪ তলা পরিদর্শনের সময় এ ভাবে কর্মীদের সামনে মোট তিন বার জল খেয়েছেন মুখ্যসচিব।
নবান্ন পরিদর্শন সেরে মুখ্যসচিব যান নিজের অফিসে। পরে রবীন্দ্র সদনে মান্না দে-র স্মরণে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেরিয়ে লিফট বিভ্রাটের মুখে পড়েন মুখ্যসচিব। তাঁর জন্য ১৩ তলায় লিফট দাঁড় করানো ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে কর্মরত এক আইপিএস অফিসার ওই লিফট ১৪ তলায় নিয়ে যান। মুখ্যসচিব এসে দেখেন লিফট নেই। বিরক্ত হয়ে তিনি সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করেন। সকালে হেঁটে ওঠার পর ফের বিকেলে ১৪ তলা থেকে হেঁটেই নামেন তিনি।
এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে এ দিন বিভাগীয় সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। সেই বৈঠকে তিনি বলেন, “নবান্নে যে সব দফতর এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি। তাদের অবিলম্বে তা শুরু করতে হবে। গয়ংগচ্ছ ভাব আর চলবে না।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “এখনও মহাকরণে রয়ে যাওয়া পুর, ভূমি দফতরের একাংশ, পূর্ত দফতরের একাংশ, শ্রম, উদ্বাস্তু পুর্নবাসন, শিল্প পুর্নগঠন, দমকল, অসামরিক প্রতিরক্ষা, তথ্য-সংস্কৃতির একাংশ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে নিজেদের জায়গা দেখে নিতে হবে।” দফতরগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আর মাস খানেকের মধ্যে মহাকরণ সংস্কারের কাজ শুরু হবে। তার আগেই দফতরগুলিকে সরে যেতে হবে।
সরকারি সূত্রের খবর, কিছু দফতরকে সরানোর জন্য রাজারহাটের ফিনান্সিয়াল হাবে ২০ হাজার বর্গফুট ও কারিগরি শিক্ষা দফতরের বাড়িতে ২০ হাজার বর্গফুট এবং বিকাশ ভবনে ১০ হাজার বর্গফুট জায়গা জোগাড় হতে পারে। কিন্তু মহাকরণে থাকা সমস্ত অফিস এই স্থানে সরানো সম্ভব নয়। এ নিয়ে অবশ্য আর মাথা ঘামাতে রাজি নয় রাজ্য প্রশাসন। এ দিনের বৈঠকেই মুখ্যসচিব বিভাগীয় সচিবদেরই নিজেদের দফতর সরানোর তদারক করতে বলেছেন। পূর্ত দফতর যে আর এ সবের দায়িত্ব নেবে না সে কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়।
নবান্নের অব্যবস্থা দূর করতে অবশ্য আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে পূর্ত দফতর। যার অন্যতম হল আরও ২টি লিফট বসানো। সাধারণের জন্য যেখানে ৩টি লিফট রয়েছে সেখানেই উত্তর দিকের আট্রিয়ামে আরও ২টি লিফট বসবে। প্রতিটি লিফটে ১৬ জন করে ওঠা-নামা করতে পারবেন। এ ছাড়া প্রতিটি তলায় দুই থেকে চারটি করে জল পরিশোধন যন্ত্র বসানো হচ্ছে। দু-তিন দিনের মধ্যেই তা লাগিয়ে দেওয়া হবে বলে পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ভাবে একটি জল পরিশোধন ব্যবস্থা হবে। লিফটে ওঠার লাইন অবশ্য ইদানীং কিছুটা কমেছে। তবে এখনও নিজের দফতরে যেতে লিফটের জন্য গড়ে ১৫-২০ মিনিট দাঁড়াতে হচ্ছে। কেন এত লাইন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে গত কয়েক দিন ধরে আসা-যাওয়ার সময়ের ভিডিও রেকর্ডিং করছে পূর্ত দফতর। এক কর্তা জানাচ্ছেন, দেখা যাচ্ছে, সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সমস্ত লিফটই ফাঁকা। ভিড় শুরু হচ্ছে পৌনে ১১টা থেকে। তার পর ১২টা পর্যন্ত তা থাকছে। সরকারি কর্মীদের সোয়া ১০টার মধ্যে অফিসে আসার কথা। কিন্তু সে সময় কোনও লিফটেই লাইন পড়ে না বলে জানিয়েছেন কর্তারা। পাশাপাশি, অফিস ঢোকার সময় লিফটে লাইন থাকলেও অফিস ছেড়ে যাওয়ার সময় কখনওই লাইন হচ্ছে না। ভিডিও রেকর্ডিং থেকে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ কর্মীই নামমাত্র সময় অফিসে থেকেই চলে যাচ্ছেন। অফিস ছুটির সময়ে অর্থাৎ বিকেল ৫টা নাগাদ কোনও লিফটেই ভিড় নেই। তবে নবান্নে কর্মীদের আসা-যাওয়ার ব্যাপারে সরকার এখনই কড়া মনোভাব নেবে না বলেই অঙ্গিত মিলেছে।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.